কাতালোনিয়া স্বাধীন হলে কোথায় যাবে বার্সা!

স্পোর্টস ডেস্ক
স্পোর্টস ডেস্ক স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:১১ এএম, ০৩ অক্টোবর ২০১৭

দীর্ঘদিনের স্বাধীনতার সংগ্রাম অবশেষে বাস্তবে রূপ পেতে যাচ্ছে। গণভোটে সাধারণ মানুষের রায় গেল স্বাধীনতার পক্ষেই। এখন শুধু বাকি আনুষ্ঠানিকতার। আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়াটাই এখন শুধু বাকি। ধারণা করা হচ্ছে খুব শিগগিরই স্বাধীনতার ঘোষণা দেবে কাতালোনিয়া।

কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামের এই ডামাঢোলে একটি প্রশ্নই খেলাধুলার দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। যদি স্পেনের বৃহৎ এই রাজ্যটি স্বাধীন হয়ে যায়, তাহলে কী হবে ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার? তারা কী লা লিগায় থাকতে পারবে? নাকি বেরিয়ে যেতে হবে? কোথায় যাবে তারা?

কেউ বলছে বার্সা লা লিগাতেই থেকে যেতে পারবে। আবার কেউ বলছে না, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে যোগ দেবে। কেউ বলছে, ফ্রান্সের লিগ ওয়ান কিংবা ইতালির সিরি-আ তে। আবার কেউ কেউ বলছে, না কাতালোনিয়ান লিগেই খেলতে হবে বার্সেলোনাকে।

গত সপ্তাহেই কাতালান ক্রীড়া মন্ত্রী জেরার্ড ফিগেরাস বলেছিলেন, স্পেন থেকে কাতালোনিয়া স্বাধীন হয়ে গেলে বার্সেলোনা যে কোনো দেশের ফুটবল লিগেই খেলতে পারবে। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর লা লিগায় খেলা কাতালান দল যেমন- এফসি বার্সেলোনা, এস্পানিওল কিংবা জিরোনা- নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে যে তারা কোথায় খেলবে। তারা কী স্প্যানিশ লিগে খেলবে নাকি, প্রতিবেশি কোনো দেশের লিগে খেলবে। যেমন ইতালি, ফ্রান্স কিংবা ইংল্যান্ডের ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে।’

কোথায় খেলবে বার্সেলোনা? এই প্রশ্নের জবাব অবশেষে বার্সা ক্লাব প্রেসিডেন্ট হোসে মারিয়া বার্তেম্যুর কাছ থেকেও এসে গেলো। তিনি জানিয়েছেন, কাতালোনিয়া স্বাধীন হওয়ার পরই ক্লাবের বর্তমান কমিটি এবং ক্লাবের সদস্যরা মিলে সিদ্ধান্ত নেবে- তারা কোথায় খেলবে।

রোববার যখন গণভোট চলছিল, তখন কাতালোনিয়াজুড়ে সংঘর্ষও ছড়িয়ে পড়ে। স্পেন সরকার এই গণভোটকে পুরোপুরি অবৈধ ঘোষণা করে। ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আসতে বাধা দেয় পুলিশ। যে কারণে বার্সেলোনা শহরে তুমুল সংঘর্ষ হয় পুলিশের সঙ্গে স্বাধীনতাকামী ভোটারদের। এই পরিস্থিতিতে লাস পালমাসের বিপক্ষে ম্যাচটি স্থগিত করতে চেয়েছিল এফসি বার্সা।

ক্লাবের পক্ষ থেকে লা লিগা কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়ে চিঠিও পাঠানো হয়; কিন্তু লা লিগা কর্তৃপক্ষ সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে। ফলে বার্সেলোনাকে বাধ্য হয়েই লাস পালমাসের বিপক্ষে খেলতে নামতে হয়। নিরাপত্তার স্বার্থেই পুরো স্টেডিয়ামের সব গেট বন্ধ রাখা হয়। একজন দর্শককেও প্রবেশ করে দেয়া হয়নি। যা লা লিগা এবং বার্সেলোনার ক্লাব ইতিহাসে নজিরবিহীন।

