বিশ্বকাপ খেলা কলিন্দ্রেসের প্রিয় শব্দ ‘আসসালামু আলাইকুম’

রফিকুল ইসলাম
রফিকুল ইসলাম রফিকুল ইসলাম , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৯:৩১ পিএম, ২৭ জুলাই ২০১৯

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে অভিষেকেই বসুন্ধরা কিংসের শিরোপা জয়ের প্রধান কারিগর রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলা কোস্টারিকান ফরোয়ার্ড ডেনিয়েল কলিন্দ্রেস। ৯ গোল করেছেন, করিয়েছেন বিশটির মতো।

বসুন্ধরা কিংসেরই নয়, এক কথায় এবারের লিগেরই সেরা পারফরমার এই কোস্টারিকান। মৌসুমের তিনটি ট্রফির দুটিই পেয়েছে বসুন্ধরা কিংস, একটিতে রানার্সআপ। এসব অর্জনের ক্লাবটির মূল ভূমিকায় ছিলেন ৩৪ বছর বয়সী এ ফুটবলার।

বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে তার আলো ছড়ানোর খবর কেবল লাল-সবুজের দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। এ অঞ্চলের অনেক দেশের ক্লাব কর্মকর্তাদের নজরেও পড়েছিলেন তিনি। প্রস্তাব পেয়েছিলেন ভারত ও থাইল্যান্ডের ঘরোয়া ফুটবলে খেলারও।

কিন্তু সব প্রস্তাব উপেক্ষা করে কলিন্দ্রেস থেকে গেছেন বাংলাদেশের ফুটবলের নতুন পরাশক্তি বসুন্ধরা কিংসেই। ইতিমধ্যেই তিনি ক্লাবটির সঙ্গে পরের মৌসুমের চুক্তি সম্পন্ন করেছেন।

আজ (শনিবার) বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসানের কার্যালয়ে দীর্ঘ সাক্ষাতকারে নিজের বাংলাদেশে আসা, খেলা, এখানকার পরিবেশ এবং পরের মৌসুমের জন্য থেকে যাওয়ার গল্পগুলো শুনিয়েছেন রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলা এ তারকা ফুটবলার।

কলিন্দ্রেসের দীর্ঘ সাক্ষাতের সারাংশ জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

প্রশ্ন : বাংলাদেশে কেমন কাটছে আপনার দিন। কতটা উপভোগ করছেন?
কলিন্দ্রেস : আমি অনেক উপভোগ করছি। কারণ বাংলাদেশ খুব ভালো দেশ। আমাদের দেশের মতোই প্রায়। এখানকার আবহাওয়া আমাদের মতোই।

প্রশ্ন : মাঠে কেমন উপভোগ করলেন?
কলিন্দ্রেস : আমি বেশি উপভোগ করেছি আমাদের হোম গ্রাউন্ড নীলফামারীর শেখ কামাল স্টেডিয়ামে খেলা। কারণ, এখানে ভালো খেলা সম্ভব। কিন্তু কিছু ভেন্যু ছিল যেমন নোয়াখালী সেখানে খেলা উপভোগ করতে পারিনি। কারণ এমন ভেন্যুতে ফুটবল খেলা যায় না। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম ও সিলেট স্টেডিয়ামের মাঠও ভালো।

প্রশ্ন : বসুন্ধরা কিংসকে চ্যাম্পিয়ন করতে বড় ভূমিকা ছিল আপনার। অনুভূতি কেমন আপনার?
কলিন্দ্রেস : আমি গর্ববোধ করছি। কারণ, দলের এই সাফল্যে ভূমিকা রাখতে পেরেছি। সকলের পরিশ্রমেই এ অর্জন হয়েছে।

প্রশ্ন : বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?
কলিন্দ্রেস : বাংলাদেশে অনেক ভালো ভালো ফুটবলার আছে। আরও উন্নতি করতে হবে। আমার দলের কথা বলবো-অনেক ভালো ফুটবলার আছে এখানে। এখানকার লিগটা অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। তবে কিছু বিষয়ে আরও উন্নতি করতে হবে।

