সাকিবদের জয় দেখে ১৫ বছর আগের সেন্ট ভিনসেন্টকে মনে পড়লো আশরাফুলের

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০১:০০ এএম, ১৫ জুন ২০২৪

যদিও গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। তারপরও প্রতিপক্ষ এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ডাচদের নিয়ে তেমন ভয়-ডর ছিল না বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। তবে একটা চাপা সংশয় ঠিকই ছিল। সে সংশয়টা খানিক দানা বেঁধেছিল উইকেটের কারণে। কারণ, যে ভেন্যুতে খেলা, সেই কিংসটাউনের সেন্ট ভিনসেন্টে টাইগারদের খেলা হয় না প্রায় একযুগ।

সেন্ট ভিনসেন্টে শেষ টেস্ট হয়েছিল ১০ বছর আগে, ২০১৪ সালে। ওয়ানডে হয়েছিল ২০১২ সালে; অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর শেষ আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি ম্যাচ হয়েছে ১১ বছর আগে ২০১৩ সালে।

সেন্ট ভিনসেন্টের এই মাঠে খেলার অভিজ্ঞতা আছে কেবল সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও নিজের চোখে এই মাঠ দেখেননি। কাজেই উইকেটের চরিত্র, আচরণ, প্রকৃতি সবই প্রায় অচেনা-অজানা বাংলাদেশের। এমন মাঠে কী করবে টাইগাররা, সেটি নিয়ে সাধারণ দর্শকের মনেও ছিল সংশয়।

এত সংশয়ের পাশাপাশি এই ভেন্যুতে আরও একটা মধুর স্মৃতিও আছে বাংলাদেশের। যদিও তা ভিন্ন ফরম্যাট, মানে টেস্টে। তবে ইতিহাস জানাচ্ছে, সেই সুখ-স্মৃতিটা যে অনেক বড়।

ইতিহাস সাক্ষী, ১৫ বছর আগে কিংসটাউনের এই ভিনসেন্টের আরনোস ভ্যালেতেই দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেটা ২০০৯ সালের জুলাইয়ের ঘটনা। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে তারকা ও প্রতিষ্ঠিত প্রায় সব ক্রিকেটার ছাড়াই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৯৫ রানে টেস্ট জয়ের স্বাদ পেয়েছিল টাইগাররা।

তবে মাশরাফি মাঠে থেকে জয়ের মিশনে নেতৃত্ব দিতে পারেননি। প্রথম ইনিংসে বোলিং সূচনা করে ৬.৩ ওভার পর বল করতে গিয়ে মাসল ক্র্যাম্প করে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন মাশরাফি। আর মাঠে নামা হয়নি তার। সে ইনজুরি সারতে সময় লাগে। হাটুর অপারেশন করাতে হয়। আর তারপরই অকালে শেষ শেষ হয় 'নড়াইল এক্সপ্রেসের' টেস্ট ক্যারিয়ার।

ওই ম্যাচে মাশরাফি ইনজুরিতে মাঠের বাইরে ছিটকে পড়লে সহ-অধিনায়ক সাকিব আল হাসান দল পরিচালনা করেন। সফল টেস্ট জয়ের মিশনে নেতৃত্ব দিয়ে দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ উপহার দেন এই অলরাউন্ডার।

একই ভেন্যুতে ১৫ বছর পর অধিনায়ক না হয়েও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের রূপকার ও নায়ক হলেন সাকিব। তার ব্যাট থেকে বেরিয়ে আসা ৬৪ (৪৬ বলে) রানের অপরাজিত ইনিংসটির ওপর ভর করেই জয়ের পুঁজি পায় টাইগাররা।

যে কারণে সাকিবকে গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পার হওয়ার পর নিজের ফেসবুক ওয়ালে এক স্ট্যাটাসে ‘টুটি খোলা’ সালাম জানিয়েছেন অগ্রজপ্রতিম মাশরাফি। আর টিম বাংলাদেশের প্রতিটি সদস্যের প্রতিও দেশ সেরা ও সফলতম অধিনায়ক জানিয়েছেন শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

নিজের স্ট্যাটাসে মাশরাফি ২০০৯ সালের ৯-১৩ জুলাই ভিনসেন্টের এই আরনোস ভ্যালেতে হওয়া সেই টেস্টের চালচিত্রও তুলে ধরেন। সেই পোস্ট পড়ে অনেক ক্রিকেটঅনুরাগীই জেনে গেছেন, ভিনসেন্টের আরনোস ভ্যালেতে টাইগারদের সাফল্যের ‘পয়মন্ত’ ভেন্যু।

সেই টেস্টে বাংলাদেশের দু'দুজন পারফর্মারের নৈপুণ্য এখনো অনেকের দৃশ্যপটে উজ্জ্বল। যার একজন তামিম ইকবাল। অন্যজন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটাররা কিছু করতে পারেননি। এই ইনিংসে ৬৯ রানে পিছিয়ে থাকে টাইগাররা। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে দুর্দান্ত শতক উপহার দেন বাঁহাতি ওপেনার তামিম। তার ব্যাট থেকে আসে ১২৮ (৩১১ মিনিটে ২৪৩ বলে ১৭ বাউন্ডারি) রানের সত্যিকার টেস্ট ইনিংস। অপর বাঁহাতি জুনায়েদ সিদ্দিকী খেলেন ৭৮ রানের (২৩১ মিনিটে ১৬০ বলে) আরেক সহায়ক ইনিংস। এই দুই জনের সঙ্গে সাকিব (৪৮ বলে ৩০) ও মুশফিকুর রহিম (৯৭ বলে ৩৮) একজোড়া মাঝারি ইনিংস খেললে প্রথম ইনিংসে ঘাটতি পুষিয়ে ২৭৬ রানের লিড পায় বাংলাদেশ।

