সাত-আট নম্বরে নেমেও দলের ভরসা মিরাজ
পরিসংখ্যানকে মানদণ্ড ধরলে হয়তো ২০২৪ সাল মেহেদী হাসান মিরাজের টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা বছর। চলতি বছর এখন পর্যন্ত মিরাজের সংগ্রহ ৪৬১ রান। ব্যাটিং পজিশন অনুযায়ী এ বছর বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক হলেন মিরাজ। ডানহাতি টাইগার ক্রিকেটারের আগে আছেন কেবল শ্রীলঙ্কার কামিন্দু মেন্ডিস। লঙ্কান এই ব্যাটার করেছেন ৬৩৪ রান।
কোন পজিশনে ব্যাটে করে আসলে সেরাদের সঙ্গে যুক্ত হলেন মিরাজ, সেটা স্পষ্ট করা যাক। এ বছর টেস্ট ক্রিকেটে সাত থেকে এগারো নম্বর পজিশনে ব্যাটিং করেছেন এমন ব্যাটারদের মধ্যে শ্রীলঙ্কার লোওয়ার মিডলঅর্ডার কামিন্দু মেন্ডিসের রান সর্বোচ্চ; ৬৩৪ রান। এই তালিকায় মিরাজ দ্বিতীয় স্থানে।
বছরটা ভালো কাটলেও মিরাজের আক্ষেপ কমেনি। কারণ, এই বছর মোট চার অর্ধশতকের কোটা পার করে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন মিরাজ। কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছেন। পারেননি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে। একবারও দেখা পাননি সেঞ্চুরির।
চলতি বছর মিরাজের টেস্ট পরিসংখ্যান দেখে নেওয়া যাক-
এ বছর এখন পর্যন্ত ৭টি টেস্ট খেলেন মিরাজ। এসব টেস্টে ডানহাতি এই ব্যাটারের ১৪টি ইনিংস হলো- ১১, ৩৩, ৭, ৮১, ৭৭, নামেননি, ৭৮, নামেননি, ২৭, ৮, ২০, ৯, ১৩ ও ৯৭।
অর্থাৎ দুই ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামেননি মিরাজ। বাকি ইনিংসের গুলোর মধ্যে চারবার অর্ধশতক পেরিয়ে গেছেন তিনি। কিন্তু একবারও তিন অংকে পৌঁছাতে পারেননি।
গেল মার্চে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৮১ রানে অপরাজিত ছিলেন মিরাজ। ওই টেস্টে জয়ের জন্য বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল ৫১১ রান। কিন্তু ৩১৮ রানেই অলআউট হয়ে যায় স্বাগতিকরা। মিরাজ আট নম্বরে নেমে ১১০ বলে ১৪ বাউন্ডারিতে ৮১ রান করেন। মিরপুর টেস্টের মতো ওই ম্যাচেও মিরাজের সঙ্গে ছিলেন তাইজুল ইসলাম ও হাসান মাহমুদ।
এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে গত আগস্টে টানা দুই টেস্টে আট নম্বরে নেমে যথাক্রমে ৭৭ ও ৭৮ করেন মিরাজ।
ডানহাতি টাইগার ব্যাটারের ৭৭ রানের ইনিংস শেষ হয় পাকিস্তানি ফাস্টবোলার শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে। অফ স্টাম্পের বাইরের বল মারতে গিয়ে আগা সালমানের হাতে ক্যাচ হন তিনি। আর ৭৮ রানে গুডলেন্থের বলে স্ট্রেইট ড্রাইভ খেলতে গিয়ে পেসার খুররম শাহজাদের হাতে ফিরতি ক্যাচ হন মিরাজ।
ভারতের বিপক্ষে গত সেপ্টেম্বরে দুই টেস্টের সিরিজটা অবশ্য ভালো কাটেনি মিরাজের। চেন্নাইতে দুই ইনিংসে করেন ২৭ ও ৮। কানপুর টেস্টে ২০ ও ৯ রানে আউট হন মিরাজ।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সদ্যসমাপ্ত টেস্টের প্রথম ইনিংসেও রান পাননি মিরাজ। করেন মাত্র ১৩ রান। শেষ ইনিংসে অনেক লড়াই-সংগ্রামের পর শতরানের (৯৭) সঙ্গে হাত মেলানো দূরত্বে গিয়ে থামেন তিনি।
অন্যপ্রান্তে স্পেশালিস্ট ব্যাটারের কেউ মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি। ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় (৪০) ও অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম (৩৩) আশা জাগিয়েও ব্যর্থ হন। কাগিসো রাবাদা, উইয়ান মুলদার ও কেশব মহারাজের সাড়াশী বোলিং আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে বাংলাদেশ।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিধ্বংসী বোলিংয়ের বিপক্ষে ঠান্ডা মাথায় ধৈর্য ও সংযম দিয়ে ব্যাট করেন মিরাজ। অফ স্টাম্পের বাইরের বল ছেড়ে দেওয়ার মানসিকতা ছিল তার। অযথা ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলা থেকেও বিরত ছিলেন মিরাজ। ভালো বলকে সমীহ দেখানোর পাশাপাশি ওভার পিচ ও হাফ ভলি বল থেকে রান করতেই ছিলেন মনোযোগী।
অতি সাবধানে ৩ ঘন্টা ১১ মিনিট উইকেটে কাটিয়েও সেঞ্চুরির দোরগোড়ায় গিয়ে ধৈর্য হারান মিরাজ। শেষ ব্যাটার হাসান মাহমুদের ওপর আস্থা রাখতে পারেননি তিনি। ভেবেছেন রাবাদার মুখোমুখি হলে আউট হয়ে যাবেন হাসান। সেটি ভেবেই হয়তো ৯৫ রানের পর তড়িঘড়ি করে কিছু এলোমেলো শট খেলেন মিরাজ।
অবশেষে রাবাদার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে স্লিপে মুলদারের হাতে ক্যাচ হন মিরাজ। টেস্টে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পূর্ণ করা আর হলো না ডানহাতি টাইগার ব্যাটার।
ব্যক্তিগত সাফল্যের মুকুটে পালক বসলো না তাতে কী? সাত থেকে আট নম্বরে নেমেও যে স্বীকৃত ব্যাটারদের লজ্জায় ডুবিয়ে ভালো খেলা যায়, প্রতিপক্ষের ফ্রন্টলাইন বোলারদের আত্মবিশ্বাসকে মোকাবিলা করা যায়, দলকে সামনেও এগিয়ে নেওয়া সম্ভব, তারই জ্বলন্ত নজির তো ঠিকই স্থাপন করলেন মিরাজ।
টপ ও মিডল অর্ডাররা যখন ক্রমাগত ব্যর্থ, অকাতরে উইকেট বিসর্জন দিয়ে আসছেন, সেই অবস্থায় মিরাজ সাত ও আট নম্বরে (সাকিব না থাকায় মিরপুরে সাতে) নেমেও রান করছেন। শতরানের কাছাকাছি যাচ্ছেন, সেটাই তো অনেক।
এআরবি/এমএইচ/এএসএম