‘আমরাতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো দল নই, তাই হারানোর কোনো ভয় নাই’

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৪:০৪ পিএম, ০৩ জুন ২০২৪

বিশ্বকাপের আগে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হার। এরপর প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতের কাছে রীতিমত বিধ্বস্ত হওয়া- সব মিলিয়ে টিম বাংলাদেশের অবস্থা খুবই বাজে। টপ অর্ডারের ব্যাটাররা ফর্মে নেই, মোস্তাফিজ ছাড়া কোনো বোলার ছন্দে নেই- টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কী করবে? কতদূর যেতে পারে- এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাজেভবে সিরিজ পরাজয়ের পর বাংলাদেশ দলের যে অবস্থা তা নিয়ে চরম হতাশ এক সময় বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের অবিচ্ছেদ্য অংশ, সাবেক অধিনায়ক এবং বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে একাদশ গঠন নিয়ে।

একই সঙ্গে আশা প্রকাশ করেছেন, সবকিছু ভুলে ক্রিকেটাররা বিশ্বকাপে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলবে। তেমনটা করতে পারলে হয়তো বিশ্বকাপে ভালো কিছু করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের জন্য কিছু পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

জাগো নিউজের সঙ্গে খালেদ মাহমুদ সুজনের একান্ত সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো পাঠকদের উদ্দেশ্যে...

জাগো নিউজ: যুক্তরাষ্ট্রর কাছে সিরিজ হারকে কিভাবে দেখছেন?

খালেদ মাহমুদ সুজন: মিথ্যে বলবো না, হতাশতো অবশ্যই। পুরো দেশই হতাশ। লো স্কোরিং গেম, নাগালের মধ্যে থাকা রানও চেজ করতে পারিনি। তবে সত্যি কথা বলতে কি, আমি কিন্তু চিন্তিত, শঙ্কিত না। কারণ শেষ ম্যাচটাতো আমরা খুব ভাল মত জিতেছি। একদম দাপুটে জয় যাকে বলে। আমি মনে করি আমেরিকার মত দলের সাথে এটাই আমাদের সত্যিকার অ্যাবিলিটি হওয়া উচিৎ।

জাগো নিউজ: তাহলে কেন পারলোনা শান্তর দল? কি কারণে সিরিজে পরাজয়?

সুজন: আসলে আমারও ঠিক বোধোগম্য হচ্ছে না আসলে ঠিক কী কারণে হেরেছি আমরা। তারপরও আমার মনে হয় প্রথম ম্যাচ হেরেছি কম্বিনেশন ঠিক না থাকায়। প্রথম দিন আমরা ভুল একাদশ নিয়ে মাঠে নেমেছিলাম। যে ছেলেটি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে রান করলো, সেই তানজিদ তামিমকে ড্রপ দিলাম। তাকে বাইরে রেখে দল সাজালাম। আমার কথা হলো, সেখানে দেখার কিছু নেই। ২ জন স্ট্যান্ডবাই সহ যে ১৭ জন যুক্তরাষ্ট্র গেছে, সবাই ভাল প্লেয়ার। সবার সামর্থ্য জানা। সেখানে লিটন ভাল খেলবে কিনা? তা খুঁটিয়ে দেখার দরকার ছিল না।

একটা সিরিজ খেলতে গেছি আমরা, আমার মনে হয় টিম ম্যানেজমেন্টের এটা মাথায় আনা উচিৎ ছিল যে এ সিরিজ জেতার জন্য খেলা উচিৎ। এই সব দলের সাথে হারলে দেশে ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হবে। সে সব ব্যাপার মাথায় না এনে টিম ম্যানেজমেন্ট ১১ জন ঠিক করলো ইনফর্ম ওপেনার তানজিদ তামিমকে বাইরে রেখে আউট অব ফর্ম লিটনকে নিয়ে। তানজিদ তামিমকে কেন খেলানো হলো না প্রথমদিন তা আমার বোধগম্য হয়নি।

আর পেস বোলিং ডিপার্টমেন্ট সাজানো হলো ২ জন মাত্র পেসার নিয়ে। আমি ভাবতেই পারি না উইকেট যতই স্লো থাকুক না কেন, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ২ জন মাত্র পেসার নিয়ে মাঠে নামা মানেই একটা ভুল ছকে আগানোর চেষ্টা। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে উইকেট আর পরিবেশ-পারিপাশ্বিকতা যেমনই থাক না কেন, ৩ জন পেসার খুব প্রয়োজন। টিম কম্বিনেশন আমার ভাল লাগেনি।

পরের ম্যাচগুলোয় আমরা খারাপ খেলিনি। ২১ বলে ১৮ রান দরকার, ওই অবস্থায় না পারার একটাই কারণ হতে পারে, তাহলো প্যানিকড হয়ে যাওয়া। ওই অবস্থায় প্যানিকড না হলে ম্যাচ হারার প্রশ্নই আসে না। কেন আমরা জিতিনি, কেন তাড়াহুড়ো করলাম, তা বুঝিনি। দুটি ছক্কা হাঁকালেই ম্যাচ জিতে যেতাম।

আর শেষ ম্যাচের সার্বিক পারফরম্যান্সে আমি সন্তুষ্ট। আমরা হয়তো চেজ করতে গিয়ে ২-৩ উইকেট পড়তেই পারতো। কিন্তু তানজিদ তামিম আর সৌম্য ভাল ব্যাটিং করে বিনা উইকেটে দলকে লক্ষ্যে পৌঁছে দিয়েছে। শেষদিন বোলিংটাও ছিল দারুণ। মোস্তাফিজ এক্সিলেন্ট। রিশাদও দারুন বল করেছে। নিজের দিনে মোস্তাফিজ ভয়ঙ্কর।

জাগো নিউজ: সার্বিকভাবে বিশ্বকাপে কেমন পারফরম্যান্স হবে, তা নিয়ে আপনি কী চিন্তিত? না আশাবাদী?

