১৯৭৪ : টোটাল ফুটবল যুগের শুরু

ইমাম হোসাইন সোহেল
ইমাম হোসাইন সোহেল ইমাম হোসাইন সোহেল
প্রকাশিত: ০১:৫৭ পিএম, ২৩ মে ২০১৮

১৯৫০ থেকে ১৯৭০- এই দুই দশক যদি হয় ব্রাজিলিয়ান ছন্দময় ফুটবলের জয়জয়কার, তবে সত্তরের দশকের পরের যুগটা নেদারল্যান্ডসের টোটাল ফুটবলের। আমস্টারডামের আয়াক্স আর জার্মানির বায়ার্ন মিউনিখ এই সময়ে ফুটবলের টেকনিক্যাল দিকটাই পরিবর্তন করে দিয়েছিল। টোটাল ফুটবলের যুগ শুরু হলো এই সময় থেকেই।

তবে বিশ্বকাপে এর বাস্তব প্রয়োগ দেখালেন নেদারল্যান্ডন্সের ইয়োহান ক্রুয়েফ। তার সঙ্গে ছিলেন ন্যাসকেন্স, ক্রোল আর ফন হ্যানেজেমরা। ১৯৩৮ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের ৩৬ বছর পর ১৯৭৪ বিশ্বকাপে খেলতে এসেই ফুটবল বিশ্বে নতুন পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত টোটাল ফুটবলের দেশ নেদারল্যান্ডস।

jagonews24

পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলেও ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির কাছে হেরে শিরোপাবঞ্চিত থাকতে হয় ইয়োহান ক্রুয়েফের দলকে। ২-১ গোলে হল্যান্ডকে হারিয়ে ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের নেতৃত্বে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জিতে নেয় পশ্চিম জার্মানি।

জার্মানি যেন ১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপের পুনরাবৃত্তিই ঘটাল ১৯৭৪ সালে। ১৯৫৪ বিশ্বকাপে ফুটবল ইতিহাসে অন্যতম সেরা একটি দল হাঙ্গেরিকে হারিয়ে শিরোপা জিতে নিয়েছিল জার্মানরা। ২০ বছর পর আবারও ফুটবলের অন্যতম পরাশক্তি নেদারল্যান্ডসে হারিয়ে শিরোপা জিতল পশ্চিম জার্মানি। যদিও ওই আসরে স্বাগতিক ছিল পশ্চিম জার্মানিই।

রঙ্গিন টিভিতে বিশ্বকাপের সম্প্রচার শুরু হয় ১৯৭৪ জার্মানি থেকেই। সেবারই নতুন একটা নিয়ম চালু করা হয়। অংশগ্রহণকারী ১৬ দলকে ৪টি করে নিয়ে ৪ গ্রুপে ভাগ করে দেয়া হয়। রাউন্ড রবিন লিগ শেষে প্রতি গ্রুপের সেরা দুই দল উঠবে দ্বিতীয় রাউন্ডে। তবে দ্বিতীয় রাউন্ডে নকআউট পর্ব রাখা হয়নি এবার। দুই দল করে মোট আট দল উঠবে দ্বিতীয় রাউন্ডে এবং এই আট দলকে ভাগ করা হয় আবারও দুটি গ্রুপে। ওই দুই গ্রুপের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় আবারও রাউন্ড রবিন লিগ। পয়েন্টের ভিত্তিতে, সেরা দুই দলই খেলে ফাইনাল।

jagonews24

১৯৭০ সালের বিশ্বকাপসহ তিনবার শিরোপা জিতে জুলেরিমে ট্রফিটা ব্রাজিল চিরদিনের জন্য নিজেদের করে নিয়ে যাওয়ায় বিশ্বকাপের জন্য নতুন ট্রফি গড়ার প্রয়োজন দেখা দেয়। ‘ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি’ নাম দিয়ে ১৮ ক্যারেটের খাঁটি সোনায় গড়া হয় বর্তমান ট্রফিটি। ইতালীয় ভাস্কর সিলভিও গাজ্জানিগা ট্রফির ডিজাইন করেন। ১৯৭২ সালের ইউরোপিয়ান নেশন্স কাপ জয়ের পর মিডফিল্ডার গুন্টার নেটজারই বিশ্বকাপের নতুন ট্রফি প্রথমবারের মতো এনে দিলেন স্বাগতিক জার্মানিকে।

