রাশিয়ানদের আকিনফিভ বন্দনা
মস্কো, সেন্ট পিটার্সবার্গ, কাজান, সামারা- রাশিয়ার এ শহরগুলো ঘুরে আগে কখনো চোখে পড়েনি এমন দৃশ্য। বিশ্বকাপ কাভার করতে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে প্রথম পা রেখে দেখেছিলাম নিজেদের দল নিয়ে স্বাগতিক মানুষের প্রত্যাশা নেই, আলোচনা নেই। এমন কী কোথাও দেশটির কোনো পতাকাও উড়তে দেখা যায়নি তখন। কিছু ফুটবলারদের ছবি দেখা গেছে বিভিন্ন কোম্পানীর বিজ্ঞাপন বিলবোর্ডে। কিন্তু সামারা থেকে মস্কো ফিরে কিছুটা পরিবর্তনই লক্ষ্য করা গেলো দেশটির রাজধানী শহরে।
রাস্তাঘাটে, বাস-মেট্রোতে এখন নিজেদের ফুটবল নিয়ে আলোচনা শোনা যায় রাশিয়ানদের মধ্যে। শহরের বুলভার রোকসোভস্কগো নামক মেট্রো স্টেশনের পাশে একটি বাড়ীর ছাদে উড়তে দেখা গেলো রাশিয়ার পতাকা। পাশেই ইগোর আকিনফিভের একটি ছবি টাঙ্গানো। বিশ্বকাপ নিয়ে যারা খোঁজখবর রাখেন তারা নিশ্চয় বুঝে গেঝেন এই ইগোর আকিনফিভটা কে? ৩২ বছরের এ যুবক যে এখন রাশিয়ানদের নতুন হিরো। স্বাগতিকদের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে তোলার অন্যতম নায়ক এ গোলরক্ষক।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে এক জরিপে দেখা গিয়েছিল রাশিয়ান ৬ ভাগ মানুষও মনে করেনি তাদের দল বিশ্বকাপ জিততে পারবে। এমন কী কোন জেতা এবং গ্রুপ পর্ব টপকানো নিয়ে বাজি ধরা রাশিয়ানের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। স্বাগতিক দেশের সেই মানুষদের অনেকেই এখন দিন-রাত ‘রাশিয়া চ্যাম্পিয়ন, রাশিয়া চ্যাম্পিয়ন’ বলে চিল্লাচ্ছে। এখন অনেক রাশিয়ানদেরই ধারণা তাদের দল বিশ্বকাপ জিততেও পারবে।
মেট্রোতে সহযাত্রী নাদিয়া সারানোভভ নামের এক যুবতী হাতের মোবাইলে দেখছিলেন রাশিয়া-স্পেন ম্যাচের টাইব্রেকার পর্ব। প্রতিটি শট হওয়ার পর তার শারীরিক অঙ্গভঙ্গী যেন বলছিল, লাইভ ম্যাচ দেখছেন। আগ্রহ নিয়ে ম্যাচ সম্পর্কে জানতেই চাইলেই তিনি কয়েকবার দেখালেন গোলরক্ষক আকিনফিভের অসাধারণ সেভ দুটি। কতদূর যাবে রাশিয়া? প্রশ্নের উত্তর দিলেন তিনি একটি যুক্তি দিয়ে ‘স্পেনকে হারাতে পারলে রাশিয়া কেন ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে জিতবে না?’
এই গোলরক্ষক সম্পর্কে কিছু জানতেন আগে? এ প্রশ্নের সরাসরি জবাব আসলো ‘না’। আগে-পরে ইগোর আকিনফিভকে কেউ না চিনলে, না জানলেও এখন রাশিয়ানদের মুখেমুখে তার নাম। মস্কোর লেনিনস্কি জেলার ভিদনোয়ে নামের ছোট্ট শহরে ৩২ বছর আগে জন্ম নেয়া ইগোর আকিনফিভ ঘরোয়া ফুটবলে দূর্দান্ত নৈপূন্য দিয়ে আগেই নিজেকে জিনিয়েছেন। এবার নিজেকে নায়ক বনে নিয়ে গেলেন দেশের জার্সি গায়ে।
৬ ফুট ১ ইঞ্চি লম্বা এ গোলরক্ষকের পুরো নাম ইগোর ভ্লাদিমিরবিচ আকিনফিভ। ক্লাব ক্যারিয়ারে তো এক জায়গায়ই নাড়ি পুতেছেন। পিএফসি সেন্ট্রাল স্পোর্টস ক্লাব অব মস্কো আর্মির হয়ে পেশাদার ফুটবল শুরু করেছেন ১৯৯১ সালে। বয়স যখন ৪ বছর তখন তার বাবা সিএসকেএ স্পোর্টস স্কুলে পাঠিয়ে দেন। ১৬ বছর বয়সে পেনাল্টি ঠেকিয়ে এবং পোস্টের নিচে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে সবার দৃষ্টি কেড়েছিলেন-সামারার এফসি কিরিলিয়া সভেতভের বিরুদ্ধে তার দলকে ২-০ গোলে বিজয়ী করায় বড় ভূমিকা রেখে প্রথম নজর কেড়েছিলেন ঘরোয়া ফুটবলে। রাশিয়ান প্রিমিয়ার লিগে ২০১২/১৩ মৌসুমে সেরা খেলোয়াড়ও হয়েছিলেন এ গোলরক্ষক।
৭ জুলাই সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে রাশিয়া মুখোমুখি হবে ক্রোয়েশিয়ার। রাশিয়ানদের প্রত্যাশা সোচিতে তাদের ফুটবলবীররা ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে আবার ফিরবে মস্কোর লুঝনিকিতে, ১১ জুলাই সেমিফাইনালও খেলবে। আকিনফিভ ১২ বছর ধরে খেলছেন জাতীয় দলে। রাশিয়ার জার্সি গায়ে ১১০ টি ম্যাচও খেলা হয়েছে তার। অভিজ্ঞ এ গোলরক্ষক রাশিয়ানদের প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুন। মানুষের মুখেমুখে এবং স্থানীয় মিডিয়ায় যে আকিনফিভ বন্দনাই চলছে।
আরআই/এসএএস/এমএস