সেই স্বপ্ন আজও দেখেন কুয়েতকে হারানোর অন্যতম নায়ক রাসেল
বিকেএসপির সহপাঠী আমিনুর রহমান সজিব জাতীয় দলে খেলেছেন। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সতীর্থ সোহেল রানা, তপু বর্মন, ইয়াসিন খান, রুবেল মিয়া, আতিকুর রহমান ফাহাদরা এখনও দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। জাতীয় দলের লাল-সবুজ জার্সিটা শুধু সহপাঠী আর সতীর্থদের গায়েই দেখে আসছেন, কখনও নিজের পরার সৌভাগ্য হয়নি তার। এমনকি জাতীয় দলের প্রাথমিক তালিকায়ও কখনও নাম ওঠেনি। জাতীয় দলের কোচের নজর কাড়তে না পারা ফুটবলার হলেন টাঙ্গাইলের নাজমুল ইসলাম রাসেল।
ঘরোয়া ফুটবল নিয়ে যারা ঘাটাঘাটি করেন নামটি তাদের কাছে পরিচিত। কারণ নাজমুল ইসলাম রাসেল ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে নিয়মিত খেলছেন। ফেনীর সকার ক্লাবের জার্সিতে সর্বোচ্চ লিগে অভিষেকের আগে ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে খেলেছেন বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ।
সকার ক্লাব থেকে শুরু করে প্রিমিয়ার লিগে ফরাশগঞ্জ, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র, চট্টগ্রাম আবাহনী হয়ে সবশেষ খেলেছেন পুলিশ ফুটবল ক্লাবে। ২৪ বছর বয়সী এ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের নেতৃত্বে পুুলিশ দল ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনাল পর্যন্ত উঠেছিল। নবাগত দলটিকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠা বসুন্ধরা কিংস হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন।
বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) ২০০৭ সালে ভর্তি হয়ে বের হয়েছেন ২০১১ সালে। ঐ বছরই ঢাকায় অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাই পর্বের দলে সুযোগ পান। ঘরের মাঠের ঐ আসরটা ভালো কাটেনি বাংলাদেশের। মালদ্বীপের বিরুদ্ধে ৩-০ গোলের জয় দিয়ে মিশন শুরু করলেও, পরের তিন ম্যাচে ইরাকের কাছে ৬-০, সৌদি আরবের কাছে ৪-০ এবং ওমানের কাছে ১-০ ব্যবধানে হেরে বিদায় নিয়েছিল স্বাগতিক যুবারা।
পনের বছর বয়সে ২০১১ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে অভিষেক হয়েছিল। দুই বছর পর ২০১৩ সালে ইরাকে অনুষ্ঠিত বাছাই পর্বেও জায়গা করে নিয়েছিলেন টাঙ্গাইলের রাসেল। মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে তারা হারিয়ে এসেছিলেন ঐ অঞ্চলেরই আরেক দেশ কুয়েতকে। রুবেল মিয়ার দেয়া গোলের বলটি জোগান দিয়েছিলেন মিডফিন্ডার রাসেলই।
ইরাকের ইরবাইল শহরের ফ্রান্সো হারিরি স্টেডিয়ামে কুয়েতকে হারিয়ে বিশ্বজয়ের মতো আনন্দ করেছিল বাংলাদেশের যুবারা। কারণ প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক ইরাকের কাছে ঢাকার মতো ৬-০ গোলে হারের পর আরেকটি বড় পরাজয়ের শঙ্কায় ছিল বাংলাদেশ। পরের ম্যাচেই কুয়েতের বিরেুদ্ধে জয়টি ছিল দারুণ অর্জন।
সহপাাঠী, যুব দল আর ক্লাব সতীর্থদের জাতীয় দলে খেলা বছরের পর বছর ধরে দেখে আসছেন। ৭টি প্রিমিয়ার লিগ খেলাও হয়ে গেছে। প্রতিবছরই দল পাল্টিয়েছেন। তবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে দল গড়া কোনো ক্লাবে খেলেননি। কখনও জাতীয় দলের প্রাথমিক ক্যাম্পেও ডাক পাননি। নিজেকে হতাশ বা ব্যর্থ মনে হয়েছে?
‘কখনো নও। কারণ আমি নিজের পজিশনে সবসময় ভালো খেলার চেষ্টা করি। বড় ক্লাবে নাম লেখানোর সুযোগ যে আসেনি তাও না। আসলে বড় ক্লাবে গিয়ে বেঞ্চ গরম করার চেয়ে ছোট বা মাঝারি ক্লাবে খেলার সুযোগ পাওয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একবার অনূর্ধ্ব-২৩ প্রাথমিক দলে ছিলাম। অনুশীলনের সময় চোট পেয়ে বাদ পড়ে যাই। এরপর আর কখনও ডাক পাইনি’- বলছিলেন টাঙ্গাইলের গোপালপুরের যুবক রাসেল।
জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখা কি ছেড়ে দিয়েছেন? পরপর দুই আসরে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলে যে স্বপ্ন আপনার মধ্যে তৈরি হয়েছিল। রাসেলের জবাব, ‘না। আজও আমি জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখি। নিজের পারফরম্যান্সে কখনও হতাশও হইনি। এবার অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছিলাম পুলিশ দলের। ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনাল খেলেছি। আসলে কখনও জাতীয় দলের কোচের চোখে পড়িনি সেটা আমার দুর্ভাগ্য। তবে সময় শেষ হয়ে যায়নি। যুবদলের হয়ে লাল-সবুজ জার্সি পরেছি। দেশকে বিজয়ী করে বিদেশের মাটিতে আনন্দ-উল্লাস করেছি। জাতীয় দলের লাল-সবুজ জার্সি গায়ে জড়ানো এখনও আমার স্বপ্ন। হাল ছাড়িনি, স্বপ্ন দেখাও বাদ দেইনি।’
রাসেলরা দুই ভাই। ছোট ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তার এক ফুফাতো ভাই ফুটবল খেলতেন জেলা পর্যায়ে। মামা ছিলেন একটি স্কুলের গেম টিচার। তাদের উৎসাহে বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার পর থেকে রাসেল এখনও যে স্বপ্ন দেখে যাচ্ছেন, তা কি পূরণ হবে? নাকি স্বপ্নই থেকে যাবে? উত্তর দেবে ভবিষ্যত। হয়তো নিকট ভবিষ্যত।
আরআই/এসএএস/জেআইএম