আগামী দশ বছর ‘এল-ক্লাসিকো’ মাতাবেন যারা

শাহাদাৎ আহমেদ সাহাদ
শাহাদাৎ আহমেদ সাহাদ শাহাদাৎ আহমেদ সাহাদ , স্পোর্টস রিপোর্টার
প্রকাশিত: ১২:২১ পিএম, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯

গত এক দশকে ইউরোপিয়ান ফুটবলের অন্যতম সেরা ম্যাচ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে দুই স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার মধ্যকার ‘এল ক্লাসিকো’। এর আগে এল ক্লাসিকোর আবেদন অনেক বেশি হলেও, বার্সেলোনার লিওনেল মেসি এবং রিয়াল মাদ্রিদের ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মুখোমুখি লড়াইয়ের জনপ্রিয়তা ছাড়িয়ে যেতো অন্য যেকোনো ম্যাচকেই।

কিন্তু গতবছর রিয়ালের সুপারস্টার রোনালদো ক্লাব ছেড়ে যোগ দিয়েছেন জুভেন্টাসে, বার্সেলোনার হয়েও হয়তো আর কয়েক মৌসুমই খেলতে পারবেন লিওনেল মেসি। এছাড়া দুই দলের অন্যান্য তারকা আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, জাভি হার্নান্দেজ, হাভিয়ের মাচেরানো, ইকার ক্যাসিয়াস প্রমুখ আর দুই ক্লাবে খেলেন না বিধায় অনেকাংশেই পরতির দিকে এল ক্লাসিকোর আবেদন।

কিন্তু তা দেখে-শুনেও কি চুপচাপ মেনে নিতে পারে দুই ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা? স্প্যানিশ ফুটবলের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন যে এল ক্লাসিকো ম্যাচ সে ম্যাচের আকর্ষণ কি কমতে দেয়া যায়?- উত্তরটা, না! দুই ক্লাবের কেউই চায় না নিজেদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে রাখতে, এল ক্লাসিকো ম্যাচের জনপ্রিয়তা কমতে দিতে।

তাই তো দুই ক্লাবই ইতোমধ্যে নিজেদের আগামী দশ বছরের পরিকল্পনা সাজিয়ে ফেলেছে ভবিষ্যতের কথা ভেবে। দলের বর্তমান তারকারা কিছুদিন পরেই ক্লাব ছেড়ে দিলে অথবা অবসর নিলে যাতে দলে তারকার অভাব অনুভূত না হয় কিংবা দলকে এগিয়ে নেয়ার খেলোয়াড়শূন্যতা দেখা না দেয় সে লক্ষ্যে তরুণ খেলোয়াড়দের গুরুত্ব দিয়ে দল সাজাতে শুরু করেছে বার্সা-রিয়াল।

তবে দুই দল এগুচ্ছে দুই রকমের পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে। বার্সেলোনা যেখানে প্রতিষ্ঠিত তরুণ ফুটবলারদের চড়া মূল্যে দলে ভেড়াচ্ছে সেখানে রিয়াল এগুচ্ছে তুলনামূলক কম খরচে সম্ভাবনাময় কম বয়সী ফুটবলারদের।

চলুন দেখে নেয়া যাক আগামী দশ বছরে যেসব ফুটবলাররা সামলাবেন রিয়াল-বার্সার মাঠের খেলা, রাঙাবেন এল ক্লাসিকোর লড়াই:

বার্সেলোনা

তরুণ ফুটবলারদের পেছনে বার্সেলোনার খরচ

ওসুমানে দেম্বেলে - ১০৫+৪০ মিলিয়ন ইউরো
ফ্র‍্যাংকি ডি ইয়ং - ৭৫+১১ মিলিয়ন ইউরো
ম্যালকম - ৪০ মিলিয়ন ইউরো
আর্থুর মেলো - ৩১+৯ মিলিয়ন ইউরো
বালৌ তাবলা - ১ মিলিয়ন ইউরো
কার্লস অ্যালেনা - লা মাসিয়া
রিকি পুইগ - লা মাসিয়া

ওসুমানে দেম্বেলে: মাত্র ২১ বছর বয়সেই নিয়মিত খেলছেন বার্সেলোনার মতো বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাবে। ২০১৮ সালে ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য ওসুমানে দেম্বেলের ট্রান্সফার ফি এখনো বিশ্বের সর্বোচ্চ ট্রান্সফার ফি’র একটি হয়ে রয়েছে। গতির সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন পজিশনে খেলার সক্ষমতা বাড়তি চাহিদা তৈরি করেছে দেম্বেলের। নেইমার চলে যাওয়ার পর তার রেখে যাওয়া শূন্যস্থানটা বেশ ভালোভাবেই পূরণ করছেন দেম্বেলে। যদিও মাঠের বাইরে তার সময়ানুবর্তীতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে কিছু কিন্তু প্রতিভার প্রশ্নে ইতোমধ্যেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন দেম্বেলে।

