লন্ডন আর টানে না বিপলু আহমেদকে

রফিকুল ইসলাম
রফিকুল ইসলাম রফিকুল ইসলাম , বিশেষ সংবাদদাতা সিলেট থেকে
প্রকাশিত: ০৩:৫৫ পিএম, ০২ অক্টোবর ২০১৮

সিলেটের তরুণদের অন্যরকম এক টান লন্ডন। একটু ডাঙর হওয়ার পর থেকেই তারা মনে বুনতে থাকেন লন্ডন যাওয়ার স্বপ্নের বীজ। উন্নত জীবনের খোঁজে দেশ ছেড়ে পাড়ি জমান সেখানে। এমন স্বপ্ন ছিল বিপলু আহমেদেরও। বিপলু নামটি নিশ্চয়ই পরিচিত লাগছে? সোমবার সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে এ তরুণের গোলেই লাওসকে হারিয়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে শুভ সূচনা করেছে বাংলাদেশ।

লন্ডনের উন্নত জীবনের চেয়ে জাতীয় দলের জার্সির অনেক ওজন বিপলুর কাছে। এক সময়ে চোখ বন্ধ করে লন্ডন দেখলেও এখন তার হৃদয়জুড়ে শুধুই লাল-সবুজ জার্সি। দেশপ্রেম এখন বিপলুর এতটাই যে, লন্ডনের উন্নত জীবন তার কাছে তুচ্ছ। বিশ্বের অন্যতম সেরা শহর লন্ডর আর টানে না সিলেটের সুবিদ বাজারের এ তরুণকে।

তার মনের এ পরিবর্তন যে লাওসের বিরুদ্ধে গোলের পর নয়, হয়েছে আরো আগেই! বছর তিনেক আগে অনুর্ধ্ব-১৯ দলে সুযোগ পেয়ে পাসপোর্ট করতে গিয়ে প্রথম বুঝতে পেরেছেন, দেশের প্রতিনিধিত্ব করার মাহাত্ম্যটা কত বড়। মঙ্গলবার টিম হোটেলের লবিতে বসে বিলাসী চিন্তা পরিবর্তনের গল্পটাই বলছিলেন জাতীয় দলের তরুণ এ মিডফিল্ডার।

‘আমি আগারগাঁও অফিসে যখন পাসপোর্টের জন্য যাই, তখন দেখি দীর্ঘ লাইন। পরিচয় জানার পর পাসপোর্ট অফিসের এক কর্মকর্তা আমাকে সামনে নিয়ে যান। প্রথমে লাইনের অন্যরা প্রতিবাদ করছিল। তখন ওই অফিসার সবাইকে বোঝালেন। বললেন, ও আমাদের ফুটবল খেলোয়াড়। সে দেশের প্রতিনিধিত্ব করে। ওর পাসপোর্টটা জরুরি। তখন সবাই আমাকে সামনে যেতে দেন এবং ৫ মিনিটেই আমি কাজ সেরে ফেলি। সেদিনই আমি বুঝতে পারি দেশের প্রতিনিধিত্ব করার গর্বটা কত গভীর’- এভাবেই লন্ডনমোহ ত্যাগের গল্প বলছিলেন বিপলু।

ঘরের মাঠে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ। সেখানেই জাতীয় দলের জার্সি গায়ে প্রথম গোল। বিপলু আহমেদের জন্য এ ম্যাচটি হয়ে থাকলো অবিস্মরণীয়। ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে সিলেট পৌঁছানোর পর তার মহল্লার অনেক মানুষ বিমান বন্দরে গিয়েছিলেন মটর শোভাযাত্রা করে। ৬৭টি বাইকে চড়ে তার পরিচিতরা স্বাগত জানিয়েছিলেন নিজ শহরে। তখন ভালো খেলার তাগিদটা আরো বেড়ে গিয়েছিল তার।

সিলেট আসলেও বাবা-মাকে দেখতে যাওয়া হয়নি। ম্যাচের দিন সকালে ফোন করে বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন, দোয়া নিয়েছেন। বিপলুর বাবা রেহান আহমেদ একটু অসুস্থ। তাই ছেলের খেলা দেখতে আসতে পারেননি স্টেডিয়ামে। তবে মা হালিমা বেগম এসেছিলেন, কিছু সময় খেলা দেখে বাসায় ফিরে গেছেন।

রাতে হোটেলে ফিরে মায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন বিপলু। ‘মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছি। মা অনেক কেঁদেছেন খুশিতে। সকালে বলেছিলেন ভালো খেলতে হবে। রাতে বলেছেন, তুমি ভালো খেলেছো, গোল করেছো। দেশকে জিতিয়েছো। এত খুশি আগে কখনো হইনি’-বলছিলেন বিপলু আহমেদ।

ঢাকার ফুটবলে বিপলু আহমেদ পরিচিতি পান মোহামেডানের জার্সি গায়ে। সাদা-কালোদের অনুর্ধ্ব-১৬ দলের মাধ্যমে তার আগমন। এবার নাম লিখিয়েছেন শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রে। এখন তার লক্ষ্য আরো ভালো খেলা। ভালো ফুটবলার হতে হলে তো ঢাকার চেয়ে লন্ডনই ভালো জায়গা তাই না? বিপলু তা মানছে না, ‘উন্নতি সব জায়গাতেই করা যায়। সবকিছু নির্ভর করে নিজের উপর।’

৭ ভাই ২ বোনের মধ্যে সবার ছোট বিপলু। বড় ৩ ভাই থাকেন লন্ডনে। ভাইরা তাদের কাছে নিয়ে যেতে চাইলেও বিপলু এখন আর সায় দেন না। ‘এখন লন্ডন নয়, আমার কাছে জাতীয় দলের জার্সিই বড়’-বলেন গত মার্চে এই লাওসের বিরুদ্ধে ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে জাতীয় দলে অভিষেক হওয়া বিপলু আহমেদ।

আরআই/আইএইচএস/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।