‘স্কোয়াডে একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের দরকার ছিল’

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৮:৪৪ পিএম, ৩০ মে ২০২৪

একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার অন্য যে কোনো দলের সঙ্গে মূল পার্থক্যটা গড়ে দেয়। একদিকে বল হাতে দুর্দান্ত পারফম্যান্স দেখাবেন, অন্যদিকে ব্যাট হাতেও মারমুখি হয়ে উঠবেন। এমন একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার ছিলেন সাইফউদ্দিন। বিপিএলের শেষ দিকে এসে ফরচুন বরিশালের শিরোপা জয়ে মূল ভূমিকা রেখে আলোচনায় আসেন।

কিন্তু জিম্বাবুয়ে সিরিজে একটু খরুচে হয়ে পড়েছিলেন। যে কারণে শুরুতে বিশ্বকাপের স্কোয়াডে থাকলেও পরে তাকে বাদ দেয়া হয়। অথচ, মাত্র কিছুদিন আগে নির্বাচক কমিটি থেকে বাদ পড়া হাবিবুল বাশার সুমনের অনুভব, দলে একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার থাকা খুব প্রয়োজন ছিল। সুমন নির্দিষ্টভাবে সাইফউদ্দিনের কথাই বলেছেন।

তবে একই সঙ্গে এটাও জানিয়েছেন, যখন একটি দল গঠন হয়ে যায়, তখন এ নিয়ে সমালোচনা বা কথা না বলাই উত্তম। জাগোনিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে সাবেক অধিনায়ক এবং সাবেক নির্বাচক কমিটির সদস্য হাবিবুল বাশার সুমন খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন, টি-টোয়েন্টিতে মূলত কোথায় ঘাটতি বাংলাদেশ দলের, কোন জায়গাটা নিয়ে কাজ করতে হবে। কিভাবে সাফল্য আসবে, সেই পরামর্শও থাকলো তার সাক্ষাৎকারে।

হাবিবুল বাশার সুমনের একান্ত সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো জাগোনিউজের পাঠকদের জন্য...

জাগো নিউজ: যুক্তরাষ্ট্রর সাথে সিরিজটা কিভাবে দেখছেন?

হাবিবুল বাশার: লাস্ট ম্যাচে জেতাটা অবশ্যই পজিটিভ সাইন। প্রথম দুটি ম্যাচের কোনোটাই আমাদের পক্ষে যায়নি। আমরা ব্যাটিং ভাল করিনি। বোলিং ভাল হয়নি। কোন কিছু ভালো করিনি। শেষ ম্যাচটা স্ট্রংলি কামব্যাক করা খুব জরুরি ছিল। আমরা তা করে দেখিয়েছি। আমার মনে হয় ভারতের সাথে প্রস্তুতি ম্যাচটাও খুব ইম্পরট্যান্ট হবে।

জাগো নিউজ: যুক্তরাষ্ট্রর সাথে সিরিজ হারটাকে কিভাবে দেখছেন?

হাবিবুল বাশার: আমার কাছে মনে হয় বিশ্বকাপের আগে ম্যাচে ঢুকে যাব, সে বিষয়টি সম্পূর্ন ভিন্ন। তার আগে কোন সিরিজ জিতলেই খুব চাঙ্গা থাকবো, বিশ্বকাপের মাঠে নেমেই সব ফাটিয়ে দেব, এমন নয়। আবার হেরে বিশ্বকাপ শুরু করা মানেই যে সব শেষ, তাও নয়। আর পারবো না তাও মনে হয় না। তারপরও বিশ্বকাপের আগে টিম আর খেলোয়াড়দের ফর্ম দুটিই খুব গুরুত্বপূর্ণ। নেক্সট দুটি ম্যাচ আমাদের খুব ভাল মত ব্যবহার করতে হবে। সেই দুটি ম্যাচের পারফরমেন্স ও ফল দুই’ই খুব কাজে লাগবে বিশ্বকাপে।

জাগো নিউজ: বিশ্বকাপের দলটা কেমন হলো? আপনারা থাকলে কি এই ১৫ জনকেই সিলেক্ট করতেন? নাকি স্কোয়াডটা ভিন্ন হতো?

