ইতিহাস গড়া গোলের আগে কি কথা হয়েছিল মাসিহ-বেলফোর্টের?
এএফসি কাপের দ্বিতীয় পর্বে উঠে আবাহনী যে নতুন ইতিহাস গড়েছে, তার অন্যতম নায়ক মাসিহ সাইঘানি। আফগানিস্তানের এই ডিফেন্ডার দলের ১২ গোলের ৩টি করেছেন। যার দুটি জয়সূচক। দুটি ম্যাচই তিনি জিতিয়েছেন প্রতিপক্ষের মাটিতে।
৩ এপ্রিল কাঠমান্ডুতে স্বাগতিক মানাং মার্সিয়াংদি ক্লাবের বিরুদ্ধে ২৮ মিনিটে করেছিলেন ম্যাচের একমাত্র গোল। সর্বশেষ বুধবার গুয়াহাটিতে ভারতের মিনারভা পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে ম্যাচের অন্তিম সময়ে করেছেন আবাহনীর ইতিহাস গড়া গোল। মাসিহ অন্য গোলটি করেন ঢাকায় চেন্নাইন এফসির বিরুদ্ধে আবাহনীর ৩-২ গোলে জয়ের ম্যাচে।
এশিয়ান কোটায় এ ডিফেন্ডারকে ঢাকায় এনেছিল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের নতুন দল বসুন্ধরা কিংস। কিন্তু বসুন্ধরা তাকে রেজিস্ট্রেশন না করালে নিয়ে নেয় আবাহনী। সেই মাসিহ সাইঘানি এবার বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে অন্যতম সেরা ফুটবলার। কেবল ঘরোয়া ফুটবলেই নয়, আবাহনীর আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোতেও আলো ছড়াচ্ছেন এ আফগান।
বুধবার গুয়াহাটির ইন্দিরা গান্ধী স্টেডিয়ামে আবাহনীর যখন জয় ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না, তখন ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এই ডিফেন্ডার। করেন আবাহনীর কোটি টাকার চেয়েও বেশি মূল্যের গোলটি। আবাহনীর এ সাফল্য বাংলাদেশের ফুটবলের জন্যও বয়ে এনেছে দারুণ সুখবর। ভারতের দুই সেরা ক্লাবকে পেছনে ফেলে আবাহনী জায়গা করে নিয়েছে পরের রাউন্ডে।
মিনারভাকে হারানোর পর ফুটবলামোদীদের মুখেমুখে মাসিহ সাইঘানির নাম। নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে চলছিল ইনজুরি সময়ের খেলা। অন্য মাঠে তখন নেপালের মানাং মার্সিয়াংদি ক্লাবের বিরুদ্ধে ৩-২ গোলে এগিয়ে ভারতের ক্লাব চেন্নাইন এফসি। আবাহনী না জিতলেই বাদ।
এমন সময় অন্যতম নির্ভরযোগ্য ৩ ফুটবলারের এক অসাধারণ রসায়নে হেসে উঠলো বাংলাদেশের আকাশী-হলুদ শিবির। নাবিব নেওয়াজ জীবনের কর্নার হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড বেলফোর্টের মাথা হয়ে বক্সে আসা মাত্রই মাসিহ সাইঘানির দর্শনীয় হেড। গো ---ও---ল।
গোল ও আবাহনীর ঐতিহাসিক জয় নিয়ে ঘন্টাখানেক আগে নিজের ফেসবুক পেজে বিশাল এক স্ট্যাটাস এবং তার গোলের ভিডিও আপলোড করেছেন মাসিহ সাইঘানি।
মাসিহ লিখেছেন-
গেমের তখন শেষ মিনিট। আমাদের জন্য ড্র যথেষ্ট ছিল না। কারণ, ততক্ষণে চেন্নাইন এফসি তাদের জয়সূচক গোল করে ফেলেছে মানাংয়ের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ সুযোগটিই আমাদের ইতিহাস গড়ার রাস্তা তৈরি করে দিয়েছিল। কর্নারের পর যখন আমি দেখলাম মাই ব্রাদার বেলফোর্ট দ্বিতীয় পোস্টের সামনে দেখে লাফ দিচ্ছেন বলটি মাঠে রাখতে, তখন আমি প্রস্তুত। আমি জানতাম বেলফোর্ট কিছু একটা করবে। প্রায় বাইরে চলে যেতে থাকা বল দুর্দান্ত হেডে বেলফোর্ট ভেতরে রাখলেন। তখন আমার মনে একটা ভাবনা-বল গোল লাইন অতিক্রম করাতেই হবে। সেটা কিভাবে ব্যাপার নয়। হেডে বল গোল লাইন অতিক্রম করালাম: গো-ও-ল।
ইতিহাস, ইতিহাস, ইতিহাস।
এখন আমি বলবো ম্যাচের শেষ ১০ মিনিটে বেলফোর্টের সঙ্গে আমার কি কথা হচ্ছিল মাঠে। আমরা সব কিছুই করছিলাম। প্রত্যেক খেলোয়াড় নিজের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করছিল। কিন্তু এ দিনে এসবও যেন যথেষ্ট ছিল না। তখন মনে হলো ব্যতিক্রমী কিছু করতে হবে। কিন্তু সেটা কি, ব্যাখ্যা করতে পারবো না। আমার মনে হচ্ছিল এবং জানতাম ম্যাচ জেতাতে বেলফোর্ট ব্যতিক্রমী কিছু করতে পারবে। তারপরই আমরা একটা সহজ সুযোগ নষ্ট করলাম।
সুযোগ নষ্টের পর মাসিহর সঙ্গে যে কথোপকথন হলো আমার-
মাসিহ : বেলফোর্ট ব্রাদার
বেলফোর্ট : ইয়েস ব্রাদার
মাসিহ : আজ আমাদের দিন। আমি ইতিহাস সৃষ্টি করতে চাই
বেলফোর্ট : হ্যাঁ। এই জন্যই তো আমরা এখানে এসেছি। কিন্তু এর চেয়ে বেশি আমরা কি করতে পারি?
মাসিহ : চালিয়ে যাও ব্রাদার। আজ তোমার ও আমার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। আমরা পারবো।
বেলফোর্ট : লেটস গো ফর ইট !!!
আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম ক্লাবের স্বপ্ন পূরণ হলো। আমি দলকে এএফসি কাপের পরের রাউন্ডে তুলতে সক্ষম হয়েছি। আমার ভাই বেলফোর্ট দারুণভাবে বলের যোগান দিয়েছে। অবিশ্বাস্য !!! আমি জানতাম এমন কিছু ঘটবে। আলহামদুলিল্লাহ। এটা আল্লাহর পরিকল্পনা।
আরআই/এমএমআর/জেআইএম