আর্থুর মেলো: অনেকটা বাজি ধরেই তাকে দলে ভিড়িয়েছে বার্সেলোনা। তবে সময়ের সঙ্গে দলের দারুণ এক সিদ্ধান্তে পরিণত হয়েছেন ব্রাজিলের ২২ বছর বয়সী তরুণ আর্থুর মেলো। তার খেলার ধরনটাও মিলে যায় বার্সেলোনার সুপরিচিত ইয়ুথ ক্লাব লা মাসিয়ার সঙ্গে। ফলে গ্রেমিও থেকে আর্থুরকে ৩০ মিলিয়ন ইউরোতে দলে নেয়ার সিদ্ধান্তটা যথাযথ হিসেবেই প্রমাণিত হচ্ছে বার্সেলোনার জন্য।

ম্যালকম: আর্থুরের স্বদেশী ম্যালকমকে দলে ভেড়াতে ৪০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করতে হয়েছে বার্সেলোনাকে। বার্সেলোনার হয়ে শুরুটাও দারুণ করেছিলেন ২১ বছর বয়সী এ ব্রাজিলিয়ান। তবে সময়ের সঙ্গে নিজের মান খেলাতে পারেননি তিনি। তাই ম্যালকমের ব্যাপারে বার্সেলোনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা থাকলেও তাকে লোনে ইতালিয়ান ক্লাব এএস রোমার কাছে ছেড়ে দেবে স্প্যানিশ ক্লাবটি।

কার্লস অ্যালেনা: ২১ বছর বয়সী অ্যালেনাকে দলে পেতে কোনো খরচ করতে হয়নি বার্সেলোনার। কেননা কার্লস অ্যালেনা বার্সেলোনার সুপরিচিত ইয়ুথ ক্লাব লা মাসিয়াতে খেলেই বেড়ে উঠেছে। মিডফিল্ডে দারুণ স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে খেলতে পারা অ্যালেনাকে নিজেদের মাঝমাঠের ভবিষ্যত হিসেবে বিবেচনা করছে বার্সেলোনা। এমনকি ইতোমধ্যে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগেও অভিষেক হয়ে গিয়েছে তার। তবে বর্তমানে তারকাদের ভীড়ে নিয়মিত সুযোগ না পেলেও কয়েক মৌসুমের মধ্যেই বার্সেলোনা শুরুর একাদশেই থাকবে তার নাম।

রিকি পুইগ: ১৯ বছর বয়সী রিকি পুইগকে এখনই ভবিষ্যতের আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা ভাবতে শুরু করেছেন অনেকেই। তার বেড়ে ওঠাটাও ইনিয়েস্তার মতোই লা মাসিয়া থেকে। এরই মধ্যে মূল দলে অভিষেকও হয়ে গিয়েছে অমিত সম্ভাবনাময় পুইগের। তবে তাকে আরও বেশি প্লেয়িং টাইম দেয়ার লক্ষ্যে চলতি মৌসুমেই অন্য কোথাও লোনে পাঠিয়ে দেয়ার কথা ভাবছে বার্সেলোনা।

ফ্রেংকি ডি ইয়ং: মাত্র ২১ বছর বয়সী মিডফিল্ডার ফ্রেংকি ডি ইয়ংকে দলে ভেড়াতে ৮৬ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে বার্সেলোনা। বিখ্যাত আয়াক্স ইয়ুথ একাডেমীতে বেড়ে ওঠা ডি ইয়ং এরই মধ্যে প্রতিশ্রুতি দেখিয়েছেন মাঝমাঠে বিশ্বের সেরা হওয়ার। এ বয়সেই বার্সেলোনার মূল দলের শুরুর একাদশে থাকার সামর্থ্যও রয়েছে তার। ফ্রেঞ্চ ক্লাব পিএসজির সঙ্গে তুমুল লড়াই করেই ডি ইয়ংকে দলে পেয়েছে বার্সেলোনা।

বালৌ তাবলা: অন্যান্য তরুণ তুর্কিদের মতো অনেক বেশি খরচ করতে হয়নি ১৯ বছর বয়সী বালৌ তাবলাকে দলে পেতে। কানাডায় খোঁজ লাগিয়ে ১ মিলিয়ন ডলারেই তাকে পেয়ে গিয়েছে বার্সেলোনা। মেজর সকার লীগে মন্টরিয়েলের হয়ে তার পারফরম্যান্সই মূলত বার্সেলোনার নজর কাড়ে। যে কারণে নিজেদের ভবিষ্যত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তাবলাকে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে কাতালান ক্লাবটি।

রিয়াল মাদ্রিদ

তরুণ ফুটবলারদের পেছনে রিয়ালের খরচ

অ্যাসেনসিও - ৪ মিলিয়ন ইউরো
সেবায়োস - ১৬ মিলিয়ন ইউরো
ওডেগার্ড - ২ মিলিয়ন ইউরো
ভিনিসিয়াস - ৪৫ মিলিয়ন ইউরো
রদ্রিগো - ৪৫ মিলিয়ন ইউরো
ব্রাহিম - ১৭+৭ মিলিয়ন ইউরো
লুনিন - ৮.৫+৪ মিলিয়ন ইউরো
রেগুইলিয়ন - যুব দল থেকে

