‘বিশ্বকাপে জার্মানির বিপর্যয়ের কারণ ওজিল নয়’

স্পোর্টস ডেস্ক
স্পোর্টস ডেস্ক স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৫৭ পিএম, ২৯ আগস্ট ২০১৮

বিশ্বকাপের ইতিহাসে একবারই মাত্র প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল জার্মানিকে। সেই ১৯৩৪ সালে। এরপর জার্মানি মানেই সবাই ধরে রাখে নিশ্চিত সেমিফাইনাল। বলাই হয় যে, জার্মানির বিশ্বকাপ শুরু হয় সেমিফাইনাল থেকে। চারবার বিশ্বকাপ জেতা দলটির সর্বশেষ শিরোপা এসেছিল ২০১৪ সালে ব্রাজিল থেকে। রাশিয়া বিশ্বকাপে তারা অংশ নিয়েছিল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে। রাশিয়া বিশ্বকাপে ছিল টপ ফেবারিট। কিন্তু কি আশ্চর্য, সেই জার্মানিই কি না মেক্সিকো এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মত দলের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছে গ্রুপ পর্ব থেকে।

জার্মানদের এমন বিদায়ে পুরো বিশ্বকাপ যেন গ্রুপ পর্বেই অর্ধেক ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল। জার্মানির এমন করুণ পরিণতির কারণে চমকে গেছে পুরো ফুটবল বিশ্ব। কেন, কি কারণে তাদের এমন বিদায়? সেটা যেন মানতেই পারছিল না কেউ।

তবে অধিকাংশই এর কারণ হিসেবে দাঁড় করালেন একটি বিষয়কে। বিশ্বকাপ শুরুর আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েব এরদোয়ানের সঙ্গে দেখা করে তাকে নিজের ক্লাব জার্সি উপহার দিয়েছিলেন জার্মানির দুই ফুটবলার মেসুত ওজিল এবং ইলকায় গুন্ডোগান। এটাকেই পুরোপুরি রাজনৈতিক রূপ দেয়া হয় জার্মানিতে।

ওজিল এবং গুন্ডোগান মাঠে নামলেই শিকার হয়েছেন দর্শকদের ধুয়ো ধ্বনির। যে কারণে কথা বলতে হয়েছিল কোচ জোয়াকিম লোকে। শেষ পর্যন্ত এ পরিস্থিতি থেকে উত্তনের জন্য খোদ জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মের্কেল পর্যন্ত কথা বলেছেন। দর্শকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন, বিষয়টাকে নিয়ে পানি যেন ঘোলা না করা হয়।

কিন্তু কে শোনে কার কথা। ওজিলদের মানসিকভাবে দুর্বল করে দিলো দর্শকরা। তাদের বিদ্রুপ চলতে থাকে সমানতালে। যে কারণে দেখা গেলো, জোয়াকিম লো এক ম্যাচে ওজিলকে মাঠেই নামাননি। ওজিল নিজেও ছিলেন না নিজের পুরো ফর্মে। যে ওজিলকে ছাড়া গত ৭-৮টি বছর একাদশই কল্পনা করতে পারেননি কোচ জোয়াকিম লো, তাকে বাদ দিয়ে একাদশ সাজাতে হয়েছিল তাকে। ২০১৪ সালে জার্মানির বিশ্বকাপ জয়ের মূল রূপকারই ছিলেন ওজিল।

বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে জার্মানির বিদায়ের পর ওজিলের সমালোচনা করেছেন খোদ জার্মান ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্টও। যার জের ধরে ওজিল আন্তর্জাতিক ফুটবলকেই বিদায় জানিয়ে দিলেন। বলে দিলেন, জার্মানির হয়ে আর খেলবেন না। কারণটাও জানিয়ে দেন ওই সময়। বলেছিলেন, ‘জার্মানি জিতলে কৃতিত্ব সবার। আর হারলে দোষ একার আমার। আমি তুর্কি বংশোদ্ভূত, এ কারণেই নাকি হারিয়ে দিই।’

এমন আলোচনা-সমালোচনার মুখে অবশেষে জার্মানির কোচ জোয়াকিম লো হাজির হলেন মিডিয়ার সামনে। রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই কেন জার্মানি বিদায় নিয়েছিল, সে কারণ ব্যাখ্যা করেন তিনি। জানিয়ে দেন, মেসুত ওজিলের প্রতি যে বর্ণবাদী আচরণ হয়েছে, সে কারণে জার্মানি গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়নি। নিয়েছে অন্য কারণে।

বিশ্বকাপের পরপরই জার্মানি জাতীয় দলের কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা করেছিলেন জোয়াকিম লো। যিনি ২০০৬ সাল থেকে জার্মানির কোচের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তবে জার্মান ফুটবল ফেডারেশনের অনুরোধে স্বপদে থেকে যান লো।

তবে, হঠাৎ ওজিল জার্মানি জাতীয় দল থেকে অবসর ঘোষণায় বেশ বিস্মিত হয়েছেন লো। বিশেষ করে এমন একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তাকে না জানানোয় দারুণ হতাশ হয়েছেন জোয়াকিম লো। কারণ, লো বিশ্বাস করেন- তার (ওজিল) প্রতি যে বর্ণবাদী আচরণ করা হয়েছে, সে কারণে বিশ্বকাপে জার্মানির এমন বিপর্যয় ঘটেনি।

জোয়াকিম লো তো আরও একটি এগিয়ে গেলেন। তিনি বললেন, ‘জার্মান জাতীয় দলের মধ্যে কোনো বর্ণবাদ ছিল না। ওজিলের এজেন্ট আমাকে ফোন করেছিল এবং জানিয়েছিল তার অবসর নেয়ার কথা। মেসুত আমাকে কোনো কল করেনি এবং প্রথম থেকেই সে ছিল আমার সঙ্গে যোগাযোগহীন। গত দুই সপ্তাহে আমি চেষ্টা করেছি তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে, টেক্সট মেসেজ কিংবা ফোন কলের মাধ্যমে। মেসুত নিজে থেকেই নিজের পথ বেছে নিয়েছে। এটাকে আমি গ্রহণ করতেই হবে।’

৯ বছর লোর অধীনে খেলেছেন ওজিল। সেটাই জানালেন জার্মান কোচ। তিনি বলেন, ‘ওজিল ৯ বছর আমার অধীনে খেলেছে। অনেক স্মৃতি এবং অভিজ্ঞতা হয়েছে আমাদের। কিছু হয়তো ভালো ছিল না। তবে অনেক ভালো ভালো স্মৃতি তো রয়েছে। আমরা তো বিশ্বকাপ জিতেছি। এ কারণেই তো আমরা একসঙ্গে থাকতে পারি সারাজীবন।’

ওজিলকে গত ২০, ৩০ বছরের মধ্যে জার্মানির অন্যতম সেরা ফুটবলার হিসেবে মন্তব্য করলেন লো। তিনি বলেন, ‘গত ২০, ৩০ বছরের মধ্যে জার্মানির অন্যতম সেরা ফুটবলার ছিলেন ওজিল। একদিন হয়তো আমরা এ নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ পাবো। তবে, এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আমাকেই প্রথমে জানানো উচিৎ ছিল তার। এ কারণেই আমি হতাশ হয়েছি খুব।’

আইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।