পেলে, গারিঞ্চা, গার্সন, তোস্তাওদের বিদায়ে এমনিতে ব্রাজিল ছিল অনেকটা দুর্বল। তার ওপর ইউরোপিয়ানদের শারীরিক শক্তির ফুটবলের কারণে চতুর্থ স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় ব্রাজিলকে।

১৯৭৪ বিশ্বকাপের জন্য বাছাই পর্বে অংশ নেয় ৯৮টি দেশ। তবে স্পেন, ইংল্যান্ড, হাঙ্গেরি, ফ্রান্স বাছাই পর্বই উতরাতে পারেনি সেবার। ওই বিশ্বকাপেই প্রথমবারের মতো খেলতে আসে পূর্ব জার্মানি, হাইতি, অস্ট্রেলিয়া এবং জায়ার। পূর্ব এবং পশ্চিম জার্মানি একই সঙ্গে খেলে কেবল এই বিশ্বকাপেই।

১৯৭০ সাল থেকে লাল কার্ড, হলুদ কার্ডের প্রচলন শুরু হলেও ১৯৭৪ সালে এসেই প্রথম লাল কার্ডের ব্যবহার হয়। চিলির কার্লোস কাসজেলি প্রথম লাল কার্ড দেখে মাঠ থেকে বহিষ্কার হন। তবে এই বিশ্বকাপের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল পূর্ব জার্মানির কাছে পশ্চিম জার্মানির ১-০ গোলে হার। রাজনৈতিক দিক দিয়েও ম্যাচটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ইউর্গেন স্পারওয়াসারের গোলে জয় পায় পূর্ব জার্মানি।

jagonews24

এ ঘটনার পর সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল ফাইনাল। মিউনিখের অলিম্পিয়া স্টেডিওনে অনুষ্ঠিত ফাইনালে মুখোমুখি ইয়োহান ক্রুয়েফের হল্যান্ড আর বেকেনবাওয়ারের পশ্চিম জার্মানি। ম্যাচের শুরু থেকেই টোটাল আক্রমণ শুরু হয় নেদারল্যান্ডসের। প্রথম মিনিটেই ইয়োহান ক্রুয়েফকে ডি বক্সের মধ্যে ফাউল করে বসেন উলি হোয়েনেস। ফলে রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজায়।

পেনাল্টি কিক নেন ইয়োহান ন্যাসকেন্স। ২য় মিনিটেই ন্যাসকেন্সের করা পেনাল্টি থেকে করা গোলে এগিয়ে গিয়েছিল নেদারল্যান্ডস। কিন্তু ২৬ মিনিটে ইংলিশ রেফারি জ্যাক টেলর বিতর্কিত পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দিলে পল ব্রেটনার সমতায় ফেরান জার্মানিকে। ৪৩ মিনিটে অসাধারণ এক গোল করে বসেন গার্ড মুলার। তার এই গোলটিই হয়ে রইল শিরোপা নির্ধারণী হিসেবে। ন্যাসকেন্সের গোলটি এখনও বিশ্বকাপের ফাইনালে সবচেয়ে দ্রততম গোল হিসেবে বিবেচিত।

ফিফার সাবেক প্রেসিডেন্ট হোয়াও হ্যাভেলাঞ্জ অভিযোগ করেন ১৯৬৬ এবং ১৯৭৪ বিশ্বকাপ ছিল আগে থেকে ফিক্স করা। যেখানে জিতেছে ইংল্যান্ড এবং জার্মানি।

আইএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।