সাম্পাওলিকে আর কোচ দেখতে চান না মেসিরা!
বিশ্বকাপ শুরুর আগেই আর্জেন্টিনার এই দলটি নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তী ফুটবলার দিয়েগো ম্যারাডোনা। তিনি বলেছিলেন, ‘গ্রুপ পর্বই পার হতে পারবে না এবারের আর্জেন্টিনা।’ ম্যারাডোনা-পেলে অনেক বড় মাপের ফুটবলার। শতাব্দীর সেরা ফুটবলার হিসেবেও গণ্য করা হয়। তবে, মাঝে মাঝে কিছু আলগা কথা বলে হাসির পাত্রও হয় যান তারা। রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরুর আগে মেসিদের নিয়ে ম্যারাডোনার এই মন্তব্যকে অনেকেই তেমন ভেবে নিয়েছিলেন।
কিন্তু অভিজ্ঞতারও তো একটা দাম আছে। ফুটবলার হিসেবে সফল ছিলেন। কোচ হিসেবে হয়তো তেমন সফল নন। তবুও তো ২০১০ বিশ্বকাপে দলকে ম্যারাডোনা কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত তুলে দিয়েছিলেন। তিনি হয়তো অভিজ্ঞতার আলোকেই কথা বলেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যে ম্যারাডোনার কথা অক্ষরে অক্ষরে ফলে যাবে, সেটাই বা কে ভাবতে পেরেছিল!
যদিও আর্জেন্টিনার সামনে এখনও সুযোগ আছে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার। হয়তো বা গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়াকে হারিয়ে এবং অন্যসব সমীকরণ নিজেদের পক্ষে নিয়ে আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠবেও। তবুও, ক্রোয়েশিয়ার কাছে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত হওয়া এবং আইসল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করার পর এই আর্জেন্টিনাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন না খোদ লিওনেল মেসিও। দিয়েগো ম্যারডোনা তো না’ই। তার কথাই শেষ পর্যন্ত ফলে যাচ্ছে।
কেন বিশ্বকাপের আগে ম্যারাডোনা তেমন মন্তব্য করেছিলেন? ক্রোয়েশিয়ার কাছে হারের পর সে কথার গুড়ার্থ খোঁজার শুরু। এডগার্ডো বাউজাকে বাদ দিয়ে হোর্হে সাম্পাওলিকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়াটা মোটেও পছন্দ ছিল না ম্যারাডোনার। প্রকাশ্যে তিনি সাম্পাওলির সমালোচনা করেছেন কয়েকবার। তারওপর, বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে আর্জেন্টিনার ধুঁকতে থাকা, স্পেনের কাছে প্রীতি ম্যাচে ৬ গোল হজম করা, সাম্পাওলির দল বাছাই এবং বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি ম্যাচের অপ্রতুলতার বিষয়গুলোই চিন্তায় এসেছে ম্যারাডোনার। এ কারণেই তিনি আগাম মন্তব্য করেছিলেন।
যে সমস্যাগুলো ছিল, সেগুলো কাটিয়ে উঠতে তো পারেনই নি সাম্পাওলি, সঙ্গে সমস্যাগুলোকে আরও গভীর করে তুলেছেন। আইসল্যান্ডের বিপক্ষে তার একাদশ সাজানো নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। আশা ছিল, হয়তো বা ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে সেই ভুলগুলো সামলে তিনি হয়তো একটি ভারসাম্যপূর্ণ দল তৈরি করবেন।
কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগেই দল গঠন করা নিয়ে নাকি আর্জেন্টিনা দলের অভ্যন্তরেই কোন্দল দানা বেধে ওঠে। কোচের কোনো সিদ্ধান্তই খেলোয়াড়দের পছন্দ হচ্ছিল না। সাম্পাওলি টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গেও কোনো আলাপ আলোচনা কিংবা সিনিয়র খেলোয়াড়দের কোনো মতামতেরই তোয়াক্কা করেননি। তিনি নিজের পছন্দেই একাদশ তৈরি করেন।
আর্জেন্টিনার বিভিন্ন মিডিয়ার খবর, মাঠে নামার আগেই কোচের সঙ্গে এ নিয়ে দলের অধিনায়ক এবং সিনিয়র ফুটবলার মেসির সঙ্গে একচোট হয়ে গিয়েছিল সাম্পাওলির। ক্রোয়াটদের বিপক্ষে একাদশ মোটেও পছন্দ হয়নি মেসির। এ কারণে, মাঠে নামার পর আর্জেন্টিনার জাতীয় সঙ্গীত যখন গাওয়া হচ্ছিল, তখন দেখা গিয়েছিল মেসির কপালে দুঃশ্চিন্তার ছাপ। হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছেন তিনি।
আর্জেন্টিনার জনপ্রিয় টিওয়াইসি স্পোর্টস জানিয়েছে, ম্যাচের পর পরই আর্জেন্টিনা দলের খেলোয়াড়রা একত্র হয়ে সাম্পাওলির বিপক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোচকে তারা বলে দিয়েছে আর্জেন্টিনা দল থেকে পদত্যাগ করার জন্য। এমনকি নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের সময়ও মেসিরা আর চান না সাম্পাওলি কোচের পদে থাকুক। এমনকি হোর্হে বুরুশাগাকে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনা দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করার জন্যও খেলোয়াড়দের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।’
তবে টিওয়াইসি স্পোর্টসের আরেকটি সংবাদে বলা হয়েছে, ম্যাচের পর কোচের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি খেলোয়াড়রা। এমনকি নিয়মিত যে টিম মিটিং হয়, সেগুলোরও কোনোটাই হয়নি। খেলোয়াড়রা সোজা গিয়ে টিম বাসে উঠে চলে যান হোটেলে। সেখান থেকে চলে আসেন ব্রোনিতসিতে।
আইএইচএস/পিআর