আবাহনী ছাড়াও যে দলের আছে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কীর্তি

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৮:০৩ পিএম, ০৬ মে ২০২৪

এবারের প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন আবাহনী। ভাবছেন, এ আর নতুন খবর কী? আবাহনী তো ৩০ এপ্রিল বিকেএসপিতে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবকে হারিয়েই শিরোপা নিশ্চিত করেছে। তাহলে আজ ৫ দিন পর আবার আবাহনীর শিরোপা জয়ের খবর কেন? আছে। কারণ আছে। আজ ৬ মে পড়ন্ত বিকেলে ট্রফি হাতে উৎসব করলো আকাশি-হলুদরা।

সোমবার হোম অব ক্রিকেটে শাইনপুকুর ক্লাবকে ৪ উইকেটে হারানোর মধ্য দিয়ে লিগ শেষ করলো খালেদ মাহমুদের শিষ্যরা। শাইনপুকুরের ৮ উইকেটে তোলা ২৩৪ রানের পিছু ধেয়ে ২৩ বল আগে ৪ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় আবাহনী।

টপ অর্ডার এনামুল হক বিজয় অনবদ্য সেঞ্চুরি উপহার দিয়ে (১২০ বলে ৪ ছক্কা ও ৭ বাউন্ডারিতে ১১০ অপরাজিত) আবাহনীর অপরাজিত লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার শুভদিনটিকে সোনালি সাফল্যে মুড়িয়ে রাখেন।

ইতিহাস জানাচ্ছে, ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে এটা আবাহনীর ২৩তম শিরোপা। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের নেতৃত্বে আবাহনী এবারের প্রথম লেগের ১১ খেলা আর সুপার লিগের ৫ ম্যাচসহ ১৬ ম্যাচের সবকটায় জিতে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হলো।

প্রশ্ন হলো, ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট লিগ যেটা এখন প্রিমিয়ার লিগ হিসেবে পরিচিত, সেটাতে এর আগে আর কোনো দলের অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড আছে কি? যদি থাকে, তাহলে কোন দলের-আবাহনী, মোহামেডান, ভিক্টোরিয়া, আজাদ বয়েজ নাকি বিমানের?

আবাহনীর সফলতম অধিনায়ক বর্তমান জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু স্মৃতি হাতড়ে মনে করতে পারছেন না।

তবে পরিসংখ্যান ঘেঁটে জানা গেছে, এবারই প্রথম নয় , এর আগে আরও পাঁচ-পাঁচবার ঢাকা ক্লাব ক্রিকেটে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব আছে আবাহনীর।

বিসিবির কোনো তথ্য-পরিসংখ্যানের নির্দিষ্ট ভান্ডার বা আর্কাইভ নেই, যা ঘেঁটে জানা যাবে স্বাধীনতার পর কোন লিগে কে কীভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
তবে আবাহনী সমর্থকগোষ্ঠির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আসাদউজ্জামান বাদশার কাছে আবাহনীর ক্রিকেট রেকর্ড সংরক্ষিত আছে।

তিনিই জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, আবাহনী স্বাধীনতার পর এর আগে ৫ বার অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। প্রথম অপরাজিত চ্যাম্পিয়নের বছর ছিল ১৯৭৬-৭৭ মৌসুমে। তখন লিগ হতো ৪০ ওভারের।

প্রতিপক্ষকে অলআউট করে জিততে পারলে পাওয়া যেতো পূর্ণ পয়েন্ট। আর প্রতিপক্ষকে অলআউট করতে না পারলে পূর্ণ পয়েন্ট মিলতো না। সেই নিয়মে প্রয়াত আলিউল ইসলামের নেতৃত্বে আবাহনী ১৯৭৬-৭৭ সৌমুমে প্রথম অপরাজিত লিগ বিজয়ী হয়।

এরপর আবাহনী যে চারবার অপরাজিত লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, তার তিনবারের অধিনায়ক ছিলেন গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। আর একবারের ক্যাপ্টেন ছিলেন সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার দিপু রায় চৌধুরী।

দিপু রায় চৌধুরীর নেতৃত্বে আবাহনী অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় ১৯৮২-৮৩ মৌসুমে। এরপর শুরু হয় গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর সাফল্যের গল্প।

লিপুর নেতৃত্বে আবাহনী ১৯৮৪-১৯৮৫, ১৯৮৫-১৯৮৬ আর ১৯৮৮-১৯৮৯'তে তিনবার কোনো ম্যাচ না হেরে সিনিয়র ডিভিশন (এখন যেটা প্রিমিয়ার লিগ) লিগ ট্রফি ঘরে তোলে।

এর বাইরে ধানমন্ডির এ জনপ্রিয় দলটি আরও এক বিরল রেকর্ডের অধিকারী হলো এবার। ২০১৩-২০১৪ মৌসুমে লিস্ট ‘এ’ হওয়ার পর এবার প্রথম দল হিসেবে আবাহনী সব ম্যাচ জিতে লিগ বিজয়ের অনন্য কৃতিত্ব দেখালো।

আবাহনীর ছয়-ছয়বার অপরাজিত লিগ চ্যাম্পিয়নের খবর শুনে ও জেনে নিশ্চিতভাবেই তাদের সমর্থক ও ভক্তরা উদ্বেলিত। এখন সোনালি দিন হারিয়ে ফেলা মোহামেডান সমর্থকরা হয়তো ভাবছেন, আমাদের প্রিয় দল কি একবারও অপরাজিত লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়নি?

সাদা-কালো সমর্থকদের জন্যও আছে সুখবর। মোহামেডানেরও আছে অপরাজিতভাবে ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব এবং সেটা মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর অধিনায়কত্বে।

মোহামেডানের স্বর্ণ সময়ের অন্যতম সারথি মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর নেতৃত্বে ১৯৮৭-১৯৮৮ মৌসুমে প্রথম অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় দলটি।

আজ সোমবার রাতে জাগো নিউজের সাথে আলাপে এ তথ্য নিশ্চিত করে নান্নু জানান, ‘আবাহনীতে ২ বছর খেলার পর মোহামেডানে যোগ দিয়ে আমি দ্বিতীয় বছরই ক্যাপ্টেন্সি পাই। আমার নেতৃত্বে ১৯৮৭-১৯৮৮ মৌসুমে ঢাকা লিগে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় মোহামেডান।’

এছাড়া মিনহাজুল আবেদিন নান্নু জাগো নিউজকে আরও একটি সাফল্যের গল্পও শোনান। সেটা অবশ্য আবাহনীর হয়ে। ১৯৮৪-১৯৮৫ মৌসুমে আবাহনীর হয়ে প্রথম লিগ খেলতে নেমে গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর নেতৃত্বে দলকে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন করার অন্যতম রূপকার ছিলেন নান্নু।

সেই স্মৃতিচারণ করে নান্নু বলেন, ‘আমি ওই বছর আবাহনীর হয়ে খেলতে নেমে লিগে ৭৩৯ রান করি এবং আবাহনী লিপু ভাইয়ের অধিনায়কত্বে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়।’

এআরবি/এমএমআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।