বিপিএল

কে হাসবে শেষ হাসি?

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১০:৪৭ এএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। মিনিট-সেকেন্ডের কাউন্টডাউন চলছে এখন। সেটা শেষ হলেই পর্দা উঠবে বিপিএলের ১১তম আসরের। আজ সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুর দেড়টায় চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশাল ও বিপিএলে নতুন করে আসা দুর্বার রাজশাহীর ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে বিপিএল ২০২৪-২০২৫ এর মাঠের লড়াই।

টুর্নামেন্ট শুরুর সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ঘুরে ফিরে একটি প্রশ্ন ততই জোরালো হচ্ছে। কে জিতবে শিরোপা? শেষ হাসি হাসবে কে?

খুব স্বাভাবিকভাবে ভক্ত-সমর্থকরা নিজ নিজ দলের সম্ভাবনার কথাই ভাবছেন। নিজের পছন্দের দলকেই সবাই এগিয়ে রাখছেন। প্রিয় দলকে নিয়েই ব্যস্ত তারা। প্রত্যেকেই নিজের দলকে সেরা মানেন।

তবে বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে অলিগলির অবুঝ কিশোরও তামিম ইকবালের ফরচুন বরিশালকে এগিয়ে রাখছেন। সবার চোখেই এবারের বিপিএলে কাগজে কলমে এক নম্বর দল বরিশাল। শুধু ভক্তদের কথাই বলা কেন, সবাই যেন বরিশালের হাতেই টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা দেখতে পাচ্ছেন।

কাগজে-কলমে সবচেয়ে সমৃদ্ধ দল এবার বরিশাল। এরপর সেভাবে কাউকে চিহ্নিত করা কঠিন। তবে বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞের চোখে রংপুর রাইডার্স এবারের বিপিএলে কাগজে কলমে দ্বিতীয় শক্তি। গ্লোবাল সুপার লিগ জিতে আসা দলটির অনেক বড় সাফল্য, অনুপ্রেরণা। পুরো শক্তিতে খেলতে পারলে রংপুরও বরিশালের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে। বাকি ৫ দল তুলনামূলক পিছিয়ে।

দেশের ক্রিকেটের তিন অভিজ্ঞ, পরিণত ও দক্ষ ক্রিকেটার তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বরিশালের সবচেয়ে বড় শক্তি। দলটির বড় সম্পদও। বলার অপেক্ষা রাখে না, তাদের তিনজনের মতো অভিজ্ঞ ও পরিণত পারফরমার এখন বাংলাদেশেই নেই। অনুকূল, প্রতিকূল যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা ও নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে বেশি ক্ষমতা তাদের।

সবচেয়ে বড় কথা, বরিশালের তিনটি বিভাগই (ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং) সাজানো-গোছানো ও ভারসাম্যপূর্ণ।

ব্যাটিংয়ে তামিম, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, তাওহিদ হৃদয়ের সঙ্গে কাইল মায়ার্স ও ডেভিড মালানের সমন্বয়ে গড়া ব্যাটিং যেকোনো দলের চেয়ে সমৃদ্ধ।

এনসিএল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে ৪ ম্যাচ খেলে ১৯০ রান করে তামিম দেখিয়েছেন, ব্যাট হাতে এখনো আগের মতোই উজ্জ্বল, চকচকে আর কার্যকর তিনি। মাহমুদুল্লাহ তো টগবগ করে ফুটছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে রানের নহর বেরিয়েছে ডানহাতি অভিজ্ঞ এই তারকার ব্যাট থেকে।

মুশফিকের কথা নতুন করে বলার কিছুই নেই। সংকট, বিপদ আর প্রয়োজনে সব সময়ই সমান কার্যকর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বিরাট ক্ষমতা আছে দারুণ প্রতিভাবান ও পরিশ্রমী এ ক্রিকেটারের। শান্ত ও হৃদয়ের মতো দুজন আত্মবিশ্বাসী ও স্ট্রোক-মেকার বরিশালের বড় প্লাস পয়েন্ট।

লোয়ারঅর্ডারে মোহাম্মদ নবি, রিশাদ হোসেন ও রিপন মন্ডলের হাত খুলে খেলার সামর্থ্য আছে। সব মিলিয়ে কাগজে-কলমে সেরা ব্যাটিং লাইন-আপ বরিশালের।