হাবিবুল বাশার: আমি এই প্রশ্নের উত্তরটা একটু ভিন্ন ভাবে দিতে চাই। একটা বিষয় আমি খুব স্ট্রংলি ফিল করি, আমার মনে হয় দিস ইজ হাই টাইম যে, আমাদের এই কালচারটা থেকে বেরিয়ে আসা উচিৎ। একটা দল সাজানো হয়ে গেছে। আমরা থাকলে কি করতাম, আর কি হয়েছে, তা নিয়ে খুব বেশি কথা হয়। তা নিয়ে অনেক গুঞ্জন হয়।

Saifuddin

দেখুন, দল নির্বাচনের পর ‘ইফস অ্যান্ড বাট’ থাকেই। আমারও মনে হয় আমাদের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের দরকার ছিল। সাইফউদ্দিনের কথাই বলতে চাই। আরও এক দু’টি অপশনের কথা ভেবে দেখা যেত। নেয়াও যেত; কিন্তু আমার কথা হলো, যখন বিশ্বকাপ দল চূড়ান্ত হয়ে যায়, তারপর আর দল নিয়ে কথা না বলাই উত্তম।

কে আছেন, কে নেই? কাকে নেয়া হয়নি। দল হওয়ার পর আমরা সবাই এ নিয়ে অনেক কথা বলি। আমার মনে হয়, এখনই সেরা সময় এ ধরনের আলোচনা ও কথোপকোথন বন্ধ করার। অমুকের জায়গায় তমুক কেন নেই? ওকে নিলে ভাল হতো- আমরা সব সময় এ আলোচনা বেশি করি। আমার মনে হয়, ওয়ান্স যখন স্কোয়াড ফাইনাল হয়ে যায়, তখন আর সেই দল নিয়ে তীর্যক ও নেতিবাচক কথা-বার্তা না বলে পজিটিভ কথা বলা উচিৎ। ওয়ান শ্যুড ব্যাক দ্য টিম। নেগেটিভ আলোচনায় দলেরই ক্ষতি হয়।

জাগো নিউজ: এই দলের সম্ভাবনা কতটা, কতদূর যেতে পারে?

হাবিবুল বাশার: এক কথায় বলবো ফাস্ট রাউন্ড টপকে সেকেন্ড রাউন্ডে যাওয়াই কঠিন হবে। আমাদের গ্রুপটা টাফ। এখান থেকে পরের রাউন্ডে যাওয়া হবে বেশ শক্ত কাজ। গ্রুপে সাউথ আফ্রিকা আর শ্রীলঙ্কা আছে। প্রোটিয়া ও লঙ্কানদের নিয়ে নতুন করে আর কিইবা বলার আছে? নেদারল্যান্ডসকেও হেলাফেলার সুযোগ নেই। ভাল দল। নেপাল সম্পর্কে তেমন বেশি কিছু জানি না। তবে এটা জানি নেপাল যে স্তরে খেলে, সেই মানে দলটিতে কিছু পাওয়ার হিটারও আছে।

আসলে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে কোন দলকেই ছোট করে দেখার অপশন নেই। আমাদের প্রথম লক্ষ্যতো অবশ্যই ফার্স্ট রাউন্ড পার হয়ে সেকেন্ড রাউন্ডে খেলা। সেটা কিন্তু সহজ হবে না। কঠিন এক কাজ হবে।

জাগো নিউজ: দলে ওপেনার ৩ জন, যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলানো হয়েছে তাদেরকে। আপনার চোখে বেষ্ট পসিবল ওপেনিং কম্বিনেশন কী হতে পারে?

