জার্মানির বিপক্ষে ব্রাজিলের ‘প্রতিশোধ’ মিশন!

স্পোর্টস ডেস্ক
স্পোর্টস ডেস্ক স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:২৬ পিএম, ২৬ মার্চ ২০১৮

‘রিভাঞ্চ’- শব্দটি প্রায়ই ব্রাজিলিয়ান মিডিয়ায় বিভিন্ন স্পোর্টিং আর্টিকেলে ব্যবহৃত হয়। এমনকি ব্রাজিলে ব্যবহৃত শব্দটার অর্থ, ফ্রান্সে ব্যবহৃত শব্দের অর্থের চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়। ফ্রান্সে শব্দটির ব্যবহার করা হয় মূলতঃ কোনো নীতি কিংবা আন্দোলনের ক্ষেত্রে, যেটা দিয়ে কোনো জাতি-গোষ্ঠি তাদের স্বাধীন ভূখণ্ড হারানোর পর ফিরে পাওয়ার জন্য করে থাকে।

পর্তুগিজ ভাষায় এই শব্দটার আক্ষরিক অর্থই হলো- রিভেঞ্জ। প্রতিশোধ। শব্দটা ব্রাজিলের সঙ্গে এতটাই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে যে, জার্মানির মুখোমুখি হওয়া মানেই এর চর্বিত-চর্বণ অনিবার্য।

এই যেমন মঙ্গলবার রাতে বার্লিনে যে স্বাগতিক জার্মানির মুখোমুখি হচ্ছে ব্রাজিল- এখানেও মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে, ‘প্রতিশোধ’ শব্দটা। এমনকি গত ১৬ মার্চ ইএসপিএন ব্রাজিল লিখেছিল, ‘জোয়াকিম লো ব্রাজিলের বিপক্ষে তার জার্মান স্কোয়াডের নামই দিয়েছেন সেলেকাও’স রিভাঞ্চ।’

তবে, বাইরে যতই ‘রিভাঞ্চ’ আর ‘রিভেঞ্জ’ বলে বলে মিডিয়া মুখে ফেনা তুলে ফেলুক না কেন, সেখানে যেন কোনো দৃষ্টি কিংবা কর্ণ নেই ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশন এবং জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের। বিশ্বকাপে যে ভাগ্য ব্রাজিলিয়ানদের নামের পাশে লিখে দিয়েছে জার্মানি, তিতের এই ব্রাজিলের কাছে জার্মানি হারলে মোটেও তা পরিবর্তন হবে না। সুতরাং, দু’দেশের ফুটবল ফেডারেশনের কাছে এই ম্যাচটির সঙ্গে ‘রিভাঞ্চ’-এর কোনো সম্পর্কই নেই।

এমনকি বার্লিনের এই ম্যাচে ফিলিপ কৌতিনহো, রবার্তো ফিরমিনো কিংবা উইলিয়ানরা যদি জার্মানিকে ৭-১ গোলেও হারিয়ে দেয়, তাতেও ‘রিভেঞ্জ’ হবে না। ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যেভাবে ব্রাজিল হেরেছিল তার কোনো প্রতিশোধ এই প্রীতি ম্যাচে তো নেয়ার প্রশ্নই আসে না। কারণটা হচ্ছে, তুলনা। কোথায় বিশ্বকাপ আর কোথায় প্রীতি ম্যাচ! ২০১৪ বিশ্বকাপের সেই পরাজয়ের গ্লানিকে তো কোনোভাবেই মুছে ফেলতে পারবে না ব্রাজিল। সেটা থেকে যাবে যুগ থেকে যুগান্তর।

চার বছর আগে বাস্তিয়ান শোয়েনস্টাইগার, টনি ক্রুস, ফিলিপ লামরা কোনোভাবে ধারণাই করতে পারেনি, মিনেইরোতে ব্রাজিলের বিপক্ষে তারা এত বড় ব্যবধানে জিততে পারবে। যদিও ড্রেসিং রুম থেকে তারা মাঠে নেমেছিল, অন্য একটি প্রতিশোধস্পৃহা বুকে নিয়ে। ১২ বছর আগে, তাদেরই পূর্বসূরিদের স্বপ্ন ভঙ্গ করে পঞ্চমবারেরমত বিশ্বকাপ ট্রফি ঘরে তুলে নিয়েছিল ব্রাজিল। ইয়োকোহামায় রোনালদো-রিভালদোদের হাতে ২-০ গোলে পরাজয় বরণ করেছিল অলিভার কান, দিয়েতমার হামান, জেন্স জার্মেইস, মিরোস্লাভ স্লোসারা। ১২ বছর পর সেই ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো থেকেই অলিভার কানের উত্তরসূরিরা বিশ্বকাপ ট্রফিটাকে উড়িয়ে নিয়ে গেলো জার্মানিতে। সেই উজ্জীবনি শক্তি নিয়েই এবার রাশিয়া বিশ্বকাপে পা রাখতে যাচ্ছে জোয়াকিম লো’র শিষ্যরা।