মার্কো অ্যাসেনসিও: ২৩ বছর বয়সী অ্যাসেনসিওকে দলে ভেড়ানোর সময় অনেক বেশি আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল তার ট্রান্সফার ফি। কেননা আরেক স্প্যানিশ ক্লাব মায়োর্কাকে মাত্র ৪ মিলিয়ন ইউরো দিয়েই অ্যাসেনসিওকে পেয়ে গিয়েছিল রিয়াল। যেখানে বর্তমান বাজারে ন্যুনতম ১০০ মিলিয়ন ইউরো উঠবে তার ট্রান্সফার ফি। বেশ কয়েক মৌসুম ধরেই খেলছেন রিয়ালের হয়ে, জিতেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগও। অদূর ভবিষ্যতেই দলের মূল তারকাদের একজন হবেন অ্যাসেনসিও।

দানি সেবায়োস: অ্যাসেনসিওর মতোই সেবায়োসকেও অল্পেই পেয়েছিল রিয়াল। রিয়াল বেটিসের কাছ থেকে সেবায়োসকে পেতে রিয়ালের খরচ ছিলো মাত্র ১৬ মিলিয়ন ইউরো। কিন্তু মাঠের খেলায় নিজেকে এর চেয়ে অনেক দামী প্রমাণ করেছেন ২২ বছর বয়সী এ মিডফিল্ডার।

মার্টিন ওডেগার্ড: আরো ৪ বছর আগে মাত্র ১৬ বছর আগেই তুমুল জনপ্রিয়তা সঙ্গে নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদে এসেছেন ওডেগার্ড। ইউরোপের প্রায় সব বড় বড় দলের বিপক্ষে লড়াই করেই তাকে দলে ভিড়িয়েছিল রিয়াল। প্রথমে রিয়াল মাদ্রিদের যুব দল কাস্তিলার হয়ে দুর্দান্ত খেলার পর তিনি অপেক্ষায় রয়েছেন রিয়ালের মূল দলে আলো ছড়ানোর।

ভিনিসিয়াস জুনিয়র: ব্রাজিলের বিস্ময় বালক ভিনিসিয়াসকে দলে নেয়াটা রিয়ালের অন্যতম সেরা একটি সিদ্ধান্ত হিসেবেই বিবেচনা করেন ফুটবল বিশ্লেষকরা। নিজ দেশের ক্লাব ফ্লেমিঙ্গো থেকে ৪৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে রিয়ালে নাম লিখিয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে নিজের দামের প্রতি সুবিচার করতে শুরু করেছেন ১৮ বছর বয়সী এ তারকা ফুটবলার। নিয়মিতই ভিনিসিয়াসকে দেখা যাচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদের মূল দলের প্রথম একাদশেই।

রদ্রিগো: ভিনিয়াসের মতোই রিয়ালের আরো একটি লাভজনক সাইনিং ছিলো ১৮ বছর বয়সী রদ্রিগোকে দলে ভেড়ানো। স্বদেশী ভিনিয়াসের মতোই তার ট্রান্সফার ফিও নির্ধারিত হয়েছে ৪৫ মিলিয়ন ইউরো। এখনো নিজ দেশের ক্লাব সান্তোসেই থাকলেও, নতুন মৌসুমের শুরুতেই রিয়ালে যোগ দেবেন রদ্রিগো।

ব্রাহিম দিয়াজ: সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে যোগ দেয়া সবশেষ তারকা ১৯ বছর বয়সী ব্রাহিম দিয়াজ। মালাগার এ তরুণকে দলে পেতে ম্যানচেস্টার সিটিকে ২৪ মিলিয়ন ইউরো দিতে হয়েছে রিয়ালকে। এরই মধ্যে মূল দলে অভিষেক হওয়া ব্রাহিমের কাছ থেকে অনেক বেশি প্রত্যাশা রিয়ালের।

আন্দ্রে লুনিন: লিভারপুল এবং এএস রোমার মতো ক্লাবগুলোর হাত থেকে ছিনিয়ে ১৯ বছর বয়সী গোলরক্ষক লুনিনকে নিজেদের দলে ভিড়িয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। তবে দলে এখন খেলার সুযোগ না থাকায় স্পেনের আরেক ক্লাব লেগানেসে লোনে পাঠানো হয়েছে এ ইউক্রেনিয়ান তরুণকে।

রেগুইলিয়ন: নিজেদের সুপরিচিত যুব দল কাস্তিলা থেকে এ মৌসুমেই মূল দলে উন্নীত করা হয়েছে ২২ বছর বয়সী রেগুইলিয়নকে। তারকা ডিফেন্ডার মার্সেলোর অফফর্ম এবং বিশ্রামজনিত কারণে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ম্যাচের প্রথম একাদশেও ছিলেন তিনি।

নোট: লেখাটি স্প্যানিশ পত্রিকা মার্কার একটি প্রতিবেদন থেকে অনুদিত এবং পরিমার্জিত।

এসএএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।