বোলিংটাও সেই রকম ধারালো। পেস আর স্পিন দুই বিভাগই সমান সমৃদ্ধ। শাহিন শাহ আফ্রিদি, এবাদত হোসেন ও রিপন মন্ডল পেস ইউনিট সামলাবেন। সঙ্গে অভিজ্ঞ মোহাম্মদ নবি, তাইজুল ইসলাম, রিশাদ হোসেন, নাইম হাসান ও তানভির ইসলামের স্পিন বৈচিত্র্য প্রচুর। ব্যাক-আপ স্পিনারও আছেন বেশ কজন।

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সময়ের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও সিনিয়র অফস্পিনার নবির সঙ্গে দুই বাঁহাতি তাইজুল ও তানভির এবং লেগস্পিনার রিশাদ স্পিন বোলিংয়ের দায়িত্ব নেবেন। ব্যাক-আপ অফস্পিনার বোলার হিসেবে নাইম আছেন। সব মিলিয়ে দারুণ স্পিন আক্রমণ।

বরিশালের ফিল্ডিংয়ের দিকে তাকানো যাক। তামিম, মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহর বয়স হয়ে গেছে। সবাই ৩৫ পেরিয়ে ৩৭, ৩৮ পা দিয়ে ফেলেছেন। যে দলে এমন বয়স্ক ক্রিকেটার তিনজন, সে দলের ফিল্ডিংটাকে ভালো বলা কি ঠিক? কেউ কেউ এমন প্রশ্ন করতেই পারেন। তাদের জন্য বলা, দলে শান্ত, হৃদয়, রিশাদ ও আরিফুল ইসলামের মতো তরুণ ও খুব ভালো অ্যাথলেট আছেন। যারা দুর্দান্ত ফিল্ডার। তাই বলা যায়, বরিশালের ফিল্ডিংটাও চোস্ত।

উপরের লেখাগুলো পড়ে প্রিয় পাঠকরা নিশ্চয়ই ভাবছেন, সব প্রশংসা তো বরিশালেরই হলো। এখন পর্যন্ত অন্য কোনো দলের কথা তো বলা হলো না। তাহলে কি এবারের বিপিএলে বরিশাল ছাড়া আর কোনো ভালো দল নেই?

থাকবে না কেন? নিশ্চয়ই আছে। তবে বরিশালের ধারেকাছে নেই।

দল হিসেবে রংপুরও বেশ ভালো। ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ম্যাচ উইনার নুরুল হাসান সোহানের নেতৃত্বে রংপুরে আছেন শেখ মেহেদী, সৌম্য সরকার, সাইফ হাসান, রকিবুল হাসান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, কামরুল ইসলাম, রেজাউর রহমান রাজা, নাহিদ রানা, ইরফান শুক্কুর ও আজিজুল হাকিম তামিমের মতো ক্রিকেটার।

বয়সে তরুণ হলেও সবাই ফর্মে আছেন। টি-টোয়েন্টি উপযোগী দল।

দুঃখের বিষয় হলো- ফর্মের চূড়ায় থাকা সৌম্যকে দারুণভাবে মিস করবে রংপুর। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে আঙ্গুল ফেটে যাওয়া সৌম্যকে অন্তত অর্ধেক সময় পাবে না দলটি। ধারণা করা হচ্ছে, সিলেট ও চট্টগ্রাম পর্ব ও শেষে ঢাকার চূড়ান্ত পর্বে বাঁহাতি এই ব্যাটারের দেখা মিলতে পারে।

তবে ইংল্যান্ডের অ্যালেক্স হেলস, পাকিস্তানের অভিজ্ঞ ইফতিখার আহমেদ, খুশদিল শাহ, যুক্তরাষ্ট্রের স্টিভেন টেলর ও আফগানিস্তানের সিদিকুল্লাহ আতালরা রংপুরের শক্তি বাড়াবেন নিঃসন্দেহে। ব্যাটিং-বোলিংয়ে রংপুরও বেশ ভারসাম্যপূর্ণ দল।

তারপর কোন দল? কাগজে-কলমে সেভাবে বাকি দলগুলোকে চিহ্নিত করা কঠিন। এই ৫ দলের শক্তি-সামর্থ্য প্রায় কাছাকাছি। তারপরও ঢাকা ক্যাপিটালস ও দুর্বার রাজশাহীকে একটু এগিয়ে রাখা হচ্ছে। খুলনা টাইগার্স, সিলেট স্ট্রাইকার্স ও চিটাগং কিংসের শক্তিসামর্থ্য খুব কাছাকাছি। এখন দেখা যাক- মাঠে কোন দল কেমন খেলে, কে হাসে শেষ হাসি।

এআরবি/এমএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।