অতি পারিশ্রমিক ফুটবলের ক্ষতি করছে : আসলাম

রফিকুল ইসলাম
রফিকুল ইসলাম রফিকুল ইসলাম , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৩:১৪ পিএম, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

খেলাধুলায় অর্থ নেই- ক্রিকেট বাদে অন্যসব খেলোয়াড়দের মধ্যে সব সময়ই এমন হাহাকার। এমন কী দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবলেও গলা শুকান অনেকে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে ফুটবলে শুধু টাকারই খবর। কী নিউজ মিডিয়া, কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম-সবখানেই ফুটবলারদের টাকার গল্প। ফুটবলে যেন টাকা উড়ছে। টাকা ধরতে চাইলে বলে একটু লাথি দেয়া শিখলেই চলবে-মাসিক আয় গড়ে ২ লাখ টাকার অধিক। একটু মান সম্পন্ন ফুটবলার হলে তো মাসে চার-পাঁচ লাখ।

ফুটবলারদের এই অতি পারিশ্রমিককে ফুটবলের ভালো-মন্দ দুইভাবে বিশ্লেষণ করেছেন সাবেক তারকা ফুটবলার শেখ মোহাম্মদ আসলাম। তবে জাতীয় দলের সাবেক এ স্ট্রাইকার মনে করছেন এই টাকার ছড়াছড়ি ফুটবলের ক্ষতিই করছে বেশি। ‘ফুটবলে টাকা থাকা উচিত। ফুটবলাররা অনেক টাকা পাচ্ছেন তা ভালো। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই টাকা কারা পাচ্ছেন? কোনো খেলোয়াড়কে টাকা দেয়ার সময় তার পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করা হয় না। যে কারণে বেশিরভাগ টাকাই চলে যাচ্ছে অপাত্রে’-জাগো নিউজকে বলছিলেন দেশের অন্যতম এ সেরা স্ট্রাইকার।

ফুটবলারদের নিয়ে ক্লাবগুলোর এই যে টানাটানি তার প্রধান কারণ হিসেবে মান সম্পন্ন খেলোয়াড় সংকটের কথা উল্লেখ করেছেন শেখ মোহাম্মদ আসলাম। ‘কোয়ালিটি সম্পন্ন ফুটবলার কই? যে খেলোয়াড় আছে তাতে ২ টার বেশি ভালো দল করা সম্ভব নয়।’

কিন্তু কোনো ফুটবলার টাকা বেশি পেলে ক্ষতিটা কোথায়? ‘আগেই বলেছি ফুটবলে টাকা থাকা উচিত। তাতে যুবারা ফুটবলে আগ্রহী হবে। ফুটবল খেললে অর্থ উপার্জন করা যায় সে আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে নতুন প্রজন্মের মধ্যে। কিন্তু অযোগ্যরা টাকা পেলে ভালো ফুটবলার হওয়ার তাগিদটা কমে যাবেই। তখন খেলা নয়, নজর চলে যাবে টাকার দিকে। এখন তো দেখছি সেটাই হচ্ছে। ক্লাবগুলো অপাত্রে টাকা ঢালছে। এটাই সবচেয়ে ফুটবলের বড় ক্ষতির দিক’-বলেন শেখ মোহাম্মদ আসলাম।

সাবেক এ তারকা ফুটবলার মনে করেন, স্থানীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে পারিশ্রমিকে তারতম্য থাকলেও কোয়ালিটিতে তেমন নেই। বলতে গেলে সবাই সমান। উদাহরণ হিসেবে স্বাধীনতা কাপ ফুটবলে আরামবাগের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথাও বলেন সাবেক এ তারকা ফুটবলার ‘বিদেশি না থাকায় বিগ বাজেটের দল চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি।’

বর্তমানে ফুটবলে করপোরেট হাউজ এগিয়ে আসায় দেশের ঐতিহ্যবাহী ক্লাবগুলো সমস্যায় পড়েছে উল্লেখ করে সাবেক এ তারকা ফুটবলার বলেন,‘টাকার লড়াইয়ে পুরোনো ক্লাবগুলো পিছিয়ে পড়ছে। যে কারণে পরীক্ষিত ও কোয়ালিটি সংগঠকও হারিয়ে যাচ্ছেন।’

নিজের সময়কার পারিশ্রমিক সম্পর্কে শেখ মোহাম্মদ আসলাম বলেন,‘আমি ১৯৭৬ সালে সপ্তাহে ২৫০ টাকা চুক্তিতে ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবে খেলা শুরু করি। ১৯৮৫ সালে ২৫ লাখ টাকা পেয়েছিলাম আবাহনী থেকে, যা আমার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ। দেখুন, এখন পারিশ্রমিকের কী অবস্থা। যারা টাকা নিচ্ছেন তারা যদি নিজের কাছে প্রশ্ন করেন, কী খেলছি আর কী নিচ্ছি, তাহলে তারাই উত্তর পেয়ে যাবেন। খেলোয়াড় কম থাকায় তাদের বেশি টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছে ক্লাবগুলো। আমি বলবো ক্লাবগুলো পরিস্থিতির শিকার।’

এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? শেখ মোহাম্মদ আসলাম সে পথও দেখিয়েছেন ‘লিগটা কীভাবে চালাবে সেটা ভাবার সময় এসেছে ফেডারেশনের। আমাদের দেশের ফুটবল আসলে সেমি প্রফেশনাল। আমার মনে হয়, আগের মতো ঢাকা প্রিমিয়ার লিগই চালু করা উচিত। ফুটবলাররা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক পারিশ্রমিক পাচ্ছেন এটা বন্ধ করতে হবে।’

শেখ মোহাম্মদ আসলাম খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক ক্যাটাগরি করে দেয়ার পক্ষে ‘বুঝি, ফুটবলারদের পারিশ্রমিক কমানোর সব উদ্যোগই অবিচার। কিন্তু যেভাবে অপাত্রে অর্থ চলে যাচ্ছে সেটা ফুটবলের ক্ষতিই করবে। তাই যার যেমন যোগ্যতা তার তেমনই পারিশ্রমিক পাওয়া উচিত। বাফুফে যদি ফুটবলারদের পারিশ্রমিকের শ্রেণিবিন্যাস করে দেয় তাহলে এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা কমবে। যেমন- জাতীয় দলে যারা খেলে তাদের একটা সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা, জাতীয় যুব দলে যারা খেলে তাদের একটা অংক নির্ধারণ করা।’

এখন ফুটবলারদের আয় মূলত ক্লাব থেকেই। জাতীয় দলে খেলে তেমন কোনো আর্থিক সুবিধা পাননা ফুটবলাররা। শেখ মোহাম্মদ আসলাম বাফুফেকে সেদিকেও নজর দিতে অনুরোধ করেছেন ‘যদি ফুটবলাররা জাতীয় দলে খেলে ভালো কিছু পান তাহলে তাদের ক্লাব নির্ভরতা কমবে। ক্লাবগুলোরও চাপ হ্রাস পাবে তখন।’

আরআই/এরআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।