কঠিন পরীক্ষার সামনে চ্যাম্পিয়ন জার্মানি

স্পোর্টস ডেস্ক
স্পোর্টস ডেস্ক স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:৩২ পিএম, ২৩ জুন ২০১৮

জার্মানি বিশ্বকাপ খেলেই সেমিফাইনাল থেকে। এটা যেন স্বতসিদ্ধ সত্য কথা। সর্বশেষ জার্মানি কবে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল? চাইলে রেকর্ড বই ঘেঁটে দেখতে পারেন। দুটি বিশ্বকাপ খেলা হয়নি তাদের। একবারমাত্র বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল তারা। তাও ৮০ বছর আগে, ১৯৩৮ সালে। বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় অংশগ্রহণে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল তারা।

ইতিহাস ঘাঁটাঘাঁটির মোটেও প্রয়োজন ছিল না। জার্মানি অন্তত সেই প্রয়োজন হতে দেওয়ার মতো কাজ কখনোই করে না। কিন্তু এবার কেন প্রয়োজন হলো? খুবই পরিষ্কার, প্রথম ম্যাচেই মেক্সিকোর কাছে অঘটনের শিকার হতে হলো। হারতে হলো ১-০ গোলে। ইতিহাস বলে যাচ্ছে, গত কয়েক বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকেই চ্যাম্পিয়নদের বিদায় নেয়ার যে রেওয়াজ তৈরি হয়েছে, সেটা যদি এবারও অব্যাহত থাকে তাহলে তো ইতিহাসই বদলে যাওয়ার জোগাড় হয়েছে।

বিশ্বকাপ শুরুর আগে ফেবারিটদের তালিকায় সবার শীর্ষে রাখা হয়েছিল জার্মানিকেই। এই দলটিই টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের অন্যতম দাবিদার। ব্রাজিল-ইতালির সঙ্গে নাম লেখানো তাদেরই মানায় কেবল; কিন্তু মেক্সিকো এভাবে অঘটনের জন্ম দেবে, কে তা ভাবতে পেরেছিল?

প্রথম ম্যাচে পরাজয় মানে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায়ের শঙ্কা। সেই শঙ্কা কাটিয়ে ওঠার সবচেয়ে বড় সুযোগ আজ জার্মানির সামনে। প্রতিপক্ষ সুইডেন। যারা নিজেদের প্রথম ম্যাচেই দক্ষিণ কোরিয়াকে হারিয়ে এগিয়ে রয়েছে। জার্মানিকে আজ কোনোভাবে হারিয়ে আরও একটা চমক দিতে পারলে, দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত সুইডিসদের। সে লক্ষ্যেই আজ মাঠে নামবে সুইডেন।

Germany

মেক্সিকোর কাছে হারার পর একেবারে ক্লোজ ডোরে চলে যায় জার্মানি। সম্ভবত, নিজেদের সর্বোচ্চ প্রস্তুত করার কাজ চলে তাদের। সোচির ফিশ্ট স্টেডিয়ামে মাঠে নামার আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে যখন কোচ জোয়াকিম লো এলেন, তখন দেখাগেলো তার মাথার চুলগুলো বাদামি আকার ধারণ করেছে। বোঝাই যাচ্ছিল, আগের কয়েকদিনে টানা পরিশ্রমের কারণে। মাইক্রোফোনের সামনে এসেই বললেন, ‘আমি নিশ্চিত, আগামীকাল (আজ, শনিবার) একটা প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে।’ কী সেই প্রতিক্রিয়া? সুইডেনই সেটা সবচেয়ে বেশি টের পাবে।

ক্রোয়েশিয়ার কাছে আর্জেন্টিনার হারেপর পর ব্রাজিলের প্রথম ম্যাচ, জার্মানির প্রথম ম্যাচ, স্পেনের দুই ম্যাচ- এগুলো দেখে সবারই মনে হচ্ছিল, ফেবারিট দলগুলো সেই দাপট কোথায়? ফুটবল এখন এতটাই ট্যাকটিক্যাল, এতটাই প্ল্যান নির্ভর যে, বড় দলগুলোর সঙ্গে সমানে সমানে লড়ে যাচ্ছে ছোট দলগুলো।

