মুমিনুলের লড়াই-সংগ্রামে করা বীরোচিত সেঞ্চুরিও কি বিফলে যাবে?
প্রথম দিনের নির্ধারিত ৯০ ওভারে মধ্যে ৩৫ ওভার খেলা হয়েছিল। পরের দুইদিন অবিরাম বৃষ্টিতে আর বল মাঠে গড়ায়নি। শেষ দুদিন পুরো সময় খেলা হলেইবা কি! কানপুর টেস্টে ফল নিষ্পত্তির সম্ভাবনা খুব কম কিংবা এ টেস্ট নিষ্প্রাণ ড্রয়ের পথে, এমনটা যারা ভেবেছিলেন; তারা এখন নড়েচড়ে বসেছেন।
তাদের প্রথম নড়েচড়ে বসার কারণ মুমিনুল হক। প্রথম দিন ৪০ রানে অপরাজিত এ ছোটখাটো গড়নের বাঁহাতি টপঅর্ডার দুইদিন বৃষ্টির পর আজ সম্ভবত তার টেস্ট ক্যারিয়ারের সবচেয়ে লড়াকু ও সংগ্রামী শতক উপহার দিয়েছেন।
আগের ১২ সেঞ্চুরির কোনটাই হেলাফেলার নয়। ওই শতকগুলোকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। সবগুলোর মাঝেই আছে মুমিনুল হকের আন্তরিক প্রচেষ্টা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা, মনোযোগ, মনোসংযোগ আর আত্মনিবেদন।
কিন্তু ম্যাচ প্রেক্ষাপট আর প্রতিপক্ষ বোলিং শক্তির আলোকে বিচার করলে কানপুরে প্রথম ইনিংসে করা মুমিনুলের সেঞ্চুরিটি নিঃসন্দেহে অন্য উচ্চতায় থাকবে।
জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজ, আকাশ দীপের দুর্দান্ত পেস আক্রমণ আর রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজার মত দুই দুজন হাই কোয়ালিটি ও বিশ্বমানের স্পিনারকে মোকাবেলা করে লড়াই করা। যেখানে দলের অন্য ব্যাটাররা কেউই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি। সেখানে মুমিনুল ছিলেন আলাদা।
মুশফিকুর রহিম ১১, লিটন দাস ১৩, সাকিব আল হাসান ৯, মেহেদি হাসান মিরাজ ২০ রানের বেশি এগোতে পারেননি। সেখানে একদিক আগলে রাখার পাশাপাশি রান যা করার একাই করেছেন মুমিনুল।
আগের দিনের ৩ উইকেটে ১০৭ রানের সাথে আজ সোমবার আর ১২৬ রান যোগ করেছে বাংলাদেশ, তার ৬৭ রানই এসেছে মুমিনুল হকের ব্যাট থেকে।
সেটাই শেষ কথা নয়। আরও একটি ছোট্ট পরিসংখ্যান দেখে নিন। মুমিনুল ছাড়া বাংলাদেশের বাকি ৭ ব্যাটার জাকির (৩৯ মিনিট), সাদমান (৫৪ মিনিট), শান্ত (৭৩ মিনিট), মুশফিক (৫৪ মিনিট), লিটন ( ৪৬ মিনিট), সাকিব (২৪ মিনিট) আর মিরাজ (৫৩) মিলে ব্যাট করেছেন ৩৪৩ মিনিট।
মুমিনুল একাই ২৯৮ মিনিট ব্যাট করে আউট হননি। শেষ পর্যন্ত মুমিনুলের সংগ্রাম করা ১০৭ রানের হার না মানা ইনিংসের ওপর ভর করেই ২৩৩ পর্যন্ত পৌঁছেছে বাংলাদেশ।
খেলা না দেখে যে কেউ ভাবছেন, তাহলে তো কাজের কাজ হয়েই গেছে। বাংলাদেশপরাজয় এড়িয়ে ড্র করার পথে অনেকদূর এগিয়ে গেছে। আর মুমিনুল হকের অসাধারণ শতরানই সে পথে নিয়ে গেছে টাইগারদের।
কিন্তু আসলেই কি তাই? বাংলাদেশ কি এ ম্যাচ সত্যই ড্র করতে পারবে? মুমিনুল হকের অমন সংগ্রামী সেঞ্চুরি কি ম্যাচ বাঁচানো শতকের মর্যাদা পাবে? অবস্থাদৃষ্টে কিন্তু তা মনে হচ্ছে না।
বরং ভারতীয়রা হাত খুলে টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডে মেজাজে খেলে বাংলাদেশকে বিপাকে ফেলতে মরিয়া। শেষ পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি মেজাজে খেলে ভারতীয়রা ৯ উইকেটে ২৮৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করলো। প্রথম ইনিংসে তারা এগিয়ে ৫২ রানে। বাংলাদেশ দিন শেষ করেছে ২ উইকেটে ২৬ রান নিয়ে।
এখনও ২৬ রানে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। বাকি ৮ উইকেট দিয়ে এই রান পাড় করার পর টার্গেট দিতে হবে। বাংলাদেশের সামনে তাই কঠিন চ্যালেঞ্জ।
টেস্টের শেষদিনে প্রথম দুই সেশন টিকতে না পারলে এই ম্যাচে হারার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের। ভারতীয়রা আজ ওভারপিছু ৮ রানের বেশি তুলে দেখিয়ে দিয়েছে, শেষ ঘণ্টায় ১৫ ওভারে ১৫০ রানের টার্গেট পেলেও তারা সেই লক্ষ্যে পৌঁছে যেতে পারে।
এখন খেলার যা অবস্থা, তাতে শান্ত বাহিনীর ম্যাচ বাঁচানো কঠিন। ম্যাচ বাঁচাতে হলে দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে মুমিনুল, মুশফিক, সাকিব, লিটন, মিরাজদের। নাহলে কার্যত তিনদিনেই টেস্ট হেরে বসতে পারে টাইগাররা। ভক্তদের প্রত্যাশা, তেমন কিছু না হোক।
এআরবি/এমএমআর/এমএস