‘বিদেশি ফুটবলার না থাকলে কে খেলা দেখতে আসবে?’
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) প্রফেশনাল লিগ কমিটির সর্বশেষ সভায় প্রিমিয়ার লিগের বেশিরভাগ ক্লাবের প্রস্তাব ছিল আসন্ন মৌসুম যাতে বিদেশি খেলোয়াড়ছাড়াই আয়োজন করা হয়। করোনাভাইরাসের কারণে ক্লাবগুলোর আর্থিক সংকটের কথা উল্লেখ করে ক্লাবগুলো এ মতামত দিয়েছে।
তবে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বাফুফের প্রফেশনাল লিগ কমিটি ক্লাবগুলোর কাছ থেকে লিখিত মতামত নেবে। সে মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত হবে আগামী মৌসুমে বিদেশি খেলোয়াড় রেজিস্ট্রেশন করা যাবে কিনা। আর করা গেলে তা কতজন।
বিদেশি খেলোয়াড় বাদ কিংবা কোটা কমানো নিয়ে ক্লাবগুলোর মধ্যেই মতভেদ আছে। কোনো কোনো ক্লাব প্রস্তাব দিয়েছে আগের মতোই বিদেশি রাখতে। বেশিরভাগ ক্লাব চেয়েছে বিদেশি বাদে লিগ। আবার কিছু ক্লাবের বিদেশি থাক বা না থাক তাতে সমস্যা নেই।
বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে বিদেশিদের প্রধান্য বহু বছর ধরে। ১৯৭৪ সালে প্রথম বিদেশি দেখা যায় বাংলাদেশের ফুটবলে। পরের দুই মৌসুম বিদেশি কোটা ছিল না। ১৯৭৭ সাল থেকে টানা ১১ বছর বিদেশি থাকার পর ১৯৯০-৯১ ও ১৯৯১-৯২ মৌসুমে বিদেশিশূন্য ছিল। এর পর গত ২৮ বছরে কখনোই বিদেশি ছাড়া হয়নি বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবল। কোটা কখনো বেড়েছে এবং কখনো কমেছে এই যা।
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশের ফুটবলাররা বাংলাদেশের দর্শকদের মন জয় করেছেন। প্রতি মৌসুমেই কিছু ফুটবলার আসেন যারা দর্শক টানেন। যদি বিদেশি কোটা বাদ দেয়া হয় তাহলে ফুটবলের যে আকর্ষণটুকু আছে তাও থাকবে না বলে মনে করছেন অনেকে।
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিগত দুই মৌসুমে কলিন্দ্রেসই ছিলেন বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলের প্রধান আকর্ষণ। বসুন্ধরা কিংস কলিন্দ্রেসকে বিদায় দিলেও ব্রাজিল থেকে দুইজন খেলোয়াড় আনার জন্য চুক্তি করেছে। মেসির সতীর্থ বার্কোস তো এএফসি কাপে এক ম্যাচ খেলেই নিজের জাত চিনিয়েছেন। ঘরোয়া ফুটবলেও তার ঝলক দেখার অপেক্ষায় যখন ফুটবলামোদীরা তখন বিদেশি অনিশ্চিতের আওয়াজ।
বিদেশি খেলোয়াড় ছাড়া লিগ- এটা ভাবতেও পারছেন না সাবেক তারকা ফুটবলার কায়সার হামিদ। দীর্ঘদিন ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ফুটবলে মাঠ কাঁপানো এই ডিফেন্ডার মনে করেন বিদেশি ছাড়া লিগ আয়োজনের চিন্তা সঠিক নয়। তাতে লিগের আকর্ষণ বলে কিছু থাকবে না।
‘এখন তো স্থানীয় কোনো স্টার নেই। বিদেশি ভালো খেলোয়াড় থাকলে মানুষ খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে আসে। বিদেশি না থাকলে কে খেলা দেখতে আসবে? গত মৌসুমে বিশ্বকাপ খেলা ফুটবলার নিয়ে এসেছিল বসুন্ধরা কিংস। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের এক ফুটবলারও এনেছে এএফসি কাপের জন্য। এরা মাঠে থাকলে দর্শক আসবে। অল্প যে দর্শক আসছে বিদেশি না থাকলে তারাও আসবে না’- বলছিলেন জাতীয় দলেনর সাবেক এ অধিনায়ক।
নিজের সময়কার কথা উল্লেখ করে কায়সার হামিদ বলেন,‘আমাদের সময় বিদেশি খুব উঁচুমানের ফুটবলার আসতো। আমরাতো তাদের ঠেকিয়েছি। আসলে ভালো মানের বিদেশি আসলে তাদের কাছ থেকে কিছু শেখা যায়। সবচেয়ে বড় কথা বিদেশি ফুটবলার না থাকলে ম্যাড়ম্যাড়ে ফুটবল হবে, কোনো আকর্ষণ থাকবে না।’
কায়সার হামিদ বলেন, ‘এখনকার জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের সবাই চিনেন না। আমি নিজেও চিনি না। তাই বিদেশিদের কারণে কিছু দর্শক হয়। তাছাড়া ২০২০ সালে এসে বিদেশি ছাড়া খেলার ক্লাবগুলোর প্রস্তাব বুদ্ধিমত্তার পরিচয় নয়। প্রয়োজনে কোটা কমানো যেতে পারে। ধরুণ, ৩ জন রেজিস্ট্রেশন, মাঠে দুইজন। একদম বিদেশীশূন্য করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’
প্রফেশনাল লিগ কমিটির পরের সভায় বিদেশি খেলোয়াড়ের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। তবে ১৩ ক্লাবের বেশিরভাগ যদি লিখিতভাবে বিদেশি ছাড়া লিগ চায় তাহলে বাফুফের তেমন কিছু করার থাকবে না। কারণ, ক্লাবগুলোর চাওয়ার ওপর ভিত্তি কতরেইতো বাইলজ চূড়ান্ত করবে লিগ কমিটি। তাছাড়া বাফুফে সব সময়ই ক্লাবগুলোর চাওয়াকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সামনে আবার ভোট। ক্লাবের চাওয়ার বিরুদ্ধে বাফুফের অবস্থান নেয়ার সম্ভাবনা তাই কম।
আরআই/আইএইচএস/পিআর