‘ফুটবলারদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকার সুযোগ নেই’

রফিকুল ইসলাম
রফিকুল ইসলাম রফিকুল ইসলাম , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৮:২৩ পিএম, ১৮ মে ২০২০

ঘরোয়া ফুটবলের ২০১৯-২০ মৌসুম পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে একদিন আগে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো লিগ খেলতে না চাওয়ায় রোববার জরুরি সভায় বসে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।

কোন ঘোষণা না আসলেও আগস্টের শেষ সপ্তাহে দলবদলের মধ্যে দিয়ে নতুন মৌসুম শুরুর কথা ভাবছে বাফুফে। তাও নির্ভর করছে করোনাভাইরাস কবে শেষ হবে এবং করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি কি হবে তার ওপর।

মৌসুম পরিত্যক্ত করার সিদ্ধান্তে ক্লাবগুলো খুশি। বিশেষ করে আর্থিক টানাপড়েনে থাকা ক্লাবগুলো। তবে এ সিদ্ধান্তে পুরোপুরি হতাশ ফুটবলাররা। ৬ মাস বাকি থাকতেই শেষ হয়ে গেলো মৌসুম। এখন ফুটবলারদের কি হবে? তারা কি মুক্ত হয়ে গেলেন? নাকি পুরনো ক্লাবেই আছেন?

ক্লাবগুলোর কাছে ফুটবলাদের পাওনা, চুক্তির বিষয় নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি বাফুফে। ফুটবলাররা তাই মনে করছেন, তাদের সামনে অন্ধকার। তারা অর্থনৈতিক সংকটে পড়বেন। খেলা না হলে ঝুঁকিতে পড়বে তাদের ক্যারিয়ার। বাফুফে কেন এ বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করলো না, কেন ফুটবলারদের নিয়ে কোনো গাইডলাইন থাকলো না? এ সব বিষয় নিয়ে জাগো নিউজের মুখোমুখি হয়েছিলেন বাফুফের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু নাইম সোহাগ।

জাগো নিউজ : সবার ধারণা ছিল ক্লাবগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে শুধু প্রিমিয়ার লিগের ইতিটানা হবে; কিন্তু আপনারা পুরো মৌসুমই পরিত্যক্ত ঘোষণা করলেন। এখন ফুটবলারদের ভবিষ্যত কি হবে? তারা তো কোনো গাইডলাইন পেলেন না।

আবু নাইম সোহাগ: রোববারের সভায় বিষয়টি যে ওঠেনি তা নয়; কিন্তু এ সভায় দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেটা হয়তো কার্যকর হতো না। বাফুফের বক্তব্য হলো, এ বিষয়টি নিয়ে ক্লাব ও ফুটবলারদের ভালো একটা সাজেশন দিতে হবে। যে কারণে, তাদের দুই পক্ষের মতামতও লাগবে। আমরা যে উদ্যোগই নেই না কেন, সেটা যেন কার্যকর হয়।

জাগো নিউজ : অনেকে বলছেন, মৌসুম পরিত্যক্ত ঘোষণা করে বাফুফে অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে। আরো অপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারতো। নেয়া যেত কি?

আবু নাইম সোহাগ: দেখুন, প্রিমিয়ার লিগের ১৩ ক্লাবের মধ্যে ১০টিই লিগ আর খেলতে চায়নি। এগুলোর তো লিখিত প্রমাণাদি আছে। ৮০ ভাগ ক্লাবের মতামতকে গুরুত্ব দিতেই হবে। আবার যে ক্লাবগুলো প্রথমে লিগ বাতিল করতে বলেনি তারাও পরে সায় দিয়েছে অন্যদের সাথে। এ সিদ্ধান্তটা বাফুফে কিন্তু চাপিয়ে দেয়নি।

জাগো নিউজ : ফুটবলারদের নিয়ে কি ধরনের উদ্যোগ আপনারা নিতে পারেন যাতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়?

