হ্যারি কেইনের জোড়া গোলে অঘটন এড়াল ইংল্যান্ড
ফুটবল এমনই। শেষ বাঁশি না বাজা পর্যন্ত কোনো কিছুই বলা যায় না। যেমনটা বলা গেলো না ইংল্যান্ড আর তিউনিসিয়া ম্যাচে। ভলগোগ্রাদ এরেনায় তিউনিসিয়ার বিপক্ষে যখন ১-১ গোলে ড্র করে একটি নিশ্চিত অঘটনের মুখোমুখি ইংল্যান্ড, তখনই দলটির ত্রাতা হয়ে আবির্ভূত হলেন অধিনায়ক হ্যারি কেইন।
ইনজুরি সময়ের প্রথম মিনিটেই ওঁতপেতে থেকে দারুণ এক হেডে ইংল্যান্ডকে জয় উপহার দিলেন তিনি। সে সঙ্গে অসাধারণ খেলেও একটি পয়েণ্ট না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়তে হলো আফ্রিকান দেশ তিউনিসিয়াকে।
রাশিয়া বিশ্বকাপ যেভাবে একের পর এক ফেবারিটদের মৃত্যুকুপে পরিণত হচ্ছিল, তাতে ইংল্যান্ডেরও অঘটনের মুখোমুখি হওয়াটাও প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ম্যচের একেবারে শেষ মুহূর্তে পার্থক্যটা গড়ে দিলেন হ্যারি কেইন। টটেনহ্যাম হটস্পারের হয়ে যেভাবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে একের পর এক গোল করে যান, ঠিক একইভাবে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে জোড়া গোল করে বসলেন তিনি। তার এই জোড়া গোলেই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়লো ইংলিশরা। প্রথমার্ধে দু’দলের স্কোর ছিল ১-১ গোলে ড্র।
নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা শেষ। চতুর্থ রেফারি ডাগআউটের সামনে থেকে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন ইনজুরি সময় ৪ মিনিট। এ সময়ই কর্ণার কিক পেয়ে যায় ইংল্যান্ড। কর্ণার কিক নেন হ্যারি ম্যাগুইরে। ডান পাশ থেকে নেয়া তার অসাধারণ শটটি ভেসে আসে তিউনিসিয়ার গোলমুখে।
কেইন দাঁড়িয়েছিলেন পোস্টের একেবারে বামপ্রান্তে। বল প্রথমে জটলার ভেতর থেকে তিউনিসিয়ার এক ডিফেন্ডারের মাথায় লেগে চলে আসে বাম প্রান্তে। খুব ক্লোজ রেঞ্জ থেকে মাথা ঘুরিয়ে হেডটা নেন কেইন। সঙ্গে সঙ্গেই বল জড়িয়ে যায় তিউনিসিয়ার জালে। বিন মোস্তফা পাশে থাকলেও কেইনকে বাধা দিতে পারেননি।
এর আগে হ্যারি কেইনের গোলে ম্যাচের ১১ মিনিটেই এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। কিন্তু ৩৫ মিনিটে কাইল ওয়াকার বক্সের মধ্যে ফাউল করে বসলে রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। স্পট কিক থেকে গোল করে তিউনিসিয়াকে সমতায় ফেরান ফেরজানি সাসি।
শুরু থেকেই ফেবারিটের মত খেলতে শুরু করে ইংল্যান্ড। হেসে লিঙ্গার্ড, রাহিম স্টার্লিং, হ্যারি কেইনরা তিউনিসিয়ার রক্ষণভাগে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। যার ধারাবাহিকতায় ১১তম মিনিটেই গোল আদায় করে নেয় ইংল্যান্ড।
