স্বাধীনতা কাপ বদলে দেবে অনেকের ভাগ্য

রফিকুল ইসলাম
রফিকুল ইসলাম রফিকুল ইসলাম , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৯:৫৪ পিএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আরিফ, জুয়েল, আরাফাত-এরা কারা? তিন সপ্তাহ আগে নামগুলো শুনলেই এমন প্রশ্ন জাগতো অনেকের মনে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে ঘুরে ফিরে এ নামগুলো ফুটবল অঙ্গনের অনেকের মুখে মুখে।

স্বাধীনতা কাপ ফুটবলে আরিফ, জুয়েলরা নিজেদের চিনিয়েছেন অন্যভাবে-পারফরম্যান্স দিয়ে নিজেদের মেলে ধরেছেন মৌসুমের শেষ টুর্নামেন্টে। অনেক অখ্যাত ফুটবলার এখন উদীয়মান তারকার তালিকায়।

স্বাধীনতা কাপে ছিলেন না বিদেশি খেলোয়াড়। স্থানীয়দের পারফরম্যান্স পরখ করতেই এমন সিদ্ধান্ত ছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের। উদ্দেশ্য কতটা ফলপ্রসু হয়েছে, তা নিয়ে মতভেদ থাকলেও মৌসুমে এ ধরণের অন্তত একটি টুর্নামেন্ট আয়োজনকে গুরুত্ব দিয়েছেন অনেকে। তাদের যুক্তি-বেশ কয়েকজন তরুণ ফুটবলার এ টুর্নামেন্টের মাধ্যমে উঠে এসেছেন। কারো কারো মতে এ ধরণের টুর্নামেন্ট জাতীয় ও জাতীয় বয়সভিত্তিক দল তৈরিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

টুর্নামেন্টের আগে বাফুফে থেকে বলা হয়েছিল স্থানীয় খেলোয়াড়দের বেশি খেলার সুযোগ তৈরি করে দিতেই স্বাধীনতা কাপ বিদেশিমুক্ত। কথাগুলো বলেছিলেন দেশের ফুটবলের অভিভাবক সংস্থাটির সিনিয়র সহ সভাপতি আবদুল সালাম মুর্শেদী। টুর্নামেন্ট শেষে তার দাবি ‘উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।’

কিভাবে সফল তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন প্রফেশনাল লিগ কমিটির এ চেয়ারম্যান, ‘দুটো বিষয় আমি সামনে আনবো। মনে মনে ভাবতাম বিদেশিদের কারণে আমাদের অনেকে খেলার সুযোগ পায় না। তাদের খেলার সুযোগ হয়েছে। খেলতে পেরে অনেকেই নিজেকে প্রমাণ করেছে। আরামবাগের ৩৭ নম্বর জার্সিধারী আরিফের কথাই বলবো। সে অনেক ভালো খেলেছে। পরিশ্রম করলে সে জাতীয় দলেও জায়গা পাবে বলে মনে করি। দ্বিতীয়ত ট্রেডিশেন ভেঙ্গে নতুন একটা দল চ্যাম্পিয়ন হলো। আরামবাগ এখন আরো ভালো দল গড়তে উৎসাহী হবে।’

ফাইনালে গ্যালারিতে গোলমালের বিষয়টিকেও ফুটবলের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বাফুফের সিনিয়র সহ সভাপতি। তিনি বলেন, ‘এমন দৃশ্য দেখতাম যখন আমরা খেলেছি তখন। ফাইনাল চলাকালীন গ্যালারির মারপিট দেখে আমার স্মৃতিতে ফিরে এসেছে ফুটবলের উত্তাল দিনের কথা। ফুটবল ম্যাচে গ্যালারি গরম থাকবে সেটাই তো স্বাভাবিক।’

আবাহনীর সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত কোচ সাইফুল বারী টিটুও মনে করেন বছরে এমন একটা টুর্নামেন্ট হওয়া উচিত। বিদেশি না থাকায় অনেক স্থানীয় খেলার সুযোগ পেয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে প্রিমিয়ার লিগে চট্টগ্রাম আবাহনীর দায়িত্ব পালন করা এ কোচও মুখে এনেছেন আরামবাগের আরিফের নাম, ‘সে তো আমারই খেলোয়াড় ছিল। কিন্তু চট্টগ্রাম আবাহনীতে তাকে খেলানোর সুযোগ পেতাম না। লিগের দ্বিতীয় পর্বে আরামবাগে যোগ দিয়েও কিন্তু তার বেশি খেলার সুযোগ মেলেনি বিদেশির কারণে। কিন্তু স্বাধীনতা কাপে খেলতে পেরে আরিফ প্রমাণ করেছে নিজেকে।’

jagonews24

আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সহকারী কোচ আবদুল কাইয়ুম সেন্টু অবশ্য স্বাধীনতা কাপে স্থানীয়রা আহামরি পারফরম্যান্স করেছেন, তা মানছেন না। ‘নিজের ক্লাব বলে বলছি না। টুর্নামেন্টের বিশ্লেষণ করলে দেখবেন, আমাদের দলের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ের নামই সবার মুখে মুখে। সুযোগ তো বড় বড় দলের প্রতিষ্ঠিত স্থানীয়রাও পেয়েছেন। আলাদা করে কাউকে পাবেন না যে দুর্দান্ত খেলেছে স্বাধীনতা কাপে’-বলেছিলেন মারুফুল হকের সহকারী।

আবদুল কাইয়ুম সেন্টুর কথার যুক্তিও আছে। টুর্নামেন্টটা তো আসলেই হয়েছে আরামবাগময়। তারা শিরোপা জিতেছে এক ঝাঁক তরুণের অদম্য সাহসিকতায়। মাঠে তারুণ্যের ফুল ফুটিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে ৬০ বছর বয়সী ক্লাবটি। অধিনায়ক সুফিল নিজেকে চিনিয়েছিলেন অনূর্ধ্ব-১৮ ও ১৯ দলের হয়ে। কিন্তু আরিফ-জুয়েদেরতো আলোতে এনেছে স্বাধীনতা কাপই। আরিফ ফাইনাল ও টুর্নামেন্টসেরা হয়েছেন। জুয়েল স্বাধীনতা কাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা।

সামনে আগামী মৌসুমের দলবদল। আরামবাগ ক্লাবের সভাপতি এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ জাগো নিউজকে বলেছেন, ‘অনেক বড় ক্লাব থেকে আমাদের বেশ কয়েকজন তরুণ ফুটবলারকে বেশি পারিশ্রমিকের লোভ দেখানো হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করবো তাদের ধরে রাখতে।’

এটা ঠিক, স্বাধীনতা কাপের পর কিছু তরুণ খেলোয়াড়ে চোখ আছড়ে পড়েছে বড় বড় ক্লাবের। বিদেশিমূক্ত টুর্নামেন্ট খেলার পর অনেকের ভাগ্যই বদলে যাবে-এমনটিই মনে করেন ফুটবল বিশ্লেষকরা।

আরআই/এমএমআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।