আমার হৃদয় এখানে আজীবন থাকবে : ইনিয়েস্তা

স্পোর্টস ডেস্ক
স্পোর্টস ডেস্ক স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৫০ পিএম, ২১ মে ২০১৮

রোববার এ মৌসুমে নিজেদের শেষ লা লিগা ম্যাচে রিয়াল সোসিয়েদাদের মুখোমুখি হয় ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা। লিগ শিরোপা আগেই নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় আক্ষরিক অর্থে ম্যাচটির তেমন কোনো গুরুত্ব ছিলো না বার্সার কাছে। তবু এই ম্যাচটি বার্সার ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ এই ম্যাচটিই যে ছিলো বার্সার মহানায়ক আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার ব্লুগ্রানা জার্সি গায়ে শেষ ম্যাচ! সেই শৈশব থেকে ২২ টি বছর ন্যু ক্যাম্পে কাটিয়ে দেয়া স্প্যানিশ এই কিংবদন্তির বার্সার হয়ে শেষ ম্যাচ ছিলো এটিই। এ ম্যাচের মাধ্যমেই দীর্ঘ ২২ বছরের বার্সা ক্যারিয়ারের ইতি টানেন ইনিয়েস্তা।

ন্যু ক্যাম্পে বিদায়ের রাগিণী বেজেছিলো আগেই। তাই বার্সা সমর্থকেরাও তাদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই কিংবদন্তিকে বিদায় দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিলো। তাই পুরো মাঠ জুড়েই ‘গ্রাসিয়াস ইনিয়েস্তা’ ‘ইনফিনিটি ইনিয়েস্তা’ নামের ব্যনার এবং পোস্টারে ভরপুর ছিলো। ম্যাচের শুরুতে যখন ইনিয়েস্তা মাঠে প্রবেশ করেন, তখন মুহুর্মূহু করতালিতে ফেটে পড়ে চারদিক এবং তাঁকে 'গার্ড অফ অনার' দেন রিয়াল সোসিয়েদাদের খেলোয়াড়েরা। ইনিয়েস্তার বিদায়ী ম্যাচ রাঙিয়ে দেন তাঁরই উত্তরসূরি হিসেবে দলে আসা ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার ফিলিপে কৌতিনহো। ম্যাচের ৫৭ মিনিটে দূরপাল্লার এক শটে রিয়াল সোসিয়েদাদ গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন তিনি। কৌতিনহোর দেয়া একমাত্র গোলেই জয় পায় বার্সা।

jagonews24

তারপরই আসলো সেই মহেন্দ্রক্ষণ। ম্যাচের ৮২ মিনিটে পাকো আলকাসারকে যখন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার বদলি হিসেবে মাঠে নামানো হলো, তখনই আবার করতালিতে ফেটে পড়ে ন্যু ক্যাম্প। এদিকে ইনিয়েস্তা তখন নিজের ক্যাপ্টেন আর্মব্যান্ডটা মেসিকে পড়িয়ে মাঠ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। আর এর মাঝেই সতীর্থ, প্রতিপক্ষদের আলিঙ্গনে সিক্ত হতে থাকেন বার্সা ও স্প্যানিশ এই কিংবদন্তি।

ম্যাচের পর পুরো মাঠ স্তব্ধ হয়ে যায়। পুরো ম্যাচে ইনিয়েস্তার হয়ে স্লোগান দেয়া সমর্থকদের মাঝেও যেন নীরব কান্নার রোল পড়ে যায়। তখন যে ইনিয়েস্তার হাতে মাইক! তাঁর চোখের কোণেও পানি চিকচিক করছে তখন। মাইক হাতে নিয়ে ইনিয়েস্তা বলেন, ‘এই ২২ বছর ছিলো অবিশ্বাস্য ২২ বছর এবং এই ক্লাবের হয়ে খেলতে পারাটা ছিল ভীষণ সম্মানের। আমি আমার প্রতিটি সতীর্থ এবং সমর্থকরা যারা এখানে আছেন, তাদের ধন্যবাদ দিতে চাই। আমি ৩৪ বছর বয়সে এই ক্লাব ছাড়ছি কিন্তু আমি শুধু বলতে চাই আমার হৃদয় এখানে আজীবন থাকবে।’

jagonews24

এরপরই তাঁর সতীর্থরা অন্যান্য ফুটবল কিংবদন্তির বিদায়ের মতোই তাঁকে আকাশে ছুঁড়ে উল্লাস করে এবং সম্মান জানায় এবং তাঁর নাম ধরে চিৎকার করতে থাকে। এ সময় বার্সার কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দে বলেন, ‘আমি ভবিষ্যতে বলতে পারবো যে ইনিয়েস্তার শেষ ম্যাচে আমি বার্সেলোনার ম্যানেজার ছিলাম। সে এমন একজন যে আর কখনোই আসবে না। আমি মনে করি, এটি সবার জন্য একটি আবেগপূর্ণ রাত ছিলো। সে একজন কিংবদন্তি এবং সে বার্সার আদর্শের ঝান্ডাধারী।’

এরপর পরিবার এবং দীর্ঘদিনের সতীর্থ জাভি হার্নান্দেজের সাথে লা লিগা ট্রফি নিয়ে উদযাপনে মেতে উঠেন ইনিয়েস্তা। জাভির তো প্রথম দিনে সতীর্থের সঙ্গে দেখা হওয়ার দিনটিও মনে আছে। বলছিলেন, ‘আমার এখনো আন্দ্রেসকে প্রথম খেলতে দেখার দিনটা মনে আছে। আমি ছিলাম যুবদলে এবং সে ছিলো এক ধাপ নিচে। তখন কেউ আমাকে বলেছিলো, 'জাভি নামে একটি ছেলে আছে যে বিশ্বের সেরা হতে চলেছে।' যখন আমি তাঁকে খেলতে দেখলাম আমি নিজেকে বললাম, 'এই ছেলেটি আমার মতো খেলে না, যতোটা তারা বলে। সে আরো আলাদা। এই খেলোয়াড়টির আরো সৃজনশীলতা ছিলো, সে একজন ভালো ড্রিবলার ছিলো এবং ওয়াইড এলাকাগুলো থেকে সে ভালো ক্রস করতে পারতো।’

jagonews24

ডিকেটি/এমএমআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।