অ্যাশলে ইয়াংয়ের ক্রস থেকে ভেসে আসা বলটি ছিল জন স্টোনসের উদ্দেশ্যে। দরুণ এক হেড নিয়েছিলেন তিনি। তিউনিসিয়ার গোলরক্ষক মোয়াজ হোসেন দারুণ এক সেভ করেন। কিন্তু ফিরতি বলটিতে গোল করতেই যেন একেবারে গোলমুখে ছিলেন হ্যারি কেন। ফিরতি বলটিতে আলতো টোকা দিতেই সেটি গিয়ে জড়িয়ে যায় তিউনিসিয়ার জালে।
গোল হজম করে তিউনিসিয়া সেই গোলটি হজম করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। ইংল্যান্ডের চেয়েও যেন আক্রমণের ধার বাড়িয়ে দেয়। ইংলিশদের কোণঠাসা করে তোলে পাল্টা আক্রমণে। ইংল্যান্ড যতই আক্রমণে বল নিয়ে উপরে উঠে আসুক না কেন, তিউনিসিয়ার ফুটবলাররা কাউন্টার অ্যাটাকে তটস্থ করে তোলে ইংল্যান্ডের রক্ষণকে।
শেষ পর্যন্ত ৩৫তম মিনিটে বক্সের মধ্যে ফখরুদ্দিন বিন ইউসুফকে ফাউল করে বসেন কাইল ওয়াকার। মূলতঃ হাত দিয়েই ফখরুদ্দিনকে আঘাত করেন ওয়াকার। রেফারি সঙ্গে সঙ্গেই পেনাল্টির বাঁশি বাজান। স্পট কিক নিতে আসেন ফেরজানি সাসি। তার বাম কোনে নেয়া শটটি ঠেকাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে হাতও লাগিয়েছিলেন জর্ডান পিকফোর্ড। কিন্তু ঠেকাতে পারেননি। গোল হয়ে যায়।
সমতায় ফেরার পর অবশ্য ইংল্যান্ড আক্রমণের ধার বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু গোল শোধ করতে পারেনি। ৪৪ মিনিটে প্রায় গোলই হয়ে গিয়েছিল। হেসে লিঙ্গার্ড তিউনিসিয়ার পরিবর্তিত গোলরক্ষক ফারুক বিন মুস্তফাক ফাঁকি দিয়ে নেটে বল পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু গড়িয়ে গড়িয়ে বলটি একেবারে ডান পাশের বার ঘেঁষে বাইরে চলে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর পর একচেটিয়া খেলতে থাকে ইংল্যান্ড। একের পর এক আক্রমণের পসরা সাজিয়ে বসে তারা। কিন্তু তিউনিসিয়ার রক্ষণ ভাঙা সম্ভব হচ্ছিল না তাদের। এ সময় পুরোপুরি প্যাকেট হয়ে যায় তিউনিসিয়া। ইংল্যান্ডের আক্রমণ ঠেকানোই যেন একমাত্র কাজ হয়ে দাঁড়ায় তাদের। রক্ষণ ভেঙে যাও বল গোলমুখে পৌঁছে যাচ্ছিল, সেখানে গোলরক্ষক ফারুক বিন মোস্তফা ঠেকিয়ে দিচ্ছিলেন সেটি; কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের আক্রমণের সয়লাব আর ঠেকাতে পারলো না তারা। কেইনের জোড়া গোল জিতিয়ে দিলো ইংল্যান্ডকে।
তিউনিসিয়া একাদশ : মোয়েজ হোসেন (২২) (গোলরক্ষক), ইয়াসিন মেরিয়াহ (৪), সিয়াম বিন ইউসুফ (২), আলি মালোল (১২), দাইলান ব্রুন (১১), ফেরজানি সাসি (১৩), ইলিয়াস এসখিরি (১৭), আনিস বদ্রি (৯), ফখরুদ্দিন বিন ইউসুফ (৮), নাইম স্লিতি (২৩), ওয়াহবি খাজরি (১০)।
ইংল্যান্ড একাদশ : জর্ডান পিকফোর্ড (১) (গোলরক্ষক), জন স্টোনস (৫), হ্যারি ম্যাগুইরে (৬), কাইল ওয়াকার (২), জর্দান হেন্ডারসন (৮), ডেলে আলি (২০), হেসে লিনগার্ড (৭), অ্যাশলে ইয়াং (১৮), কেইরান ট্রিপার (১২), রাহিম স্টার্লিং (১০), হ্যারি কেইন (৯) (অধিনায়ক)।
আইএইচএস/