বিরল রোগে আক্রান্ত ব্রাজিলের পরবর্তী ‘নেইমার’

স্পোর্টস ডেস্ক
স্পোর্টস ডেস্ক স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:১৩ এএম, ৩০ মে ২০১৮

ব্রাজিলের মার্কো এন্টোনিও, বেশির ভাগ মানুষই তাকে চেনে মারকুইনহো নামে। ইতিমধ্যেই পায়ের কারিশমা দেখিয়ে নজরে এসেছেন ফুটবল বিশ্বের সেরা সেরা ক্লাবগুলোর, যে কাতারে রয়েছে স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনাও। মাত্র ৬ বছর বয়স মারকুইনহোর, তবে এই বয়সেই ফুটবলে তার পায়ের জাদুতে মুগ্ধ শত শত মানুষ।

তবে ছোট্ট এই বালকের রয়েছে বিরল এক রোগ। যে রকমটা ছিল বর্তমান ফুটবল বিশ্ব শাসন করা লিওনেল মেসির। তবে রোগ একই পর্যায়ের না হলেও এটাও বিরলই ধরা চলে। 'ক্রোন' রোগে আক্রান্ত এই বিস্ময় বালক। যেটা কিনা শরীরের ওজন হঠাৎ করেই কমিয়ে দেয়।

মারকুইনহোর পরিবার মনে করছে, আরেকটা মেসি হওয়ার পথে তাদের মারকুইনহো। যদি এই দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসা করা সম্ভব হয় তবে মারকুইনহোর সব ধরণের ক্ষমতাই আছে সেরাদের সেরার কাতারে পৌঁছানোর। ইতিমধ্যেই তার ভিডিওগুলো ভাইরাল হয়ে গিয়েছে ইন্সটাগ্রাম , ইউটিউবসহ সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। অসম্ভব রকমের বল নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা, বলে শট নেওয়ার ক্ষিপ্রতা, মাঠে বল পায়ে বিভিন্ন স্কিল ইতিমধ্যেই আলোড়ন ফেলে দিয়েছে ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনেরিওতে।

মারকুইনহোর বাবা ফেলিপে ডে ফেরিতেস বলেন, 'ছোট বেলা থেকেই খেলোয়াড় হিসেবে ও দুর্দান্ত। আমি বিশ্বাস করি ও প্রকৃতি প্রদত্ত। এটা তার জন্য আনন্দের, তবে সে প্রতিযোগিতা করতেও ভালবাসে, আর কখনও সে কোন ম্যাচ হারতে চায় না। ছোট বেলা থেকেই ওর স্বপ্ন ছিল পেশাদার ফুটবলার হবে, এবং সে হবে। কেননা যখন তার বয়স যখন পাঁচ (৫) মাস, তখন থেকেই তার পায়ে বল।'

মার্কোর বল নিয়ে এই কারিকুরি প্রথমে নজরে আসে ঘরে তাকে নিয়ে বানানো এক ভিডিও দিয়ে। নিজের রুমের ভেতরে বল দিয়ে যে ভেল্কি দেখিয়েছেন, তাতে মুগ্ধ হয়ে ইন্সটাগ্রামে তার ওই ভিডিও ১২ মিলিয়ন বার দেখেন দর্শকরা।

marco

আর মার্কোর বলের সাথে এরকম সখ্যতা দেখে ইতিমধ্যেই ব্রাজিলিয়ান অনেক ফুটবলবোদ্ধা তাকে পরবর্তী নেইমার বলে আখ্যায়িত করছেন। বলে তার ছোঁয়া, কৌশল, পাস দেওয়ার সক্ষমতা আর ড্রিবলিং অনেকটাই নেইমারের মত। তাই ছোট্টও এই বালকের প্রশংসা করতে কেউ কার্পণ্য করছেন না।

তবে বিরল রোগটি নিয়ে ভীষণ চিন্তিত মার্কোর বাবা মা। তার মা মারিয়ানা নিকোলেত্তি বলেন, 'ওর জন্য আমরা অনেক বেশি চিন্তিত, যেটা ও বুঝতে পারেনা। এটা সত্যি অনেক অনেক কষ্টকর। চিকিৎসাটা অনেক কঠিন আর সে এতে মোটেও ভালো বোধ করেনা। এ রোগের কোনো আরোগ্য নেই, কিন্তু যেদিন থেকে ও হাঁটতে শিখেছে, সেদিন থেকেই ফুটবল ওর কাছে সব।'

নিজের ছেলের ফুটবল ভালবাসা সম্পর্কে মারিয়ানা আরও বলেন, 'যখন তার বয়স মাত্র তিন, তখন থেকেই সে পাঁচ বছরের ছেলেদের সাথে ফুটবল খেলতো। এমনকি আমরা যখন কোথাও জেতাম, তখনও তার পায়ে ফুটবল থাকত। সে ক্লাবে, মাঠে, বাড়ির উঠোনে সব সময় ফুটবল নিয়েই থাকতো। সে আমাদের সকল প্রত্যাশাকে ইতিমধ্যেই ছাড়িয়ে গিয়েছে। এন্টোনিও কখনও হাল ছেড়ে দেয় না, এমনকি তার খারাপ সময়েও না। সে দ্রুত ফিরে আসে, ও একজন যোদ্ধা, খাঁটি যোদ্ধা।'

marco

এরকম বিরল গ্রোথ হরমোনের সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে মেসি এখন ফুটবল বিশ্ব শাসন করে যাচ্ছে। আর এতেই আশার আলো খুঁজে পেয়েছেন এন্টোনিওর মা মারিয়ানা। বলছিলেন, 'যখন আমি মেসির কথা জানতে পারলাম, তখন আশা ফিরে পেয়েছি। এখন আমি মনে করি, পৃথিবীর কোনো রোগই তাকে বিশ্ব সেরা হতে আটকিয়ে রাখতে পারবে না।'

মার্কো সম্পর্কে তার কোচ এডসন ইয়োশিতার ভেমাও বিশ্বাস করেন, সামনে তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। তিনি বলেন, 'যখন মাঠে আপনি হাল ছেড়ে দিবেন মার্কো আপনাকে শক্তি যোগাবে। মাত্র ছয় বছর বয়সী অসুস্থ এক শিশু যখন মুখভরা হাসি নিয়ে মাঠে খেলতে আসবে, তা দেখলে সত্যিই আপনার মন জুড়িয়ে যাবে। আর এটাই ফুটবলের সৌন্দর্য!'

মেসিকে প্রাদপ্রদীপের আলোতে এনেছেন যেই লা মাসিয়া, সেই লা মাসিয়াই ইতিমধ্যে যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছে মার্কোর পরিবারের সাথে। গ্রোথ হরমোন সমস্যায় পড়ে ১৩ বছর বয়সেই যখন জীবন সঙ্কটে মেসি, তখনই নতুন জীবন পান এই লা মাসিয়াতে। তাই লা মাসিয়ার এই আগ্রহের কথা শুনে সবাই বিশ্বাস করা শুরু করে দিয়েছে যে, রোগকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে একদিন ঠিকই ফুটবল বিশ্ব শাসন করে বেড়াবে এই ওয়ান্ডার কিড!

এসএস/এমএমআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।