বিজয়ের মাসে দেশবাসীকে মেয়েদের উপহার

ইমাম হোসাইন সোহেল
ইমাম হোসাইন সোহেল ইমাম হোসাইন সোহেল
প্রকাশিত: ১০:২৮ এএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭

৪৬তম বিজয়ের মাস। সামনেই হাতছানি দিচ্ছে নতুন আরেকটি বছর। বাংলাদেশের মানুষের সামনে আনন্দ করার নতুন কী এমন উপলক্ষ থাকতে পারে! উপলক্ষ খোঁজার জন্য খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। বাংলাদেশের কিশোরী ফুটবলাররা সেই আনন্দের দারুণ একটি সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে শক্তিশালী ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে বিজয়ের মাসে বিজয়ানন্দে ভেসে ওঠার উপলক্ষ তৈরি করে দিয়েছে মারিয়া মান্ডা এবং মনিকা চাকমারা।

‘স্বপ্ন ছোঁয়ার’র লক্ষ্য নিয়েই কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। চলতি বছরই জানুয়ারিতে শিলিগুড়িতে অনুষ্ঠিত নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে এই ভারতের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল সাবিনা-কৃষ্ণাদের। তাদেরই উত্তরসূরীরা বছরান্তে আবার ফাইনালে মুখোমুখি হয়ে গেল ভারতের। প্রতিশোধ নেয়ার দারুণ সুযোগ।

দু’দিন আগেই এই ভারতকে ৩-০ গোলে হারিয়ে নিজেদের ফেবারিট হিসেবে প্রমাণ করেছিল বাংলাদেশের কিশোরী ফুটবলাররা। এবার সেই ফেবারিটের মর্যাদাই রক্ষা করল বাংলাদেশ। নারী ফুটবলের যে জয়জয়কার এতদিন দেখা যাচ্ছিল, তারই আরেকটি মাইলফলক রচনা করল মারিয়া-মনিকারা।

ফাইনালের আগে গত দুই-তিনদিন ধরে গুলিস্তান, মতিঝিল, কমলাপুর, মুগদাপাড়া, বাসাবো ও মানিকনগরসহ রাজধানীর আরো বেশ কিছু এলাকায় মাইকিং করে বলা হচ্ছিল, ‘ভাইসব। ফুটবল, ফুটবল, ফুটবল। রোববার কমলাপুর স্টেডিয়ামে আকষর্ণীয় ফুটবল খেলা। সাফ বালিকা ফুটবলের ফাইনাল খেলবে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত। টিকিট লাগবে না। গ্যালারি উন্মুক্ত। খেলা দেখতে আসুন, মেয়েদের উৎসাহিত করুন।’

নারী ফুটবলের সাফল্য সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে এমন প্রচারণা নজর কেড়েছে সবার। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে যে কারণে আজ দুপুরের আগেই লোকে-লোকারণ্য। প্রায় হাজার দশেক দর্শক-সমর্থক উপস্থিত হয়ে গিয়েছিল কিশোরী ফুটবলারদের বিজয়য়ের মাহেন্দ্রক্ষণের মুহূর্তটার সাক্ষী হতে। একই সঙ্গে ইউটিউব, ফেসবুকসহ যত মাধ্যমে খেলা দেখার সুযোগ ছিল, সারাদেশ এবং বিদেশ থেকেও হাজার হাজার মানুষ উৎসুক হয়ে খবর রাখছিল, কিশোরী ফুটবলারদের খেলার কী অবস্থা।

পুরো ম্যাচেই বলতে গেলে একাধিপত্য ছিল বাংলাদেশের মেয়েদের। মুহুর্মুহু আক্রমণে যখন ভারতের রক্ষণভাগ কাঁপিয়ে তুলছিল বাংলাদেশের মেয়েরা, তখন গগণবিদারী চিৎকার উঠিছিল গ্যালারিতে। সেই চিৎকারে যেন হারিয়ে যাচ্ছিল ভারতের মেয়েরা। বাংলাদেশের মেয়েরা দ্বিগুণ উৎসাহে ঝাঁপিয়ে পড়ছিল প্রতিপক্ষের ওপর। যার ফলশ্রুতিতেই খেলা ৪২ মিনিটে শামসুন্নাহারের গোলে এগিয়ে যায় লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। শেষ পর্যন্ত এ এক গোলই হয়ে দাঁড়ালো চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণের নিয়ামক। রেফারির শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই বিজয়োল্লাসে ফেটে পড়ল বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামের গ্যালারি থেকে শুরু করে পুরো দেশ।

গত বৃহস্পতিবারই লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে ভারতকে হারানোর পর কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন মিডিয়ার মাধ্যমে অনুরোধ জানান, দর্শকদের মাঠে আসার জন্য। কিশোরী ফুটবলারদের উৎসাহ দেয়ার জন্য। দলের খেলোয়াড়রাও জানিয়েছিলেন একই অনুরোধ। তাদের চাওয়া ছিল, ‘গ্যালারিতে বেশি দর্শক আসুক, তাদের উৎসাহ দিক।’

নেপালকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে শুরু কিশোরী ফুটবলারদের চ্যাম্পিয়নযাত্রা। এরপর ভুটানকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করে নিশ্চিত করল ফাইনাল। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বিধ্বস্ত করল ভারতকে। ওই ম্যাচেই ফাইনালের আত্মবিশ্বাস সঞ্চয় করে নিয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। আগের এ তিন ম্যাচে স্বল্পসংখ্যক দর্শক গ্যালারিতে ‘বাংলাদেশ-বাংলাদেশ’ বলে গলা ফাটিয়েছিল।

ফাইনালে গ্যালারিভর্তি দর্শকের ‘বাংলাদেশ-বাংলাদেশ’ বলে গলা ফাটানো চিৎকারের মূল্য দিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। প্রতিদান দিয়ে তারা বিজয়ের মাসে উপহার দিয়েছে আরও একটি বিজয়। নতুন বছরে দেশবাসীর জন্য এর চেয়ে বড় উপহার আর কী হতে পারে!

আইএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।