কী রহস্য লুকিয়ে লুঝনিকিতে?

রফিকুল ইসলাম
রফিকুল ইসলাম রফিকুল ইসলাম , বিশেষ সংবাদদাতা মস্কো, রাশিয়া থেকে
প্রকাশিত: ১০:১৫ পিএম, ১৪ জুলাই ২০১৮

অনেকটা ঠিক এক মাসে আগের পরিবেশ। মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে শতশত মানুষের কর্মব্যস্ততা। বিশাল লুঝনিকি অলিম্পিক কমপ্লেক্সের শেষের শুরুর প্রস্তুতি। কিছু সময় পরপর যান্ত্রিক স্পেয়ারগুলো পানির প্রলেপ দিয়ে যাচ্ছে। পরক্ষণেই যান্ত্রিক ক্লিনার। স্টেডিয়ামের চারপাশে একটি ধুলোকনাও যেন থাকতে পারবে না। ঝকঝকে তকতকে করার সব প্রক্রিয়া। ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ বিশ্বকাপের সমাপনী বলে কথা।

দেয়ালের কোথাও রং ফ্যাকাশে হয়েছে কি না। স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সের গাছগুলো মাটিতে শুকনো পাতা ছড়িয়ে রেখেছে কি না-এসব দেখার মানুষেরও যেন কমতি নেই। স্টেডিয়াম পরিছন্ন রাখার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মীদের যেন সজাগ দৃষ্টি। রোববার যে এখানে পা পড়বে এই বিশ্বকাপের সেরা দুই দলের খেলোয়াড়দের। এই স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাসে যারা ফুটবলের ফুল ফোটাবেন।

আসবেন প্রায় ৮০ হাজার ফুটবলপ্রেমী। আসবেন বিশ্ব ফুটবলের বড় কর্মকর্তা ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো, থাকবেন বিশ্বের বৃহত্তর এ দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এমন একটি দিনের প্রস্তুতির কোনো খামতিতো রাখলে কী চলে?

যেখানে শুরু হয়েছিল বিশ্বকাপ, সেখানেই শেষ হচ্ছে। মাঝে কেটে গেছে এক মাস। রাশিয়ার ১১ শহরের ১২ স্টেডিয়ামে নানা ঘটনা ও নাটকীয়তা শেষ করে বিশ্বকাপ এখন শেষ জায়গায় দাঁড়িয়ে। আনন্দ-উৎসব, হাসি-কান্নার বিশ্বকাপের পর্দা নামানোর প্রস্তুতি চলছে। ১৪ জুনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মতো সমাপনীতেও থাকছে জাঁকজমক আনুষ্ঠানিকতা। শুক্রবার সন্ধ্যায় মূল ভেন্যুতে হয়ে গেলো সমাপনী অনুষ্ঠানের মহড়া। আধাঘণ্টার সমাপনী অনুষ্ঠান দিয়ে কিভাবে মানুষের মনে দাগ কাটা যায় তার সব প্রস্তুতিই এখন সম্পন্ন।

তবে সব কিছু ছাপিয়ে আলোচনা এখন ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া। লুঝনিকি কী নতুন চ্যাম্পিয়ন উপহার দেবে বিশ্বকে। ক্রোয়েশিয়া কি পারবে রূপকথার শেষটা রাঙাতে? নাকি দ্বিতীয়বারের মতো ট্রফি নিয়ে যাবে ফরাসিরা? দুই দলের কোচ শনিবার সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের সেরাটা দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার প্রত্যাশা করে গেলেন। প্রতিপক্ষের প্রতি সম্মান রেখে ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশম যেমন বললেন,‘ফাইনাল মানেই ভিন্ন কিছু। আমার ছেলেরা ফাইনাল জেতার সব চেষ্টাই করবে।’

jagonews24

ক্রোয়েশিয়ার জ্লাতকো দালিচও বললেন,‘ফ্রান্স অনেক ভালো দল, শক্তিশালী দল। তারুণ্যে ঠাসা দলটিকে হারানো সহজ নয়। তবে আমরা এ পর্যন্ত এসে খালি হাতে ফিরতে চাই না। ছেলেদের প্রতিজ্ঞা আছে। তারা ফাইনালযুদ্ধ জিতেই ঘরে ফিরতে প্রতিশ্রুত।’

দুই কোচের কথায়ই একটা বিষয় পরিস্কার ছিল- দারুণ একটা ফাইনাল হবে। কোনো দলই ছেড়ে কথা বলবে না। ৯০ মিনিট, ১২০ মিনিট কিংবা টাইব্রেকার- সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েই রোববার ফাইনালমঞ্চে নামবে দুই দল।

শেষ হসি কে হাসবে তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে ফুটবল বিশ্বকাপে। গ্রুপ পর্ব, দ্বিতীয় পর্ব, কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালে নিজেদের সেরাটা দিয়েই এখন নাটকের শেষ দৃশ্যে ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া। পর্দার আড়ালে লুঝনিকি হয়তো কোন রহস্য লুকিয়ে রেখেছে।

২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সকার সিটি নতুন চ্যাম্পিয়ন উপহার দিয়েছিল বিশ্বকাপকে। এবার রাশিয়ার লুঝনিকি কী সে পথেই হাটবে? কী লিখে রেখেছে সেটা লুঝনিকি স্টেডিয়ামই জানে। সব রহস্য যে এখন রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী এ স্টেডিয়ামেই লুকিয়ে।

আরআই/আইএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।