আশরাফুল
‘কেউ চাইলেই পাচ্ছে, তুষার-নাইমরা রান করেও সুযোগ পায়নি’
প্রায় ২৪ বছর হয়ে গেছে টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার। এখনও টেস্টে অসহায় আত্মসমর্পণ করে বাংলাদেশ। হারজিত খেলারই অংশ, কিন্তু টেস্টে কঠিন সময়ে যে ধৈর্য্যটা দরকার, তা এই ২৪ বছরেও যেন আয়ত্ত্ব করতে পারেনি টাইগাররা।
সিলেট টেস্টে ৫১১ রানের লক্ষ্য দাঁড়ালে লঙ্কানদের বিপক্ষে পরাজয় নিশ্চিতই ছিল। এমতাবস্থায় প্রতিরোধ গড়ে সম্মানজনক হারের চেষ্টা করার বদলে তেড়েফুরে মারতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশি ব্যাটাররা। বাংলাদেশ এত বছরেও কেন টেস্টের মেজাজটা ধরতে পারেনি?
সিলেট টেস্টের পর জাগো নিউজের সঙ্গে এমন পারফম্যান্স নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল। তিনি মনে করেন, টেস্ট অভিষেকের দুই যুগ পরও বাংলাদেশে এখনও এই ফরম্যাটের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সংস্কৃতিটা তৈরি হয়নি। দল গঠন, ক্রিকেটার নির্বাচনে প্রচুর অদূরদর্শিতা-ফাঁকফোকর রয়েই গেছে। চিন্তাভাবনাই টেস্টকেন্দ্রিক না। তাই পারফরম্যান্সের এ অবনতি।
তরুণ শাহাদাত হোসেন দিপুর উদাহরণ টেনে আশরাফুল বলেন, ‘শাহাদাত হোসেন দিপু মেধাবী তরুণ, সম্ভাবনাময়। আমরা জানি সে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ দলে খেলবে। কিন্তু সে এখনো টেস্টের জন্য প্রস্তুত না। কঠিন পরিস্থিতিতে ২০-৩০ রানের বেশি করে দেওয়ার মত মানসিক দৃঢ়তা ও সামর্থ্য তৈরি হয়নি তার। আমার মনে হয় না এখনই টেস্ট খেলার জন্য পুরোপুরি প্রস্তত সে। অথচ আমরা তাকে টেস্ট খেলাচ্ছি। আমি কিন্তু শুরু থেকেই বলে আসছি শাহাদাত দিপুকে এখন টেস্ট দলে নিয়মিত সুযোগ দেওয়ার দরকার নেই। আরও সময় নিয়ে তাকে আরও ভালমতো তৈরি হতে দিয়ে তারপর খেলতে দিলে ভালো হবে। কিন্তু আমরা তাকে নিয়মিতই টেস্ট দলে সুযোগ দিচ্ছি।’
‘একটু ভালো করে লক্ষ্য করুন, শাহাদাত দিপু ঘরোয়া দীর্ঘ পরিসরের খেলায় সেভাবে এখনও নিজেকে তৈরি করতে পারেনি। তার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সেঞ্চুরি মাত্র ২টি। অথচ লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তার পাঁচ-পাঁচটি শতক আছে। কিন্তু সেখানে তাকে আমরা এখনো সুযোগ না দিয়ে টেস্ট প্লেয়ার হিসেবে খেলাচ্ছি। আমি নিউজিল্যান্ডের সাথে তাকে খেলানোর সময়ই বলেছিলাম, কাজটা ভালো হচ্ছে না। দেখেন সে সফলও হয়নি।’
আশরাফুল যোগ করেন, ‘অথচ অতীতে ফিরে যান, একসময় নাইম ইসলাম প্রচুর রান করেছে। ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলেছে। কিন্তু তাকে সুযোগ দেয়া হয়নি। সাকিব ও তামিম ফিটনেস-টিটনেস নেই, তারপরও খেলতে চাইলেই সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। কেউ চাইলেই পাচ্ছে, কিন্তু নাইম ইসলাম-তুষার ইমরান ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অনেক রান করার পরও আমরা তাদের বিবেচনায় আনিনি। নানা অজুহাত দাঁড় করিয়েছি। তাদের ‘এ’ টিমে খেলতে হবে। এই করতে হবে, সেই করতে হবে। তবেইনা জাতীয় দলে সুযোগ পাবে। এসব বলে আর নেয়নি।’
আশরাফুল মনে করেন, টিম ম্যানেজম্যান্ট কখনই অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করেনি। তাই টেস্ট ফরম্যাটে প্রত্যাশিত উন্নতি হয়নি।
তার কথা, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা একেকজনের সাথে একেকরকম বিচার করি। টেস্ট ক্রিকেট হলো অভিজ্ঞতার খেলা। আমরা সেই অভিজ্ঞতার মূল্যই অতীতে কম দিয়েছি। এই জন্যই টেস্ট ক্রিকেটে আমাদের কাঙ্খিত উন্নতি হয়নি। উন্নতি হয়েছে। কিন্তু প্রত্যাশিত উন্নতি হয়নি।’
‘অন্য দলগুলো দেখবেন, খারাপ সময় কামব্যাক করে। এই যে এই টেস্টে শ্রীলঙ্কা উভয় ইনিংসে বিপদ থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে। আমাদের মতই প্রথম ২০ ওভারে লঙ্কানরাও স্ট্রাগল করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে সংকট কাটিয়ে উঠেছে। আমরা তা পারিনি। আসলে খারাপ সময় কামব্যাক করতে হলে ফিজিক্যালি ও মেন্টালি অনেক ফিট এবং স্ট্রং হতে হবে। আমাদের তা নেই।’
এআরবি/এমএমআর