নিজের ছেলেকে জীবনের কঠিন শিক্ষাটি দিলেন রোনালদো
বর্তমান সময়ে বিশ্বের অন্যতম ধনী ক্রীড়াবিদদের একজন ইতালিয়ান ক্লাব জুভেন্টাসের পর্তুগিজ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। শুধু ধনসম্পদেই নয়, জনপ্রিয়তার দিক থেকেও অন্যতম সেরা এ ফুটবলার। কিন্তু তার জীবনের শুরুটা মোটেও এত সহজ ও সুন্দর ছিলো না। অনেক সংগ্রাম করেই নিজেকে বর্তমান অবস্থায় এনেছেন রোনালদো।
তাই নিজের ছেলে ক্রিশ্চিয়ানো জুনিয়রকে জীবনের এ শিক্ষাটি মনে করিয়ে দিয়েছেন রোনালদো। বর্তমানে অর্থের প্রাচুর্য এবং বিলাসবহুল জীবনযাপনে নিজেদের শুরুর কথা যেনো ভুলে না যায় জুনিয়র, সে ব্যবস্থাই করেছেন তার বাবা।
পর্তুগালের মাদেইরা আইল্যান্ডে খুবই দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন রোনালদো। পরিবারের অবস্থা এতোটাই খারাপ ছিলো যে, গর্ভে থাকতেই সন্তান মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন রোনালদোর বাবা। তবে মায়ের বাধায় তখন পৃথিবীর মুখ দেখেন রোনালদো। পরে মাত্র ১২ বছর বয়সে নিজের জীবনের লক্ষ্যপূরণে বেরিয়ে যান তিনি। মাদেইরা ছেড়ে চলে যান লিসবনে।
প্রায় দুই যুগ পর রোনালদোর এখন অর্থকড়ি, বাড়ি-গাড়ি সবই আছে, কিন্তু তাই বলে ভুলে যাননি নিজের অতীতকে। এমনকি ভুলতে দেবেন না নিজের ছেলে ক্রিশ্চিয়ানো জুনিয়রকেও। তাই নিজের ছোটোবেলার বন্ধু মিগুয়েল পাইজাওকে সঙ্গে নিয়ে তিনি হাজির হন লিসবনে, যেখানে তিনি শুরু করেছিলেন নিজের ফুটবল ক্যারিয়ার।
রোনালদোর শুরুর দিকের ক্লাবের অবস্থা দেখে তাজ্জব বনে যায় তার ছেলে ক্রিশ্চিয়ানো জুনিয়র। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে রোনালদো আসলেই এখানে থাকতেন কি-না। পর্তুগিজ টিভি চ্যানেল টিভিআইকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের ছেলেকে জীবনের এ শিক্ষাটি দেয়ার কথা নিজেই জানিয়েছেন রোনালদো।
তিনি বলেন, ‘আমি যেখানে বড় হয়েছি, সে জায়গাটি ওকে (ক্রিশ্চিয়ানো জুনিয়র) দেখানোর জন্য খুবই উত্তেজিত ছিলাম। সে মাদেইরা সম্পর্কে আগেই শুনেছিল। সে আমার সঙ্গে গেলো এবং সেখানে এখনও অনেক মানুষ আছে যারা তখনও আমার সঙ্গে ছিলো। এটা আমাকে নাড়া দেয়। কারণ আমি ভাবিনি তাদের সেখানে দেখতে পাবো। এতে আমি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি।’
এরপর ক্রিশ্চিয়ানো জুনিয়রকে নিয়ে নিজের থাকার স্থানে যান রোনালদো। তার ভাষ্যে, ‘পাইজাওকে সঙ্গে নিয়ে আমি সেই ঘরে ঢুকলাম, যেখানে আমরা একসঙ্গে থাকতাম। এ ঘর দেখে জুনিয়র ঘুরে জিজ্ঞেস করলো, ‘বাবা, তুমি এখানে থাকতে?’ তার যেনো এটা বিশ্বাসই হচ্ছিলো না।’
তখনই গভীর জীবনবোধের কথা বলেন রোনালদো, ‘ওরা মনে করে পৃথিবীর সবই হয়তো সহজ। জীবনযাত্রার মান, ঘরবাড়ি, জামাকাপড়, গাড়ি- এগুলো হয়তো তাদের কাছে এমনিই চলে এসেছে। আমি আমার ছেলেকে এটিই বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে কোনো কিছুই সহজ নয়। এমনকি আমি স্কুলের কোনো অনুষ্ঠানে গেলেও বাচ্চাদের এ জিনিসটাই বলি। আমি বোঝানোর চেষ্টা করি যে শুধু প্রতিভা থাকলেই হবে না। আত্মনিবেদন এবং কঠোর পরিশ্রম থাকলেই কেবল সবকিছু পাওয়া সম্ভব।’
এসএএস/এমকেএইচ