জাতীয় দলে ঠিকই ডাক পেলেন সোহেল; কিন্তু নেই তার স্ত্রী-পুত্র

রফিকুল ইসলাম
রফিকুল ইসলাম রফিকুল ইসলাম , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৯:৫৩ পিএম, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

‘আফরানের আব্বু, তুমি এত ভালো খেলো; কিন্তু জাতীয় দলে জায়গা পাওনা। তোমাকে কিন্তু জাতীয় দলে খেলতেই হবে একবার। এটা আমাদের চাওয়া’- মৃত্যুর ৫ দিন আগেও ফুটবলার সোহেল রানাকে এ কথাগুলো বলেছিলেন তার স্ত্রী আফরিন।

সোহেল যখন জাতীয় দলে ডাক পেলেন তখন তার স্ত্রী-পুত্র আর পৃথিবীতে নেই, চলে গেলেন দূর থেকে বহুদূরে। যেখান থেকে আর কেউ ফিরে আসে না। জাতীয় দলের প্রাথমিক ক্যাম্পে ডাক পাওয়ার খরবটিও তাদের কাছে পৌছাঁনো যাবে না। গত বছর ২৪ নভেম্বর নিজ বাড়ি মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফেরার পথে সাভারের নবীনগর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুপুত্র আফরানসহ নিহত হন সোহেল রানার স্ত্রী আফরিন। ওই ঘটনায় আহত হয়েছিলেন ফুটবলার সোহেলও।

সোমবার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ঘোষণা করেছে, কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচের জন্য জাতীয় দলের ২৭ সদস্যের প্রাথমিক তালিকা। যে তালিকায় আছেন শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের এই মিডফিল্ডারও। নিজের নামটি আছে জানার পর থেকেই অকালে চলে যাওয়া স্ত্রী আর ৩ বছরের ছেলের স্মৃতিই বেশি মনে পড়ছে সোহেল রানার।

শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের সঙ্গে এখন সিলেট রয়েছেন সোহেল রানা। প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আবেগ আটকে রাখতে পারেননি ২০১০ সাল থেকে পেশাদার ফুটবলে খেলা এই মিডফিল্ডার। কোনোমতে আবেগ সামলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, ‘আমার জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া নিয়ে যার আশা বেশি ছিল সেই এখন বেঁচে নেই। আজ এমন খুশির দিনে তাদেরই যে বেশি মিস করছি! মনের ভেতর আরো বড় করে জেগে উঠছে আমার স্ত্রী-পুত্রের কথা।’

Sohel-Rana-2.jpg

ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালের পর ঢাকার বসুন্ধরার বাসা থেকে স্ত্রী আর পুত্রকে নিয়ে ছুটি কাটাতে মানিকগঞ্জে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন সোহেল রানা। ২৪ নভেম্বর নিজের মটর সাইকেলে তাদের নিয়ে ফিরছিলেন ঢাকায়। ফেরার পথে সাভারের নবীনগর এলাকায় একটি ঘাতক মাইক্রোবাস কেড়ে নেয় সোহেল রানার সব কিছু। নিজে বেঁচে গেলেও ঘটনাস্থলেই চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলেন স্ত্রী আর পুত্র সন্তানকে।

এতবড় মানসিক ধকল কাটাতে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের কোচ সাইফুল বারী টিটু স্বাধীনতা কাপে বিশ্রাম দিয়েছিলেন সোহেল রানাকে। প্রিমিয়ার লিগে প্রায় নিয়মিতই খেলছেন মধ্যমাঠের এ কারিগর। জাতীয় দলের ইংলিশ কোচ জেমি ডে’র নজরও পড়েছে তার ওপর। তাই তো প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের ক্যাম্পে মানিকগঞ্জের এ যুবক।

২০১০ সালে ফেনী সকার ক্লাবের হয়ে প্রিমিয়ার লিগে অভিষেক। তারপর মোহামেডান, ব্রাদার্স, মুক্তিযোদ্ধা ও চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে এ বছর ব্লু জার্সিতে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রে। নিজের ওপর আস্থা ছিল সোহেল রানার। এই ঢুকবো জাতীয় দলে..., এটা ভেবে ভেবে এক সময় আশা ছেড়েও দিয়েছিলেন।

Sohel-Rana-2.jpg

‘আমি ২০০৯ সালে থাইল্যান্ডে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলেছি। ২০১৩ সালে নেপালে খেলেছি এএফসি অনূর্ধ্ব-২২ দলের হয়েও; কিন্তু গত ৩/৪ বছর যখন ডাক পাচ্ছিলামই না, তখন আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। আফরিন (সোহেলের স্ত্রী) মাঝেমধ্যেই আফসোস করে বলতো এত সুন্দর খেলো কিন্তু জাতীয় দলে তোমাকে ডাকে না। সেই ডাক পেলাম; কিন্তু ওরা চলে যাওয়ার পর’- বলছিলেন সোহেল রানা।

বাবা হওয়ার পর থেকে সোহেলের মোবাইলে ছেলের ছবি। মাঠে নামার আগে মোবাইলের স্ক্রিনে চুমো দিয়ে ছেলেকে আদর করতেন সোহেল। করেন এখনো। তাদের জন্যই তিনি জাতীয় দলে ভালো খেলতে চান।

আপনি ভালো খেললেও তো ওরা আর দেখতে পাবে না। এটা অবশ্য মানতে নারাজ সোহেল রানা, ‘আমার বিশ্বাস, আমি ভালো খেললে ওরা দেখতে পাবে। জানতে পারবে। আমাকে একাদশে থাকতে হবে। দেশের জন্য ভালো খেলতে হবে। এক সময় জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন ছিল। এখন স্বপ্ন আমার হারিয়ে যাওয়া স্ত্রী-পুত্রের জন্য দেশের হয়ে অনেক ভালো খেলতে হবে। ওরা যে আমার খেলা দেখবে!’

আরআই/আইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।