ফুটবলার আজমল হোসেন যেভাবে ‘বিদু’ থেকে ‘বিদ্যুৎ’
আজমল হোসেন বিদ্যুৎ বাংলাদেশের ফুটবলে বেশ পরিচিত মুখ। বিদ্যুৎ হিসেবেই বেশি পরিচিতি তার। টানা ২৫ বছর ঢাকার ফুটবলে খেলে এখন বেছে নিয়েছেন কোচিং পেশাকে। যে নামে ফুটবল অঙ্গনে সবাই চেনেন তাকে সেই ‘বিদ্যুৎ’ নামটা তার মাঠ থেকে পাওয়া। যে নামের আড়ালে হারিয়ে গেছে তার তার বাবা-মায়ের আদরে ডাকা ‘বিদু’ নামটি।
নারায়নগঞ্জে এক সময়ে বেশ জনপ্রিয় ছিল ‘মাপের ফুটল’। বয়স ১০ বছর কি ৪০ বছর তাতে কোনো সমস্যা নেই। ৪ ফুট ১০ ইঞ্চি হলেই হতো। আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নুসহ নারায়নগঞ্জের প্রায় সব ফুটবলারদেরই এই মাপের টুর্নামেন্ট খেলার অভিজ্ঞতা আছে। আজমল হোসেন বিদ্যুৎ বেশ ওস্তাদ ছিলেন এই ৪ ফুট ১০ ইঞ্চির টুর্নামেন্টে।
নারায়নগঞ্জে আরেক বিখ্যাত বিদ্যুৎ ছিলেন। তার নাম মোসলেহ উদ্দিন খন্দকার বিদ্যুৎ। তার পরিচিতি ছিল বিদ্যুৎ চাচা হিসেবে। নারায়নগঞ্জের অনেক তারকা ফুটবলার তৈরি এই বিদ্যুৎ চাচার হাতে। ২০১৭ সালে ইন্তেকাল করা তৃণমূলের এই কোচের কাছে ফুটবলের হাতেখড়ি হয়েছিল আজমল হোসেন বিদ্যুতের। ‘বিদু’ থেকে আজমল হোসেন ‘বিদ্যুৎ’ হয়েছিলেন ‘বিদ্যুৎ চাচা’র কারণে।
কিভাবে? মাপের ফুটবলে প্রতি ম্যাচে ৮-১০টি করে গোল করা আজমল হোসেন বিদ্যুৎ স্মৃতির পাতা উল্টে বর্ণনা করলেন তার বাবা-মায়ের রাখা বিদু নামটি বিলুপ্ত হওয়ার কাহিনী, ‘যখন প্রথম বিদ্যুৎ চাচার কাছে ফুটবল খেলা শিখতে যাই তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন নাম কি? বললাম বিদু, আজমল হোসেন বিদু। কিন্তু ট্রেনিংয়ের সময় তিনি আমাকে বিদ্যুৎ নামে ডাকতে শুরু করলেন। অনেকে বললেন ওস্তাদ ওর নাম কিন্তু বিদু, বিদ্যুৎ নয়। কোচ তখন বলতেন, দেখছো ও বিদ্যুতের মতো দৌড়ায় মাঠে। ওর নাম বিদ্যুৎ। সে আমার মিতা। এভাবেই আমি বাবা-মায়ের রাখা আজমল হোসেন বিদুর পরিবর্তে হয়ে গেলাম আজমল হোসেন বিদ্যুৎ।’
আজমল হোসেন বিদ্যুৎ মাঝমাঠে বিদ্যুতের মতোই দৌড়াতেন। জাতীয় দলে খেলেছেন, অলিম্পিক দলে খেলেছেন। জাতীয় বয়সভিত্তিক দলের জার্সিও গায়ে চড়িয়েছেন নারায়নগঞ্জের এ ফুটবলার। মাঝমাঠের কূশলী ফুটবলার হিসেবে ঘরোয়া ফুটবলে খেলেছেন আবাহনীসহ বিভিন্ন ক্লাবের জার্সিতে। দূরপাল্লার গোল করেও নজর কেড়েছেন সবার।
১৯৯২-৯৩ মৌসুমে পাইওনিয়ার লিগের ক্লাব মাতুয়াইল উদয়ন সংঘের জার্সিতে ঢাকার ফুটবলে অভিষেক হয়েছিল বিদ্যুতের। ১৯৯৬ সালে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘে নাম লিখিয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন লিগ শুরু তার। এরপর ফরাশগঞ্জ, আবাহনী, আরামবাগ, মুক্তিযোদ্ধায় খেলেছেন।
২০০৭ সালে প্রফেশনাল ফুটবল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ চালু হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধায় খেলেছেন। ২০১৬ সালে ফেনী সকার ক্লাবের হয়ে শেষবারের মতো প্রিমিয়ার লিগ খেলেছেন। ২০১৭ সালে প্রথম বিভাগের দল স্বাধীনতা ক্রীড়া চক্রে কোচ কাম খেলোয়াড় হিসেবে ছিলেন। এরপর কোচিং-এ ‘বি’ লাইসেন্স করেছেন। প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সহকারী কোচ হিসেবে আছেন সাবেক এ মিডফিল্ডার।
আজমল হোসেন বিদ্যুৎ ১৯৯৬ সালে এশিয়ান অনূর্ধ্ব-১৬ কোয়ালিফাইংয়ের দলে সুযোগ পেয়ে দারুণ পারফরম্যান্স করেছিলেন। ওই টুর্নামেন্ট খেলেই নজরে পড়েছিলেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের কর্মকর্তাদের নজর। ২০০৬ সালের জার্মানী বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডের জন্য ২০০৪ সালে তিনি জাতীয় দলেও খেলেছেন।
‘খেলা ছেড়ে এখন আমি কোচিং পেশাকে বেছে নিয়েছি। নিজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে ফুটবল উন্নয়নে কাজ করার ইচ্ছা আমার। সবার কাছে দোয়া চাই’- বলছিলেন আজমল হোসেন বিদ্যুৎ।
আরআই/আইএইচএস/