মামলার আসামি সেনেগালের জয়ের নায়ক!
বিশ্বকাপে সেনেগাল মানেই যেন একরাশ মুগ্ধতা। ২০০২ সালে প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে এসে তারা হারিয়ে দিয়েছিলো তখনকার ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে। তবে তাদের চমক সে পর্যন্তই থেমে থাকেনি। শেষ অব্দি কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিলো সেনেগালিজরা।
১৬ বছর পর আবার বিশ্বকাপ খেলতে এসে সে চমকের ধারা অব্যাহত রাখলো সেনেগাল। রাশিয়া বিশ্বকাপের নিজেদের প্রথম ম্যাচেই পোল্যান্ডকে হারিয়ে দিলো ২-১ গোলে।
তবে মঙ্গলবারে সেনেগালের জয়ের নায়ক ২৩ বছর বয়সী এমবায়ে নিয়াং এর একটি বিতর্কিত অতীত রয়েছে। অনেক অপরাধের আসামী এই নিয়াং অতীতে বিভিন্ন কাজের জন্যই সমালোচিত ও শাস্তি পেয়েছেন। কি ছিলো তার সেই বিতর্কিত অতীতে?
২০১২ সালে কিশোর নিয়াংকে পুলিশ আটক করে লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর জন্য। সে সময়ে তার বয়স এতোই কম ছিলো যে তার লাইসেন্স করার বয়সও তখন হয়নি। তবে শেষ পর্যন্ত পুলিশ তাকে ছেড়ে দিয়েছিলো। এভাবেই তার অপকর্মের সূচনা।
২০১৪ সালে আরো বড় দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসেন নিয়াং। তখন তিনি তার ফেরারি গাড়িটি নিয়ে মপলিয়ের রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটান। তার সেই ঘটানো সড়ক দুর্ঘটনায় অন্যান্য গাড়িও আক্রান্ত হয়েছিলো। তবে সৌভাগ্যজনকভাবে শারীরিকভাবে কেউই আঘাতপ্রাপ্ত হয়নি। আশ্চর্যের ব্যাপার যে তখনো নিয়াংয়ের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিলো না।
সেই ঘটনার পর নিয়াংকে আঠারো মাসের জেল দেয়া হয়। কিন্তু তখন সামাজিক কাজকর্ম করে জেলে যাওয়ার হাত থেকে বেঁচে যান তিনি। ২০১৬ সালে আবারো তিনি তার ফেরারি নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন এবং দুই বছর আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটান। তবে সেবারের দুর্ঘটনায় অন্য কারো গাড়ি সংযুক্ত ছিলো না। তবে সেবার নিজের কাঁধে চোট পান এই সেনেগালিজ ফুটবলার।
এখানেই বিতর্কের শেষ নয় নিয়াংয়ের। বাবা-মা সেনেগালিজ হলেও নিয়াং এর জন্ম ফ্রান্সে। তাই বয়সভিত্তিক দলগুলোতে ফ্রান্সের হয়েই খেলে আসছিলেন নিয়াং। অবশেষে যখন অনূর্ধ্ব-২১ পর্যায়ে আসলেন তিনি তখন ফ্রান্সের হয়েই খেলার সিদ্ধান্ত নিলেন পরিবারের সাথে আলোচনা করে।
এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিলো। বিপত্তিটা ঘটলো যখন আবার ফ্রান্স থেকে সেনেগালের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশম তাকে দলে না ডাকায় সেনেগালের হয়ে গত বছর অভিষেক ঘটান তিনি। আর এজন্য প্রচুর সমালোচনার শিকারও হতে হয়েছে তাকে।
সব সমালোচনা উপেক্ষা করে অবশেষে সেনেগালের বিশ্বকাপ দলে জায়গা হয়েছে তার। সেনেগালের বিশ্বকাপ প্রত্যাবর্তন ম্যাচে গোল করে ম্যাচটি স্মরণীয়ও করে রেখেছেন এ সেনেগাল ফুটবলার। টুর্ণামেন্টের বাকিটা সময় সেনেগালিজদের মুখে হাসি রাখতে পারলে হয়তো জীবনের উলটো পিঠটাও দেখে ফেলবেন এমবায়ে নিয়াং।
ডিকেটি/এসএএস/পিআর