আবু নাইম সোহাগ: আমাদের এমন উদ্যোগ হবে যাতে ক্লাব-ফুটবলার উভয়ই উপকৃত হয়। কোনো পক্ষে ক্ষতিই আমরা চাইবো না। ফুটবল এমন পরিস্থিতিতে কখনো পড়েনি। এ নিয়ে আমাদের ফিফা-এএফসির পরামর্শও নিতে হবে। আমরা ফুটবলারদের বিষয়টি আমলে নিয়েছি। স্বল্প আলোচনায় এটার কার্যকর কিছু সম্ভব নয় বলে রোববারের জরুরি সভায় বিষয়টি উঠলেও পরে আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঈদের পরই আমরা এ বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করবো। নতুন মৌসুম তো আগস্টের আগে শুরু হবে না। তার আগেই আমরা খেলোয়াড়দের বিষয়টির গ্রহণযোগ্য সমাধান দেবো।

জাগো নিউজ : বলছিলেন ক্লাব-ফুটবলার সবার সাথে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবেন। এত ফুটবলারের সঙ্গে আলোচনা কীভাবে করবেন?

আবু নাইম সোহাগ: বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ১৩ ক্লাবের খেলোয়াড়দের প্রতিনিধি হিসেবে প্রতি ক্লাব থেকে দুই বা তিনজনকে ডাকবো। তাদের কাছে সব শুনবো, মতামত নেবো। তারপর ক্লাবের সঙ্গে বসবো। তাদের কথা শুনবো। সবকিছু মিলিয়ে আমরা দুইকূল রক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেবো।

জাগো নিউজ : কিছু ক্লাব আছে যারা খেলোয়াড়দের টোকেনমানি দিয়েছে মাত্র। কিছু ক্লাব দিয়েছে ২০ ভাগ অগ্রিম। তারা তো মনে করতে পারে মৌসুম পরিত্যক্ত, এখন আর কি হবে? নতুন মৌসুমের কথা ভাবি। এ সমাধান কীভাবে দেবেন?

আবু নাইম সোহাগ: মৌসুম শেষ হয়েছে বলে এ মৌসুমের হিসেব শেষ হয়েছে তা কিন্তু নয়; কোন ফুটবলারের সঙ্গে কি চুক্তি ছিল, কয় মাসের চুক্তি ছিল কতটাকা অগ্রিম নিয়েছেন, কত টাকা পাবেন সবই দেখা হবে। তারপর একটা বাস্তবসমম্মত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ফুটবলাররা নিশ্চয়ই চুক্তির পুরো টাকা চাইবেন না। আবার ক্লাবগুলোও চাইলে মৌসুম শেষ হয়েছে বলে ঘুমিয়ে থাকতে পারবে না। ফুটবলারদের ভবিষ্যত নিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকার কোনো সুযোগ নেই।

জাগো নিউজ : শোনা যায় অনেক ফুটবলার তো চুক্তির ৮০-৯০ ভাগ টাকা অগ্রিম নিয়েছেন। তাদেরটা কি হবে?

আবু নাইম সোহাগ: সবকিছুই আসবে হিসেবে। মৌসুমের কতভাগ গেলো, কতভাগ বাকি ছিল। সব দেখে দেনা-পাওনার হিসেবটা করতে হবে। দুই পক্ষকেই ছাড় দিতে হবে। আমরা কোনো পক্ষকে ক্ষতিগ্রস্থ না করেই সিদ্ধান্ত নেবো।

জাগো নিউজ : কোনো ক্লাব যদি ফুটবলারদের পাওনা দিতে না চায়? তাহলে কি হবে?

আবু নাইম সোহাগ: আগেই বলেছি, বাফুফে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সবার মতামত নেবে। সেই মতামতের ভিত্তিতে যে সিদ্ধান্ত আসবে সেটা মানতে হবে ক্লাব ও ফুটবলারদের। কোনো ক্লাব টাকা দিতে না চাইলে বাফুফের কাছে তাদের পাওনা থেকে সেটা সমন্বয় করা হবে। আমাদের সমঝোতামূলক একটা সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। ক্লাব খেলোয়াড়দের ক্ষতিগ্রস্থ করে তো ফুটবলের উন্নয়ন সম্ভব নয়।

জাগো নিউজ : অনেক সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আবু নাইম সোহাগ: জাগো নিউজ এবং আপনাকেও ধন্যবাদ।

আরআই/আইএইচএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।