সুজন: আমি আসলে চিন্তিত নই। আমি বিশ্বাস করি, আমার আস্থা আছে- টিম ভাল খেলবে। আমার আশা ক্রিকেটাররা বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের আগের সময়টাতে যেন নিজেদের ঝালাই করে নিতে পারে।

জাগো নিউজ: বিশ্বকাপে টাইগারদের কাছ থেকে আপনার প্রত্যাশা কী?

সুজন: আমি মনে করি আমাদের চাপমুক্ত হয়ে ফ্রি ক্রিকেট খেলা উচিৎ। কারণ আমাদের মনে রাখা উচিৎ আমরাতো আর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মত দল না। আমাদের হারানোর কোন ভয় নাই। আমাদের ওই স্ট্রেন্থ এখনো হয়নি। আমি অনেস্টলি কথা বলি, আমাদের কোন ভয়-ডর নিয়ে খেলার কিছু নেই। তবে এটা সত্য, যুক্তরাষ্ট্র সফরে শেষ ম্যাচ বাদে আমি ফ্রিডম নিয়ে ক্রিকেট খেলতে দেখিনি। শেষ ম্যাচে তানজিদ তামিম আর সৌম্য ওইভাবে ব্যাটিং করলো। যদিও আমেরিকার বোলিং খুব দুর্বল ছিল। তারপরও রান করাটা একটা ব্যাপার। সব মিলে আমি বিশ্বাস করি বিশ্বকাপের মাঠে ছেলেরা ভাল করবে।

জাগো নিউজ: এই ভালোর রূপটা আসলে কী হতে পারে? আপনার প্রত্যাশা কী? আর আপনি আসলে কী বিশ্বাস করেন? এই দলের কতদুর যাওয়ার ক্ষমতা আছে?

সুজন: আমার মনে হয় যে, নেপাল-নেদারল্যান্ডসের সাথে আমাদের খুব ভাল খেলে বড় ব্যবধানে জেতা উচিৎ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমি মনে করি, বাংলাদেশ ৬০, শ্রীলঙ্কা ৪০ ভাগ। আমরা বেটার টিম। আমরা ফ্রিডম নিয়ে ভয়-ডরহীন কমান্ডিং ক্রিকেট খেলতে পারি তাহলে লঙ্কানদের হারানো সম্ভব।

হ্যাঁ, সাউথ আফ্রিকা বেটার টিম। পাওয়ার ক্রিকেট খেলে। তারপরও আমরা প্রোটিয়াদের ঘরের মাটিতে হারিয়েছি। ফ্ল্যাট উইকেটেও পেরেছি। বিশ্বাসটা থাকা জরুরি যে আমরা পারি। আমরা সাউথ আফ্রিকাকে হারাতে পারবো। যে বিশ্বাসটা আমার আছে, সেটা ক্রিকেটারদের থাকতে হবে। টিম ম্যানেজমেন্টের সে বিশ্বাস থাকতে হবে। এর বাইরে রাইট টিম, পারফক্টে ইলেভেন ঠিক করাও খুব ইমপরটেন্ট। আমি কার সঙ্গে কোথায় কাকে খেলাচ্ছি, সেটাও খুব পারফক্টে হতে হবে। এসব চিন্তা করে খেলানো উচিৎ।

জাগো নিউজ: ওপেনিংয়ে সংকট। এখানেও নানা পরীক্ষা-নীরিক্ষা হয়েছে। আপনার চোখে বেষ্ট ওপেনিং কম্বিনেশন কোনটা?

সুজন: তামিম-সৌম্য যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে ভালভাবে শেষ করলো, তাই তাদের দু‘জনকে নিয়েই চিন্তা করা উচিৎ। লিটন যেহেতু ফর্মে নাই, তাকে এখন আমি খেলানোর পক্ষে না। যদিও আমি একবাক্যে স্বীকার করবো, লিটনই আমাদের সেরা ব্যাটার। কিন্তু লিটন অফ ফর্মে। ফর্ম বলে কথা আছে। লিটন রান করছে না। চাপ নিয়ে নিচ্ছে। সিলেকশন অফ দ্য বল ভাল হচ্ছে না।

সেজন্য আমি মনে করি তামিম আর সৌম্য যেহেতু শেষ ম্যাচটায় ১০০‘র ওপরে রান করেছে। তাই ওদের দুজনার ওপরই আস্থা রাখা উচিৎ। অন্তত আগামী তিন চার ম্যাচে তামিম আর সৌম্যকে দিয়েই ওপেন করানো উচিৎ। তার আগে ওপেনিং জুটিতে চেঞ্জ আনার কোনই মানে হয় না।

এআরবি/আইএইচএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।