লুকিয়ে লুকিয়ে ফুটবল খেলা মনিকাই এখন বাংলাদেশের মুখ

রফিকুল ইসলাম
রফিকুল ইসলাম রফিকুল ইসলাম , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১০:৫৮ এএম, ০২ মার্চ ২০১৯

বাবা-মায়ের চোখ রাঙানি আর বকুনির ভয়ে ফুটবল খেলতেন লুকিয়ে লুকিয়ে। খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীচরের বিন্দু কুমার আর রবি মালার ৫ মেয়ের সবার ছোট সেই মনিকা চাকমা এখন বাংলাদেশের ফুটবলের বড় সম্পদ। এ কিশোরীর এক কর্নার কিকে বাংলাদেশ পৌঁছে গেছে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত পর্বে। অভিনন্দন বাংলাদেশ। সাবাশ মনিকা।

মনিকাদের পরিবারের আর কারো সম্পৃক্ততা নেই ফুটবলে। কৃষক বাবা বিন্দু কুমার আর গৃহিনী মা রবি মালা কিছুতেই চাইতেন না তার কোনো মেয়ে ফুটবল নিয়ে মাঠে ছোটাছুটি করুক। সেই বাধা উপেক্ষা করে বিকেলে ফুটবল নিয়ে মাঠে নামতেন পরিবারের ছোট মেয়ে মনিকা।

শুক্রবার মিয়ানমারের মান্দালা থিরি স্টেডিয়ামে মনিকা দেখালেন বাঁ-পায়ের খেল। তার বাঁকানো কর্নারে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন মিয়ানমারের গোলরক্ষক। বল হাতে লাগালেও থামাতে পারেননি। মনিকা হয়ে উঠেন ম্যাচজয়ী নায়ক।

মনিকা ২০১১ সালে বঙ্গমাতা প্রাথমিক বিদ্যালয় টুর্নামেন্টে ফুটবল খেলেছিলেন ময়মনসিংহের হয়ে। দুই বছর পর খেলেছেন নিজ স্কুলের জার্সি গায়ে। বঙ্গমাতা টুর্নামেন্ট থেকে উঠে আসা সেই মনিকাই এখন দেশের নারী ফুটবলের অন্যতম বড় মুখ। খেতে ফসল ফলানো বিন্দুর মেয়ে ফুটবলের ফুল ফুটিয়ে যাচ্ছেন লাল-সবুজ জার্সি গায়ে। ফুটবল মাঠ রাঙাচ্ছেন বাবা-মায়ের চোখ রাঙানি খাওয়া সেই মেয়েটি।

বাবা-মায়ের বাধার পরও কিভাবে ফুটবলার হলেন? মনিকা সে গল্প আগেই শুনিয়েছিলেন জাগো নিউজকে, ‘ফুটবল আমার অনেক ভালো লাগে। তাই বকা খেয়েও মাঠে গিয়েছি, ফুটবল খেলেছি। বাবা আমাকে খেলতেই দিতেন না। তারপরও চুরি করে মাঠে গিয়ে খেলতাম। এখন তো ফুটবলই আমার সব।’

২০১৭ সালে থাইল্যান্ডে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত পর্বে গ্রুপের শেষ ম্যাচে এই মনিকা চাকমাই বাংলাদেশকে এগিয়ে দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। ৯ মিনিটে গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশ ম্যাচে ফিরেছিল ৪৫ মিনিটে শামসুন্নাহারের দেয়া পেনাল্টি গোলে।

মনিকা বাংলাদেশকে এগিয়ে দিয়েছিলেন ৫১ মিনিটে দুর্দান্ত এক গোল করে। যদিও বাংলাদেশ সেই অগ্রগামিতা ধরে রাখতে পারেনি। অস্ট্রেলিয়া ৭৮ ও ৮৩ মিনিটে দুটি গোল করে কেড়ে নিয়েছিল বাংলাদেশের জয়।

এটি বাংলাদেশের মেয়েদের দ্বিতীয়বার এএফসি অনূধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার স্বপ্নপূরণ। এর আগে ২০১৭ সালেও বাংলাদেশ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠেছিল এশিয়ার সেরা ৮ দলের কাতারে। চূড়ান্ত পর্ব কেবল এশিয়ার লড়াই’ই নয়, বিশ্বকাপেরও বাছাই পর্ব। ২০২০ সালের বিশ্বকাপে উঠতে হলে আগামী সেপ্টেম্বরে থাইল্যান্ডে ৮ দলের মধ্যে সেরা তিনে থাকতে হবে লাল-সবুজ জার্সিধারীদের।

আরআই/আইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।