রিকশাচালক সাইফুলের আর্জেন্টিনার সমর্থক হওয়ার গল্প

রুশাদ রাসেল
রুশাদ রাসেল রুশাদ রাসেল , স্পোর্টস কন্ট্রিবিউটর
প্রকাশিত: ১০:১৯ পিএম, ২৬ মে ২০১৮

‘গ্রেটস্ট শো অন আর্থ’-খ্যাতি বহু আগেই পেয়ে গেছে। বিশ্বকাপ ফুটবল আসলেই সারা পৃথিবীর নানা বর্ণ, গোত্র, নানা পেশার মানুষ মেতে ওঠে বিশ্বকাপের উন্মদনায়। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের ধারে-কাছেও যেতে পারেনি। অদূর ভবিষ্যতে যাবে কিনা সেটাও খুব সন্দেহের ব্যাপার।

তবুও এদেশের মানুষের বিশ্বকাপ উন্মাদনার খবর জানে না পৃথিবীর এমন দেশ খুব কমই পাওয়া যাবে। বিশ্বকাপের সময়ও খুব সন্নিকটে। এরই মধ্যে নিজেদের পছন্দের দল নিয়ে তর্কাতর্কিতে মেতে উঠেছে ফুটবল অনুরাগী মানুষেরা। পেশায় রিক্সাচালক হলেও সাইফুলও তার পছন্দের দল নিয়ে তর্ক করেন, স্বপ্ন দেখেন তার পছন্দের দলটি বিশ্বকাপ জিতবে।

নাম সাইফুল। বয়স ৩২। গ্রামের বাড়ি পাবনা। পেশায় রিক্সাচালক। সারাদিন রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। কায়িক পরিশ্রমের কারণে রোজাও রাখতে পারছেন না। পাবনার এক অজপাড়া গাঁয়ে বেড়ে উঠলেও ফুটবলের উন্মাদনা ছোটবেলা থেকেই গ্রাস করেছে তাকে। প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপ দেখেন ২০০২ সালে। তখন অনেক ছোট। বাবার কাছ থেকে শুনেছিলেন ম্যারাডোনার কথা। সে থেকে আর্জেন্টিনার সমর্থক। বিশ্বকাপ আবারও দোরগোড়ায়। এ কারণে রিক্সার সামনে আর্জেন্টিনার পতাকার একটি ফেস্টুন লাগিয়ে রিক্সা চালান তিনি।

কথা হয় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। আর্জেন্টিনার সমর্থক কিনা জানতে চাইলেই বলে ওঠেন, ‘হ্যাঁ’।

ম্যারডোনাকে চেনেন? ‘কেন চিনবো না? অতো বড়ো খেলোয়াড়!’ মেসিকে চেনেন? ‘হ্যাঁ, তাকেও চিনি!’ আর্জেন্টিনার সমর্থক হলেন কীভাবে? ‘ছোটবেলায় আমরা সবাই একসাথে বসে টিভি দেখতাম। বাপের কাছেই শুনেছি আর্জেন্টিনার কথা’

তখন টিভি দেখার সুযোগ পেতেন? ‘আমাদের স্কুলে একটি মাঠ ছিল অনেক বড়। পুরো এক মাসের জন্য একটা টিভি ভাড়া করে আনতাম। ব্যাটারি ভাড়া করে আনতাম। ওইটা দিয়ে তারপর দেখতাম।’

ঢাকায় আসেন কবে? ‘২০০৫ সালে’ পড়ালেখা করেননি? রিক্সা চালানো শুরু করেন কবে থেকে? ‘গরীব তাই পড়ালেখা করা হয় নাই। ঢাকায় এসেই ২০০৬ সাল থেকে রিক্সা চালাই।’ আপনার বয়স বললেন ৩২ বছর। তাহলে তো একদম ছোট অবস্থাতেই রিক্সা চালানো শুরু করেছেন! ‘হ্যাঁ। বাড়ির অবস্থা ভালো ছিল না। তাই এসেই কাজ শুরু করে দেই।’

পরিবারে আর কে আছে? ছেলে-মেয়ে কতজন? ‘বউ আছে। আর এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। ওরা স্কুলে যায়।’ বর্তমানে থাকেন কোথায়? ‘হাজারীবাগে।’ সেখানে আপনার এলাকায় খেলা দেখেন? ‘হ্যাঁ। যেদিন আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে ওঠে ওইদিনও খেলা দেখছিলাম।’

আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে সুযোগ না পেলে, কাকে সাপোর্ট করতেন? খেলা দেখতেন? ‘খেলা দেখতাম। কিন্তু কাউরে সাপোর্ট করতাম না।’ বাং

বাংলাদেশের আর্জেন্টিনা ক্রেজটা স্বয়ং ম্যারাডোনাই এনে দিয়ে গেছেন। যার দেখানো পথেই হাঁটছেন লিওনেল মেসি। বাংলাদেশের আনাচে কানাচে এমন বহু সাইফুলরা আছে যারা কাজের ফাঁকেও আর্জেন্টিনা এবং মেসিকে সমর্থন দিতে ভুলে না। শত কষ্টের মাঝেও আর্জেন্টিনার খেলাটি তারা দেখে। আর্জেন্টিনার সামনে আরো একটি সুযোগ বিশ্বকাপ জয়ের। সাইফুলের মত শতকোটি মানুষ তাকিয়ে আছে মেসির আর্জেন্টিনার দিকে। বিশ্বাস করে, একদিন আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতবে।

আরআর/আইএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।