অথ্যাৎ কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামে পুরোপুরি সমর্থন জানিয়েছে বার্সা। শুধু সমর্থন জানানোই নয়, স্বাধীনতা সংগ্রামে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়েও পড়েছে তারা। বার্সেলোনা ক্লাবই যেন কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে স্বাধীন হলে বার্সেলোনা যাবে কোথায়? খেলবে কোন লিগে? এর জবাবে ক্লাব প্রেসিডেন্ট হোসে মারিয়া বার্তেম্যু বলেন, ‘স্বাধীন হলে ক্লাব কমিটি এবং সদস্যরা মিলে সিদ্ধান্ত নেবে কোন লিগে তারা খেলবে।’

ক্লাব যে কঠিন একটি সময় পার করছে, সেটা স্বীকার করলেন বার্তেম্যু। তিনি বলেন, ‘আমরা সত্যি সত্যি একটি কঠিন পরিস্থিতি এবং জটিল সময় অতিবাহিত করছি। পরিস্থিতি কী দাঁড়ায় তার ওপর নির্ভর করেই আমরা খুব শান্ত এবং ধীরস্থিরভাবে সিদ্ধান্ত নেবো যে আমরা কী করবো।’

বার্তেম্যু এ সময় জানিয়ে দেন, বার্সা সহ-সভাপতি কার্লস ভিলারুবি এবং বার্সার ইনোভেশন হাব প্রধান জর্দি মোনসের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। বদ্ধ স্টেডিয়ামে লাস পালমাসের বিপক্ষে খেলার তীব্র বিরোধীতা করেছিলেন বার্সার এই দুই কর্মকর্তা। তাদের দাবি ছিল খেলাটাই স্থগিত রাখতে। এ কারণে এ দু’জন পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে বার্সা প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘তাদের দু’জনকে ধন্যবাদ, ক্লাবের জন্য তারা কতটা নিবেদিতপ্রাণ, সেটা প্রমাণ করেছেন। আজ তাদের পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করা হলো।’

বার্তেম্যু এটাও বলেন যে, ২০১৪ সালে ক্লাবে সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার পর বদ্ধ স্টডিয়ামে খেলার আয়োজনের সিদ্ধান্ত ছিল আমার জন্য সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত; কিন্তু এই সিদ্ধান্ত না নিয়েও উপায় ছিল না। তিনি বলেন, ‘আমি স্পষ্টই বুঝতে পেরেছিলাম ক্লাবের অনেক সদস্য এবং সমর্থক এই ম্যাচটি স্থগিত করার পক্ষে ছিলেন। এ কারণেই ক্লোজ স্টেডিয়ামে খেলার সিদ্ধান্ত নেয়াটা আমার পক্ষে ছিল খুবই কঠিন। আমরা সবাই চিন্তা করেছিলাম ম্যাচটি স্থগিত রাখতে। কিন্তু প্রফেশনাল ফুটবল লিগ (এলএফপি) কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই আমাদের অনুরোধটি রাখলেন না।’

এরপরই ম্যাচ খেলার সিদ্ধান্ত নেন বার্তেম্যু। শুধু তাই নয়, তিনি সিদ্ধান্ত নেন ক্লোজ ডোর স্টেডিয়ামেই হবে সেই ম্যাচটি। তিনি বলেন, ‘এই পয়েন্টে এসে সিদ্ধান্ত নিলাম, ক্লোজ ডোর স্টেডিয়ামেই ম্যাচটি আয়োজনের। তাহলে তাতে একটা বার্তা পরিস্কার হয়ে যাবে। বিশ্বের কাছেও একটা বার্তা পৌঁছে দেয়া গেছে। এর কারণে স্প্যানিশ ফুটবলের যে ইমেজ তৈরি হবে তার দায়-দায়িত্ব কোনটাই আমাদের নয়। তাদের। এতে এটা প্রমাণিত হবে যে, কাতালোনিয়ার উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা কিভাবে চেষ্টা করেছি ম্যাচটি আয়োজন না করতে এবং এ কারণেই মূলতঃ ম্যাচটি আয়োজন করতে হয়েছে ক্লোজ ডোর স্টেডিয়ামে।’

বার্সেলোনা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আজ পুরো কাতালোনিয়াজুড়ে যে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে তাতে সর্বাত্মকভাবে যোগ দেবে। শুধু বার্সাই নয় এস্পানিওল এবং জিরোনাও ঘোষণা দিয়েছে এই ধর্মঘটে যোগ দেয়ার।

আইএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।