আরিফুর রহমান বাবুর বিশ্লেষণ

যে কারণে হঠাৎ টি-টোয়েন্টিতে বেশি ম্যাচ জিতছে বাংলাদেশ

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৭:০১ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪

২০২৩ ও ২০২৪ সালে ওয়ানডের চেয়ে আনুপাতিকহারে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বেশি ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। এ তথ্য শুনে আবার ভাববেন না যে, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এখন অনেক ভালো খেলতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। ২০ ওভারের ক্রিকেটে ব্যাটিং, বোলিং আর ফিল্ডিংয়ে একেবারে দারুণ কম্বিনেশন হচ্ছে টাইগারদের। তাই জিতছে, এমনটা ভাবার কারণ নেই।

টি-টোয়েন্টি ব্যাটারদের খেলা। বাংলাদেশের ব্যাটাররা কি হঠাৎ ভালো খেলতে শুরু করেছেন? মোটেই তেমনটা নয়। বরং বাংলাদেশের যে টি-টোয়েন্টিতে হঠাৎ বদলে যাওয়া, বলা যায় তার পুরোটাই বোলারদের অবদানে।

ব্যাটিংটা ঠিক আগের মতই আছে। বরং ওয়ানডের চেয়েও কোনো কোনো ক্ষেত্রে টি-টোয়েন্টির ব্যাটিংটা হচ্ছে আরও খারাপ। বেশি দূর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না। এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে একবার ২৯৪, আরেকবার ৩২১ রানের বিরাট স্কোর গড়ে দিয়েছিলেন ব্যাটাররা। কিন্তু অত বড় পুঁজি নিয়েও জেতা সম্ভব হয়নি।

অথচ একই দলের সাথে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ১৪৭ আর ১২৯ রানের মাঝারি ও ছোট্ট পুঁজি নিয়েও টানা দুই ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। এর একটাই কারণ, বাংলাদেশের বোলারদের টি০টোয়েন্টি ফরম্যাটে ম্যাচ জেতানোর সামর্থ্য বেড়েছে।

তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, তানজিম হাসান সাকিব, শেখ মেহেদি আর রিশাদ হোসেনরা একটা ইউনিট হয়ে বোলিং করছেন। নতুন বলে সাফল্য ধরা দিচ্ছে প্রায় নিয়মিত। প্রতিপক্ষকে শুরুতে শক্ত ও মজবুত ভিতের ওপর দাঁড়াতে দিচ্ছেন না বোলাররা।

নতুন বলে প্রতিপক্ষ ওপেনিং জুটি ভাঙার কাজটা অহরহই করে দেখাচ্ছেন কেউ না কেউ। কখনো পেসার তাসকিন, আবার কোনো সময় অফস্পিনার শেখ মেহেদি শুরুতে ব্রেক থ্রু উপহার দিচ্ছেন। আজ (দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে) যেমন তাসকিন আর শেখ মেহেদি মিলেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফ্রন্টলাইন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছেন।

‎তাই টি-টোয়েন্টির উন্নতির বাঁকবদলটা মূলত বোলারদের হাত ধরেই এসেছে। বোলাররা জেনে গেছেন কার কাজ কী, কখন কীভাবে বল করতে হবে।

উইকেট পতনের কৌশল, রান গতি কমানোর কৌশল আর প্রতিপক্ষকে বড় জুটি গড়তে না দিয়ে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পতনের কৌশলও রপ্ত করেছেন তাসকিন, হাসান মাহমুদ, তানজিম সাকিব, শেখ মেহেদি-রিশাদরা।

‎পেসারদের মধ্যে তাসকিন আহমেদ খুব মিতব্যয়ী বোলিং করছেন। বাড়তি এক্সপেরিমেন্ট না চালিয়ে যতটা সম্ভব ভালো জায়গায় বল ফেলে শুরুতে ব্রেক থ্রু উপহারের চেষ্টায় সফল তাসকিন। আজ বুধবার সেন্ট ভিনসেন্টে নিজের প্রথম ওভারে দুই ক্যারিবীয় টপ অর্ডারকে আউট সুইংয়ে পরাস্ত করে প্রথম আঘাত হানেন এই পেসার।

হাসান মাহমুদও মিতব্যয়ী বোলিংয়ের সাথে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট নেওয়ার দক্ষতা অর্জন করেছেন। থার্ড সিমার তানজিম হাসান সাকিব মাঝেমাঝে একটু খরুচে বোলিং করলেও আবার দলের প্রয়োজনে রান গতি কমানো এবং উইকেট পতনের কাজটি খুবই ভালোমত করতে পারেন। নেপালের বিপক্ষে এ বছর বিশ্বকাপে ৪ ওভারে মাত্র ৭ রানে ৪ উইকেট পতনের রেকর্ডই বলে দেয় কম পুঁজিতে তানজিম সাকিব কতটা কার্যকর।

‎অপরদিকে লেগস্পিনার রিশাদ হোসেন একটা বড় অস্ত্র হয়ে গেছেন টিম বাংলাদেশের। ভাইটাল ব্রেক থ্রু দেওয়ার সাথে মিতব্যয়ী বোলিং দুটোই রপ্ত করে নিয়েছেন এই নতুন লেগি। আজকের খেলায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ যার হাত ধরে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছিল, সেই রস্টন চেজকে ফ্লিপারে বোল্ড করে ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রণ দলের হাতে নিয়ে নেন রিশাদ।

আর অফস্পিনার শেখ মেহেদি বরাবরই নতুন বলে খুব কার্যকর। বিশেষ করে বাঁহাতি ব্যাটারদের বিপক্ষে শেখ মেহেদির বোলিং কার্যকারিতা প্রায় প্রমাণিত। সবমিলিয়েই বাংলাদেশের বোলিং ইউনিট বা বোলিং কম্বিনেশনটা মূলত বাংলাদেশের ম্যাচ জয়ের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।

কম পুঁজি নিয়েও কীভাবে ম্যাচ জেতা যায়, সেই মন্ত্রটা ভালোই রপ্ত করেছেন বাংলাদেশের বোলাররা। তাই এ ফরম্যাটে দিনকে দিন জয় বাড়ছে। সাফল্যের দেখা মিলছে। এখন শুধু সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার পালা।

এআরবি/এমএমআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।