অপরদিকে তারকাশূন্য এক ঝাঁক নবীন ও অনভিজ্ঞ ক্রিকেটারে গড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বল হাতে চেপে ধরেন মাহমুদউল্লাহ ও সাকিব। ক্যারিয়ারে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেট পাওয়া মাহমুদউল্লাহ দ্বিতীয় ইনিংসে ৫১ রানে ক্যারিবীয়দের ইনিংসের অর্ধেক উইকেটের (৫ উইকেট) পতন ঘটিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন।

টেস্ট অভিষেকে ৮ উইকেট পাওয়া অফস্পিনার মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে সাকিবের অবদানও কম ছিল না। প্রথম ইনিংসে ২ উইকেট পাওয়া সাকিব দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৯ রানে তুলে নেন ৩ উইকেট। আর তাতেই বড় জয় পায় বাংলাদেশ।

দীর্ঘ ১৫ বছর পর ভিনসেন্টের ওই জয়ের সুখ-স্মৃতিচারণ করেছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। বলে রাখা ভালো যে, তামিম, ইমরুল কায়েস, জুনায়েদ, রকিবুল হাসান, মুশফিক, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, মাশরাফি, সাহাদাত হোসেন ও রুবেল হোসেনের সঙ্গে সেই টেস্ট জয়ী একাদশে ছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুলও। ওই সিরিজেই নেতৃত্ব হারান আশরাফুল।

শুক্রবার বাংলাদেশ সময় দুপুরে জাগো নিউজের সাথে মুঠোফোন আলাপে সেই ভিনসেন্ট টেস্টের স্মৃুতিচারণ করতে আশরাফুল ঠিক জানিয়ে দিলেন, হ্যাঁ, সব কিছুই মনে আছে আমার।

আশরাফুল বলেন, ‘আমার ক্যাপ্টেন্সি হারানোর পর প্রথম টেস্ট সিরিজ খেলতে গেলাম। মাশরাফি ক্যাপ্টেন হলো। আর সেই ম্যাচেই আহত হলো। চলে আসলো। পরে সাকিব ভাইস ক্যাপ্টেন ছিল। সেই ক্যাপ্টেন্সি করলো। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে তামিম চমৎকার এক সেঞ্চুরি করেছিল। সেটাও ঠিক মনে আছে।’

‘তবে ওই টেস্টে আমার সবচেয়ে বেশি মনে আছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কথা। সেটা ছিল তার অভিষেক টেস্টে। আর আজকের প্রতিষ্ঠিত ও তারকা ব্যাটার রিয়াদ সেই টেস্ট জীবন শুরু করে ৫ উইকেট দখল করেছিল। সেন্ট ভিনসেন্টে আমি আগেও খেলেছি। ২০০৩ সালে আমরা ওয়ানডে সিরিজে একটা ম্যাচে ১ উইকেটে হেরেছিলাম। চমৎকার লড়াই হয়েছিল।’

নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করে যে, আশরাফুল সবার স্মৃতিচারন করলেন। তার নিজের কথা তো কিছুই বললেন না। ওই টেস্টে ব্যাটার আশরাফুল আসলে মোটেই সুবিধা করতে পারেননি। দুই ইনিংসে (৬ ও ৩ করে আউট) একবারও দুই অংকে পা রাখতে পারেননি।

১৫ বছর আগের সেন্ট ভিনসেন্টের আরোনাস ভ্যালের সঙ্গে এখনকার মাঠের অনেক পার্থক্য চোখে পড়েছে আশরাফুলের। তাই মুখে এমন কথা বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়কের।

আশরাফুল বলেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সবগুলো উইকেট আসলে মেধাবী ও ভালো মানের প্লেয়ারদের জন্য আদর্শ। মানে, যারা কোয়ালিটি প্লেয়ার তারা ভালো করতে পারেন। তিনি হোন ব্যাটার কিংবা বোলার, পেসার কিংবা স্পিনার। যিনি বল ঘোরাতে পারেন, সেই স্পিনারের বল ঘোরে। পেস বোলারদের বল একটু ক্যারি করে।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বার্বাডোসের উইকেট একটু বাউন্সি। আর অন্য উইকেটগুলো একটু কম বাউন্সি। অত বেশি লাফিয়ে ওঠে না। বার্বাডোসে বল একটু লাফিয়ে ওঠে।

‘সেই জায়গায় স্মৃতি হিসেবে আমার মাঠের বাইরের একটা ঘটনা খুব মনে আছে। আমরা যে সুইমিংপুলে গোসল করতাম, সেখান থেকে কিছু দূরে আরও একটা দ্বীপ ছিল। আমি আর আমাদের তখনকার ট্রেনার ডিন উডফোর্ড সুইমিং শেষ করে স্পিডবোট নিয়ে চলে যেতাম ওই দ্বীপে। পানিটা খুব পরিষ্কার ছিল।’

বাংলাদেশের দলের সাবেক এই অধিনায়ক আরও বলেন, ‘ভিনেসেন্টের স্টেডিয়ামটা এখন যত সুন্দর হয়েছে, তখন এত সুন্দর ছিল না। কালকে টিভিতে দেখলাম, চমৎকার আউটফিল্ড। আমার মনে হয় বিশ্বের অন্যতম সেরা আউটফিল্ড। আমাদের সময় ঘাস একটু কম ছিল। উইকেটটাও ভালো ছিল। আমরা আমাদের বেস্ট ক্রিকেটটা খেলেছি।’

 

এআরবি/এমএইচ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।