শুরু হবে বিপিএল দিয়ে
নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তারুণ্যের উৎসব-২০২৫
জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার উত্তাল আন্দোলন আর দেড় হাজারেরও বেশি অকুতোভয় মুক্তিকামী মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে নতুন স্বাধীনতা। পরাজিত ও ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে ফ্যাসিবাদী আওয়ামীলীগ সরকার। ছাত্র-জনতার সেই সফল আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে দেশের তরুণ সমাজ।
সেই তরুণদের লড়াই-সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে উদ্যোগী হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।
নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য ও পরিকল্পনায় তারুণ্যের উৎসব করার পরিকল্পনা নিয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’ নামকরণের এক বড়সড় যজ্ঞ শুরু হতে যাচ্ছে চলতি ডিসেম্বর মাস থেকেই। আগামী ৩০ ডিসেম্বর বিপিএল দিয়ে শুরু হবে সেই ‘তারুন্যের উৎসব ২০২৫।’
যুব, ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া আজ রোববার স্থানীয় এক পাঁচ তারকা হোটেলে এই আয়োজনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি শিক্ষা মন্ত্রণালয় (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা), তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়সহ ১২টির বেশি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় প্রায় দুই মাস ধরে চলবে তরুণদের উৎসব।
ক্রিকেট ছাড়াও ফুটবল, কাবাডি, ব্যাডমিন্টন, সাঁতার, অ্যাথলেটিক্স ও বাস্কেটবলের বিভিন্ন ইভেন্ট থাকবে সে উৎসবে। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে সে তারুণ্যের উৎসব। পুরো আয়োজনে জুলাই-আগস্টের গণ অভ্যুত্থানের বিভিন্ন ছাপ রাখার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
পবিত্র কোরআন তেলোয়াত, গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল পাঠ দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুহাম্মদ হিরুজ্জামান স্বাগত বক্তব্য রাখেন। তারপর পর্দায় প্রদর্শিত হয় জুলাই-আগস্টের ছাত্র জনতার আন্দোলনে শহীদদের নিয়ে মর্মস্পর্শী প্রামাণ্যচিত্র। পরে আন্দোলনে শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতাও পালন করা হয়।
ওই তারুণ্যের উৎসব ‘২০২৫’-এর মিডিয়া লঞ্চিং উপলক্ষে আজ রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢাকা ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে বসেছিল তারার মেলা। ক্রিকেটার, ফুটবলার, বিভিন্ন মহাদেশীয় পর্যায় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আসরে দেশের জন্য সাফল্য বয়ে আনা একঝাঁক ক্রীড়াবীদ উপস্থিত ছিলেন এ অনুষ্ঠানে।
দেশের ফুটবলের জীবন্ত কিংবদন্তি কায়সার হামিদ, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান, টেবিল টেনিসের রানী জোবেরা রহমান লিনুর পাশে তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, নাজমুল হোসেন শান্ত, জাতীয় ফুটবল অধিনায়ক তপু বর্মণ, নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জোতি, সাবেক অধিনায়ক সালমা খাতুন, দেশীয় টেবিল টেনিসের রানী জোবেরা রহমান লিনু, এসএ গেমসে ভারোত্তোলনে স্বর্ণপদক বিজয়ী মাবিয়া আক্তাররা আলো ছড়িয়েছেন আজকের এ অনুষ্ঠানে।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এই তারুণ্যের উৎসবের মাধ্যমে দেশ পুনর্গঠন ও রাষ্ট্র সংস্কারের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘খেলাধুলা আমাদের ঐক্যবদ্ধ করে। বিশেষ করে ক্রিকেট আমাদের ঐক্যবদ্ধ করে। ভিন্ন ক্ষেত্রে যত মতবিরোধই থাকুক, খেলার ক্ষেত্রে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাই। জাতীয় ঐক্য বজায় রেখে দেশ পুনর্গঠন ও রাষ্ট্র সংস্কারে এগিয়ে যাওয়াই এই তারুণ্যের উৎসব ২০২৫এর অন্যতম উদ্দেশ্য।’
অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ হিসেবে একদম শেষে উন্মোচন করা হয় ছেলেদের বিপিএলের ১১তম আসরের মাসকট ও থিম সং। দেশের একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের আগের ১০টি আসরে ‘থিম সং থাকলেও কোন মাসকট ছিল না।
নতুন আসরে গত জুলাই-অগাস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের স্মৃতিকে ধারণ করে মাসকটের নাম রাখা হয়েছে ‘ডানা ৩৬।’ যা মূলত ডানা প্রসারিত করা একটি সাদা পায়রা।
মাসকটের নামের ডানা শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে মুক্তি ও স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে। গত জুলাই-অগাস্টের গণ আন্দোলনের স্মরণীয় ৩৬ দিনের জন্য মাসকটের দুই পাশে ১৮টি করে রাখা হয়েছে মোট ৩৬টি রঙিন পালক। যা প্রতিটি স্বপ্নবাজ, উদ্যমী, অপ্রতিরোধ্য তরুণের নতুন বাংলাদেশ গড়ার অনুপ্রেরণা জোগায়।
বিসিবি সভাপতি ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মোহাম্মদ ইউনূসের উচ্চারিত শব্দমালা ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’ সামনে রেখেই এই থিম সং তৈরি করা হয়েছে। তারুণ্যের উৎসবের প্রতিপাদ্যও এই শব্দমালা।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব রেজাউল মাকসুদ পুরো আয়োজন সম্পর্কে একটা ধারণা দেন। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বিপিএল দিয়ে শুরু হলেও ফুটবল, কাবাডি, ব্যাডমিন্টন, সাঁতার, অ্যাথলেটিকস ও বাস্কেটবলের নানান খেলাও থাকবে ঐ তারুণ্যের উৎসবে।
এআরবি/আইএইচএস