‘শান্ত, লিটন ও সৌম্যদের মানসিক সাপোর্ট দরকার’

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৯:৫৪ পিএম, ০২ জুন ২০২৪

বাংলাদেশের ব্যাটারদের, বিশেষ করে ওপেনার ও টপ অর্ডারদের কি হলো? তারা কি ব্যাটিং ভুলে গেলেন? সবাই একসঙ্গে রান খরায় ভুগছেন! কারো ব্যাট কথা বলছে না একদমই।

গতকাল ১ জুন নিউইয়র্কে ভারতের বিপক্ষে লিটন দাস, সৌম্য সরকার আর নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটিং এবং আউট হওয়ার ধরন দেখে ভক্তদের মন খুব খারাপ। তারা চরম হতাশ।

সবার একটাই প্রশ্ন, ব্যাটিংয়ের একি হতচ্ছিরি অবস্থা? লিটন দাস, সৌম্য সরকার আর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটিংয়ের একি করুন দশা? ফ্যাকাশে, অনুজ্জ্বল, শ্রী-হীন, আড়ষ্ট তিনজনই। মনে হয় যেন ব্যাটিং ভুলে গেছেন তারা। স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল ব্যাটিং, ফ্রি স্ট্রোক খেলা, বাউন্ডারি হাঁকানোর সামর্থ্যটাই মনে হয় একদম কমে গেছে।

প্রায় ২ বছর ধরেই টিম বাংলাদেশের ওপেনারদের খারাপ অবস্থা; কিন্তু ২ ওপেনার আর ওয়ান ডাউনের উইলোবাজদের এতটা খারাপ অবস্থা, ব্যাটিং দূর্বলতা চরমে- কে কবে দেখেছে?

অতীতের বা গত এক বছরের পারফরম্যান্সের পরিসংখ্যান দরকার নেই। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচটি ছাড়া প্রথম ২ ম্যাচ আর গতকাল শনিবার ভারতের বিপক্ষে প্র্যাকটিস ম্যাচের একটিতেও শান্ত, লিটন আর সৌম্যর ব্যাট কথা বলেনি।

কোথায় পাওয়ার প্লে’র প্রথম ৬ ওভারের ফিল্ডিং বিধিবদ্ধতা কাজে লাগিয়ে ফিল্ডারদের মাথার ওপর দিয়ে ফাঁকা জায়গায় বল পাঠাবেন, চার ও ছক্কার অবাধ প্রদর্শনী ঘটিয়ে ১৪০, দেড়শো স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করে ৬ ওভার শেষে অন্তত পঞ্চাশের ঘরে পৌঁছে যাবেন, তা না ৩০ পার করতেই যেন নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছেন লিটন, সৌম্য আর শান্তর। ফ্রি স্ট্রোক প্লে তো নয়ই, কেউ স্বচ্ছন্দেও খেলতে পারছেন না। ভারতের আর্শদিপ সিং, জসপ্রিত বুমরা ও হার্দিক পান্ডিয়ার বলে তাদের রীতিমত অসহায় মনে হয়েছে।

কেন তাদের এত খারাপ অবস্থা? শান্ত, লিটন দাস ও সৌম্য সরকারকে খুব কাছ থেকে দেখা কোচ সোহেল ইসলামের কাছে এ প্রশ্ন করা হলে তিনিও খানিকটা থমকে গেলেন। আজ রোববার বিকেলে জাগো নিউজের কাছ থেকে মুঠোফোনে এ প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে প্রায় ৩০ সেকেন্ড নীরব থেকে সোহেল ইসলাম বললেন, ‘মনে হয় অ্যাডজাস্টমেন্টে একটু প্রবলেম হচ্ছে।’

কি অ্যাডজাস্টমেন্ট? পাল্টা প্রশ্নর জবাবে সোহেলের উত্তর, আমরা তো ড্রপ-ইন পিচে তেমন খেলিনি কখনো। খেলার অভিজ্ঞতা খুব কম। প্র্যাকটিস কম করেছি। তাই ড্রপ-ইন পিচ সম্পর্কে ধারনাও কম। এটা একটা কারণ অবশ্যই।’

তাই বলে ব্যাটিংয়ের এমন ছন্নছাড়া অবস্থা? লিটন, শান্ত আর সৌম্য রান করা ভুলে গেছেন! ভারতের ফ্রন্টলাইন বোলারদের বিপক্ষে তাদের রীতিমত অসহায় লাগছিল। দেখে মনে হচ্ছিল যেন কিছুই পারেন না। কি করবেন? মারবেন নাকি ঠেকাবেন? তাই বুঝে উঠতে সমস্যা হচ্ছিল।

ভক্ত ও সমর্থকরা চিন্তিত, উদ্বিগ্ন; ‘প্র্যাকটিস ম্যাচেই এত আড়ষ্টতা, জবুথবু অবস্থা, মারবো না কি ঠেকাবো করে আউট হচ্ছে একেক জন। এই অনুজ্জ্বল, খাপছাড়া আর ছন্নছাড়া অবস্থা নিয়ে ওয়ার্ল্ডকাপের মূল পর্বে কী করবেন তারা?

বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে নামী ও জনপ্রিয় প্রশিক্ষক সোহেল ইসলাম অবশ্য ততটা চিন্তিত নন। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের বাইরে থাকা জাতীয় দলের টেস্ট আর ওয়ানডে পারফরমারদের ‘চার্জড আপ’ ও ‘ফাইন টিউন্ড’ রাখার কাজে গড়া বাংলাদেশ টাইগার্স-এর প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করছেন সোহেল।

ভক্ত, সমর্থক আর অনুরাগীদের একটু ধৈর্য্য ধরার আহ্বান তার কন্ঠে। সোহেল ইসলামের কথা, ‘মনে রাখতে হবে, এরাই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আমাদের বেস্ট প্লেয়ার। তাদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখা দরকার।’

তার বিশ্বাস, ‘অন্য কোনো সমস্যা নয়। লিটন, সৌম্য আর শান্ত তিনজনই খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। কেউ ফর্মে নেই।’

লিটন, সৌম্য আর শান্তর যখন ফর্ম খুব খারাপ, তখন তাদের বিকল্প কী খোঁজা যেত না? কেন একসঙ্গে তিনজন ফর্মহীন প্লেয়ারকে দলে রাখা হলো?

সোহেলের ব্যাখ্যা, ‘এরা প্রুভেন প্লেয়ার। একটা খারাপ সময় যাচ্ছে তাদের। অনেক সময় এটা হয়। আপনি যাদের নাম বললেন তারা এর আগে দেশে ও দেশের বাইরে ভাল পারফর্ম করেছেন। পারফর্ম করেই আজকের অবস্থানে তারা।’

সোহেল মনে করেন, সমালোচনার তীর না ছুঁড়ে , ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ না করে এ সময়ে লিটন, সৌম্য আর শান্তকে মানসিক সাপোর্ট দেয়া দরকার।

ওই তিন ব্যাটার সম্পর্কে সোহেলের মূল্যায়ন, ‘কেউ কেউ ব্যক্তিগত পর্যায়ে সমালোচনা করছেন। স্কিল, টেকনিক নিয়েও কথা বলছেন। টেকনিক আর স্কিল নিয়ে কথা বলে লাভ নেই। ভুলে গেলে চলবে না এই স্কিল দিয়েই তারা সাকসেস হয়েছে। তো আমাদের সবার পজিটিভ থাকা উচিৎ। দিন শেষে এরা আমাদেরই ক্রিকেটার। আমাদেরই জাতীয় দল এটা। আমরা যদি পজিটিভ ফিডব্যাক দিতে পারি, তাহলে ওরা ওই খারাপ সময় থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে।’

সোহেল যোগ করেন, ‘এটা ম্যাটার অফ এ ইনিংস। একটি ঝকঝকে আর ঝলমলে ভাল ইনিংসই দেখবেন ওপরের দিককার ব্যাটারদের অনুজ্জ্বলতা কেটে যাবে। তাদের আস্থা ও আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে। আমার ওদের ওপর অনেক বিশ্বাস আছে। আমার আশা আমাদের টপ অর্ডার বিশ্বকাপের মূল পর্বে ভাল খেলবে।’

বাংলাদেশের ব্যাটিং কেন এত অনুজ্জ্বল মনে হচ্ছে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে সোহেল একটি জবাবই বের করতে পেয়েছেন। তার ব্যাখ্যা, ‘টপ অর্ডার জ্বলে না ওঠায় এবং ওপরের দিকের ব্যাটাররা রান না করায় টিম বাংলাদেশের পুরো ব্যাটিংটাকে অনেক বেশি অনুজ্জ্বল, ছন্নছাড়া, হতশ্রী ও শ্রী-হীন মনে হচ্ছে।’

সোহেলে দাবি, নিচের দিকের ব্যাটাররা কন্ট্রিবিউট করার চেষ্টা করছে। ওপরের দিকের প্লেয়াররা যদি নর্মালি পারফরম করতো তাহলে নিচের দিকের সাথে মিলে আমার কাছে মনে হয়, পারফরমেন্স ভাল হতো। আমার মনে হয় মিডল ও লেট অর্ডারে মাহমুদউল্লাহ ও সাকিবসহ অন্যরা মোটামুটি ছন্দে আছে। রান করছে। কাজেই ওপরের দিক থেকে কেউ জ্বলে উঠলে বা টপ অর্ডাররা রান পেলে দেখবেন ব্যাটিংটাকে এতটা খারাপ ও অনুজ্জ্বল মনে হবে না।

এআরবি/আইএইচএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।