প্রশ্ন: ক্যারিয়ারে আপনি খেলোয়াড় হিসেবে কয়টি ট্রফি জিতেছেন?
কলিন্দ্রেস : বসুন্ধরা কিংসের এই ট্রফি আমার ক্যারিয়ারের সপ্তম। এর আগে আমি দেশে তিনটি ক্লাবে খেলেছি। ৬ বার লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছি।

প্রশ্ন : মৌসুম শেষের পথে। নিজের পারফরম্যান্সে আপনি কি খুশি?
কলিন্দ্রেস : আমি খুশি। কারণ, একজন পেশাদার ফুটবল হিসেবে আমি দলকে চ্যাম্পিয়ন করাতে সহায়তা করতে পেরেছি। তবে আমাকে আরও অনেক উন্নতি করতে হবে।

প্রশ্ন : আপনি এখন চ্যাম্পিয়ন দলের খেলোয়াড়। আগামী মৌসুমেও খেলবেন এই দলে। ট্রফি ধরে রাখা নিয়ে কোনো চাপ অনুভব করছেন কি?
কলিন্দ্রেস : অবশ্যই। কারণ, আগামী মৌসুম আরো কঠিন হতে পারে। আমাদের অনেক কিছুতে উন্নতি করতে হবে।

প্রশ্ন : বাংলাদেশ ও কোস্টারিকার ফুটবলের মধ্যে পার্থক্য কি?
কলিন্দ্রেস : পার্থক্য হলো কোস্টারিকায় এক নম্বর খেলা ফুটবল। কিন্তু বাংলাদেশে এক নম্বর খেলা ক্রিকেট। দুই দেশের মধ্যে কোন দেশ ভালো তার উত্তরে বলবো ফুটবলের কারণে অবশ্যই কোস্টারিকা।

প্রশ্ন : আপনি দেশের জার্সিতে বিশ্বকাপ খেলেছেন। কোস্টারিকা জাতীয় দলে আবার সুযোগ পাওয়ার কোনো আশা আছে কি?
কলিন্দ্রেস : জানি না। কারণ, তারা এখন নতুন তারকা ফুটবলার খুঁজছে। আমি তো এখন বুড়ো হয়ে গেছি (হাসি)। তাছাড়া কোস্টারিকায় এখন ভালো উইঙ্গার আছে। তাই আমার আবার ডাক পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত নয়।

প্রশ্ন : এক সময় মনে হয়েছিল বসুন্ধরা কিংস অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হতে যাচ্ছে। কিন্তু শেষ দিকে এসে হারতে হয়েছে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের কাছে। অপরাজিত শব্দটি আর থাকলো না। কোনো হতাশা আছে?
কলিন্দ্রেস : এটা ফুটবল। তাছাড়া প্রত্যেকটি দলই চেষ্টা করেছে বসুন্ধরা কিংসকে হারাতে। শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রও চেয়েছিল আমাদের হারাতে। তারা সফল হয়েছে।

প্রশ্ন : বাংলাদেশ বা অন্য কোনো দেশের ক্লাব থেকে প্রস্তাব পেয়েছিলেন?
কলিন্দ্রেস : আমি ভারত ও থাইল্যান্ড থেকে অফার পেয়েছিলাম। ইন্ডিয়া সুপার লিগের একটি ক্লাব আমার সাথে যোগাযোগ করেছিল। আমি বসুন্ধরা কিংসকেই বেছে নিয়েছি। কারণ, বসুন্ধরা কিংসই আমার ভালো লেগেছে। তাদের প্রস্তাবই সব দিক থেকে আমার কাছে বেটার মনে হয়েছে।

প্রশ্ন : আপনার কৈশরের কিছু যদি বলেন...
কলিন্দ্রেস : এক কথা জন্মের পর থেকেই আমার হাতে বল ছিল। তারপর বড় হয়েছি বলের সঙ্গেই। আমার সবচেয়ে প্রিয় খেলা এই ফুটবল।