জার্মানির মত করেই চিন্তা করা প্রয়োজন ব্রাজিলের। স্কোর করার চেয়েও ব্যর্থতাকেই সবচেয়ে বেশি দেখা উচিৎ তাদের। সম্ভবত সে কারণেই, ব্রাজিল ফুটবলে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্যণীয়। ব্রাজিলিয়ান মিডিয়ায় ২০১৪ সালের এই বিপর্যয়ের নাম দিয়েছে ‘মিনেইরোজ্জো’। শুধু তাই নয়, ব্রাজিলিয়ান মিডিয়ায় এ নিয়ে একের পর এক বিশ্লেষণও লেখা হয়েছে। নেয়া হয়েছে সাবেক এবং বর্তমান ফুটবলারদের বক্তব্য, মন্তব্য। অবশ্যই, সে সব ফুটবলারও ছিলেন এসব বিশ্লেষণে, যারা ব্রাজিলের প্রোফাইলে এই মহা বিপর্যয় লিখে দিয়েছিলেন।

তিতের বর্তমান স্কোয়াডেও রয়েছেন মিনেইরোজ্জোর সেই দলের কয়েকজন। দানি আলভেজ, মার্সেলো, ফার্নান্দিনহো, উইলিয়ান এবং পওলিনহো। রয়েছেন তখনকার নিয়মিত অধিনায়ক থিয়াগো সিলভাও। যদিও ওই ম্যাচে দর্শক সারিতেই থাকতে হয়েছিল তাকে। ২৩ জনের দলে থাকলেও কার্ড সমস্যার কারণে ওই ম্যাচে তিনি খেলতে পারেননি। তবে গত সপ্তাহে এক সাক্ষাৎকারে সিলভা জানিয়েছেন, জার্মানির বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচেও যদি জয় পায় ব্রাজিল, তাহলে সেটা হবে অনেকটা ‘প্রতিশোধ’-এর সমান।

তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা কোনোভাবেই মনে করি না যে, জার্মানিকে হারাতে পারলে সেটা ২০১৪ সালের অভিজ্ঞতাকে মুছে দিতে পারবে। তবে ফুটবল আপনাকে বারবার কোনো ঘটনার পূনরাবৃত্তির ঘটানোর সুযোগ এনে দেয়। সেখানেই হয়তো আমরা নিজেদের সেরাটা প্রমাণ করতে পারবো।’

যত যাই হোক, মঙ্গলবারের ম্যাচটি কিন্তু ব্রাজিলের সামনে বিশাল একটি সুযোগ। হয়তো অতীতে কী হয়েছে সে সব নিয়ে ভাবছে না সেলেসাওরা; কিন্তু সামনে বিশ্বকাপ। এমন একটি বড় টুর্নামেন্টের আগে জার্মানির মত দলের বিপক্ষে নিজেদের শক্তির পরীক্ষা করে নেয়াটা বিরল এক সুযোগ। ব্রাজিল কোচ তিতেও কিছুদিন আগে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ‘এই ম্যাচটা হবে খেলোয়াড়দের মানসিক অবস্থা পরীক্ষার অন্যতম একটি মাধ্যম।’

তিতে ধন্যবাদ পেতে পারেন, যখন তাকে ‘রিভাঞ্চ’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, জবাবে তিনি অতি ভদ্রভাবেই বিষয়টাকে দুরে সরিয়ে রাখলেন। তিনি বলেন, ‘(৭-১) এটা হচ্ছে একটা বাস্তবতা এবং আমরা এর সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কিন্তু এটাও সবার মনে রাখা উচিৎ যে, আমরা এখন ভিন্ন একটি সময়ে, ভিন্ন একটি স্টেজে রয়েছি। আমি দলের কাছ থেকে কী চাই সেটা তাদের কমিটমেন্টেই প্রকাশ পাচ্ছে।’

অন্য হিসেবে বলতে গেলে, ব্রাজিল-জার্মানি ম্যাচ সব সময়ই ভিন্ন মাত্রা এনে দেয় ফুটবলপ্রেমীদের কাছে। কারণ, দু’দলের কদাচিৎ দেখা হওয়া। বিশ্বকাপে তো মাত্র তিনবার মুখোমুখি হয়েছে দু’দল। এর সঙ্গে যোগ করে নিতে পারেন, ১৯৭৪ বিশ্বকাপে পূর্ব জার্মানির বিপক্ষে ব্রাজিলের ১-০ গোলে জয়ের ম্যাচটিকেও। এছাড়া প্রীতি ম্যাচে ব্রাজিল-জার্মানি মুখোমুখি হয়েছে সব মিলিয়ে ২০ বার। যার মধ্যে ১১টিতে জয়ী ব্রাজিল। ৪টিতে জার্মানি। বাকি ৫টি ড্র।

যত কিছুই বলা হোক ব্রাজিল আর জার্মানি ম্যাচ নিয়ে, বলা শেষ হবে না। যত কিছুই লেখা হোক, লেখা শেষ হবে না। ব্রাজিল মানেই চিরন্তন লাতিন পাওয়ার হাউজ। আর জার্মানি মানেই চিরন্তন ইউরোপিয়ান পাওয়ার হাউজ। পৃথিবীর দুই প্রান্তের দুই সেরার লড়াই দেখার জন্যই মুখিয়ে থাকে বিশ্বের ফুটবলপ্রেমী মানুষ। সেই লড়াই দেখা যাবে মঙ্গলবার রাত বাংলাদেশ সময় পৌনে ১টা থেকে। আপাততঃ সে পর্যন্ত অপেক্ষা!

আইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।