মেক্সিকো, ক্রোয়েশিয়া, সুইডেন- এ ধরনের কিছু দল থাকেই যাদের ফেবারিট ধরা হয় না; কিন্তু দল হিসেবে খেললে যে কোনও প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে দিতে পারে। জার্মানির দুর্ভাগ্য, মেক্সিকোর বিরুদ্ধে হারার পরের ম্যাচেই পড়ছে সুইডেনের সামনে। জার্মানদের জন্য শঙ্কা এখানেই। মেসিদের মতোই না হাল হয় মুলারদের!

সুইডেন জার্মানির তুলনায় কতটা শক্তিশালী? জার্মানি ফিফা র্যাংকিংয়ে ১ নম্বরে। আর সুইডেন রয়েছে ২৩ নম্বরে। শক্তির বিচারে কেউ কেউ বলবে, এই সুইডেন কতটাই আ ভয়ংকর? জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ নেই; কিন্তু এই সুইডেনই বাছাই পর্বে প্লে-অফে ইতালিকে হারিয়ে বিশ্বকাপে এসেছে। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে তারাই ফ্রান্সকে হারিয়েছিল। সুতরাং, সুইডেনের বিপক্ষে ম্যাচটি জার্মানির কাছে মরণ-বাঁচনেরই হতে চলছে। সত্যিকারের পরীক্ষার সামনেই জোয়াকিম লো’র শিষ্যরা।

Germany

আগের জার্মানি হলে এই দলটা নিয়ে আতঙ্ক থাকতো না। জার্মানিকে আগে চেনা যেত তাদের লড়াকু মানসিকতার জন্য। শেষ বাঁশি বাজা পর্যন্ত লড়ে যেতো। ২ গোল হজম করে ফেললেও ফিরে আসার আপ্রাণ চেষ্টা করে যেত; কিন্তু মেক্সিকোর বিপক্ষে সেগুলোর ছিটেফোটাও দেখা যায়নি। এর একটা বড় কারণ, দলটার মধ্যে নেতৃস্থানীয় কোনো ফুটবলার নেই। ফিলিপ লাম কিংবা বাস্তেই শোয়েইনস্টাইগারদের অভাব টের পাওয়া যাচ্ছে বেশ।

থমাস মুলার সিনিয়র হয়েছে; কিন্তু লিডার হতে পারেনি। টনি ক্রুসকে মেক্সিকোর বিপক্ষে নিজের খেলা খেলতে দেখা যায়নি। ওজিলকে তো খুঁজেই পাওয়া যায়নি। নুয়্যার অধিনায়ক হতে পারেন; কিন্তু আউটফিল্ডে নেতা না থাকলে একটা দলের পক্ষে সত্যিকারের ‘দল’ হয়ে ওঠা খুব কঠিন। ডিফেন্সেও ম্যাটস হামেলস বা বোয়াটেংরা দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারছে না।

মেক্সিকো অনেকটাই লাতিন ঘরানার ফুটবল খেলে। সুইডেন ইউরোপের। যারা নিজেদের ডিফেন্স ধরে রেখেই আক্রমণে যায়। কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর ফুটবলই খেলবে হয়তো তারা। ভালো ডিফেন্ডারও আছে। সব মিলিয়ে জার্মানির জন্য বেশ বড় পরীক্ষা অপেক্ষা করছে ফিশ্ট স্টেডিয়ামে।

এছাড়া সুইডেন প্রথম ম্যাচ জয় করেছে কোরিয়ার বিপক্ষে। এই ম্যাচ ড্র করতে পারলেও তারা ভালো জায়গায় থাকবে। অনেকটাই খোলা মনে খেলতে পারবে সুইডিশরা। জার্মানরা পুরোনো লড়াকু মেজাজে ফিরতে না পারলে চ্যাম্পিয়নদের জন্য খুব খারাপ ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করে থাকবে।

আইএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।