প্রশ্ন : বাংলাদেশের জাতীয় দলে খেলার প্রস্তাব পেলে কী করবেন?
কলিন্দ্রেস : না। কারণ, আমি ইতিমধ্যেই কোস্টারিকার হয়ে খেলেছি। তাছাড়া বাংলাদেশে আমার চেয়ে অনেক ভালো উইঙ্গার আছে (হাসি)।

প্রশ্ন : কোস্টারিকার আরো ফুটবলার কি দেখা যাবে বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে? সেটা বসুন্ধরা কিংস হোক বা অন্য ক্লাবে?
কলিন্দ্রেস : দেখা যেতে পারে। তবে অন্য কোনো ক্লাবে নয়। আসলে বসুন্ধরা কিংসেই আসবে। কারণ, এ ক্লাবটির কার্যক্রম অনেক ভালো।

Collindres.jpg

প্রশ্ন : নতুন করে চুক্তির পর আপনার লক্ষ্য কি পরের মৌসুমে?
কলিন্দ্রেস : আমাদের প্রথম লক্ষ্য লিগ শিরোপা ধরে রাখা। এবার ফেডারেশন কাপ জিততে পারিনি। এবার জিততে চাই। এক কথা সব শিরোপা জয়ই আমাদের লক্ষ্য। আর এএফসি কাপে ভালো করতে হবে আমাদের।

প্রশ্ন : বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোনো ম্যাচ দেখেছেন?
কলিন্দ্রেস : বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-লাওস ম্যাচটি দেখেছি। খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়াতে হবে। ম্যাচটি বাংলাদেশ জিততে চাইলে জিততে পারতো। খেলোয়াড়রা একটু ভয়ে ছিল। জিততে চায়নি। ড্র প্রয়োজন ছিল তাই হারবো না- এই মানসিকতা নিয়েই খেলেছিল।

প্রশ্ন : বাংলাদেশে কোন খাবার কি আপনার ভালো লেগেছে?
কলিন্দ্রেস : এখানকার চিকেন বিরিয়ানি খুব মজার। আর সকালে এগ-পরাটা (ডিম পরাটা)।

প্রশ্ন : খারাপ লাগে কোন বিষয়টি?
কলিন্দ্রেস : ট্রফিক জ্যামই আমার কাছে বেশি অসহনীয় লাগে।

প্রশ্ন : আর মশা?
কলিন্দ্রেস : আমি মশানেট (মশারী) ব্যবহার করি। তাই সমস্যা হয় না।

প্রশ্ন : বাংলাদেশে কোনো বান্ধবী আছে?
কলিন্দ্রেস : না। কারণ, আমি বিবাহিত।

প্রশ্ন : যখন বাংলাদেশে খেলার প্রথম প্রস্তাব পেয়েছিলেন তখন এ দেশটি সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল?
কলিন্দ্রেস : ইন্টারনেটে দেখেছি। তখন দেখেছি অনেক সুন্দর জায়গা আছে এখানে। যেমন সিলেট, সুন্দরবন, কক্সবাজার।

প্রশ্ন : সুন্দরবনে গিয়েছেন?
কলিন্দ্রেস : আমার স্ত্রী এখন দেশে আছে। সে আসলে তাকে নিয়ে সুন্দরবন ও কক্সবাজার যাওয়ার পরিকল্পনা আছে।

প্রশ্ন : এখানে আপনার প্রিয় শব্দ কী?
কলিন্দ্রেস : আসসালামু আলাইকুম।

প্রশ্ন : ফুটবল ছাড়া প্রিয় খেলা?
কলিন্দ্রেস : বিলিয়ার্ড। কিন্তু খেলার সময় পাই না।

প্রশ্ন : বিশ্বের কোন ক্লাব আপনার প্রিয়?
কলিন্দ্রেস : বার্সেলোনা।

আরআই/এসএএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।