হাবিবুল বাশার: সৌম্য শেষ ম্যাচে রান করেছে। লিটন একদম আউট অফ ফর্ম। যদিও তানজিদ তামিমের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা কম। তারপরও সে রানে আছে। ছন্দে আছে। হি শ্যুড প্লে। লিটন আর সৌম্যর একজন। লিটন ভাল করে রানে ফিরলে খুব ভাল হতো। তাতে ডান ও বাঁ-হাতি কম্বিনেশনটা হতো।

আর লিটনতো নিঃসন্দেহে খুব ভাল ব্যাটার। এখন ফর্মে নেই সত্য, তবে লিটন নিজেকে নিয়ে কিভাবে ভাবছে- আমি ঠিক নিশ্চিত না। লিটনের শেষ কটা ইনিংস দেখে মনে হচ্ছে সে এখনো মেন্টালি সেটেল্ড বা সুস্থির নয়। রাইট ডিসিশনগুলো নিতে পারছে না। আমার মনে হয় না, সেটা তার স্কিলের সমস্যা। এটা পুরোই ফর্মের ব্যাপার। ব্যাটিংয়ের সময় রাইট ডিসিশনটা নেয়া খুব জরুরি; কিন্তু লিটন তা নিতে পারছে না। লিটন হলে খুব ভাল হতো। শান্তর তিনে খেলা উচিৎ। হয়ত লিটনকে চারে নামিয়ে আনা হবে।

জাগো নিউজ: টিম বাংলাদেশের প্রধান দুর্বলতা আর ঘাটতির জায়গা কোনটি?

হাবিবুল বাশার: নো ডাউট ব্যাটিং। ব্যাটিং ভাল করতে হবে। বোলিং মনে হয় না বড় ইস্যু। বোলিং যা আছে এটাই বেষ্ট। আমার মনে হয় না বোলিংয়ে খুব বেশি ল্যাকিং আছে। ভিন্ন কিছু করার অবকাশ নেই।

যুক্তরাষ্ট্রর সাথে বোলারদের লেন্থ অ্যাডজাস্ট করতে সমস্যা হয়েছে, তাই প্রথম ম্যাচে সমস্যা হয়েছিল বোলিংয়ে। পরের দুটিতে বোালাররা ঠিক নিজেদের মেলে ধরতে পেরেছে। আসল সমস্যা ব্যাটিংয়ে। ব্যাটারদের রান দরকার।

Liton Das

জাগো নিউজ: ব্যাটিংয়ে সমস্যা ঠিক কোথায়?

হাবিবুল বাশার: মূলত আমাদের টি-টোয়েন্টি স্কিল কম। কোন ব্যাটারের স্ট্রাইকরেট ১২০-এর ওপরে না। বিশ্বের সব ভাল দলের বড় ব্যাটারদের স্ট্রাইকরেট ১৪০-এর ওপরে। আমাদের পাওয়ার হিটার কম। সেটাই আমাদের সেট ব্যাক। আমাদের পাওয়ার হিটার নেই। আমাদের লেট অর্ডারে পাওয়ার হিটার নেই। মিডল অর্ডারেও নেই। ওপরের দিকেও কারো স্ট্রাইকরেট আহামরি নয়।

এমন যে দলের অবস্থা, সেই দলের পক্ষে আসলে ১৬০-এর বেশি করা কঠিন। ওই জায়গায় অন্য দলের চেয়ে পিছিয়ে পড়ি। তাই আমার অনুভব টি-টোয়েন্টিতে ভাল করতে হলে আমাদের বোলিং দিয়েই ভাল করতে হবে। আর সবাই যদি ছোট ছোট ইমপ্যাক্ট ফেলতে পারে তাহলে ভাল কিছু হতে পারে। ইন্টারন্যাশনাল লেভেলে তামিম ছাড়া আমাদের আর কারো সেঞ্চুরি নেই। অথচ প্রায় দলের ওপেনার, টপ ও মিডল অর্ডার ব্যাটারদের সেঞ্চুরি আছে।

এআরবি/আইএইচএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।