নাজমুল আবেদিন ফাহিমের বিশ্লেষণ
টিম বাংলাদেশের হঠাৎ বদলে যাওয়ার রহস্য কী?
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে দীর্ঘ দেড় যুগের বেশি সময় ধরে সাদা বলে না পাওয়া জয়ের দেখা মিলেছে মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে এই নেপিয়ারে। শেষ ওয়ানডেতে কিউইদের ৯৮ রানে অলআউট করে ৯ উইকেটের দুর্দান্ত জয়ে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছেড়েছে শান্তর দল। একই মাঠে আজ বুধবার ব্ল্যাক ক্যাপসদের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম খেলায় ৫ উইকেটে হারিয়ে শুভ সূচনা করলো টাইগাররা।
হোক তা ভিন্ন ফরম্যাটে, তবে দুটি জয়ের ধরন এবং পেছনের গল্পটা প্রায় এক। ২৫ ডিসেম্বর শরিফুল ইসলাম, তানজিম হাসান সাকিব আর সৌম্য সরকারের সাঁড়াশি পেস আক্রমণ দিয়ে কিউই ব্যাটিংয়ে ধস নামিয়ে ৯৮’তে অলাাউট করা। পরে অধিনায়ক শান্ত ও এনামুল হক বিজয়ের আক্রমণাত্মক উইলোবাজিতে মাত্র ১ উইকেট খুইয়ে ১৫.১ ওভারে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যাওয়া।
ওয়ানডের মত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের প্রথম ম্যাচেও আবার শুরুতেই স্বাগতিকদের বিপাকে আর পিছনের পায়ে ঠেলে দেয়া। পরে ১৩২ রানে আটকে রেখে ৫ উইকেট আর ৮ বল হাতে রেখে জয় নিয়ে হাসিমুখে মাঠ ছাড়া।
ওয়ানডের শেষ ম্যাচে শুরুতে যিনি আঘাত হেনেছিলেন, সেই বাঁহাতি ফাস্টবোলার শরিফুল ইসলাম আজও শুরুতে কিউইদের চাপে ফেলার পাশাপাশি সর্বাধিক ৩ উইকেট দখল করেছেন।
তাই অনেকেই আজকের জয়কে ৪৮ ঘণ্টা আগে পাওয়া ওয়ানডের সাথে তুলনা করছেন। তাদের কথা-একই মাঠ, কন্ডিশন আর উইকেট এবং প্রায় অভিন্ন গেম প্ল্যানে নিউজিল্যান্ডকে এবার টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। আসলেই কি তাই?
দেশের অন্যতম নামী কোচ, ক্রিকেট বোদ্ধা-বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষক নাজমুল আবেদিন ফাহিমের কাছে এ প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হলে তিনি উত্তর দেন এভাবে,
‘শেষ ওয়ানডের কিছু কন্টিনিউশন তো ছিলই। আছেও। সে ম্যাচ থেকে কিছু ইতিবাচক প্রাপ্তি ও দিক আমরা নিয়ে এসেছি। যেগুলো এখানেও অ্যাপ্লাই করেছি। যেমন ফাস্টবোলার শরিফুল সেদিন যেমন ও যে লাইন ও লেন্থে বল করেছিল, আজকেও ঠিক তাই করেছে। ঠিক সে ম্যাচের মতই একই জায়গায় বল করে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের বিপাকে ফেলেছে। কাজেই ওই দিনের ম্যাচ থেকে কিছু নিয়ে এসেছি। তবে মনে রাখতে হবে, এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন দিন। ভিন্ন ফরম্যাট। পরিবেশ-পরিস্থিতি সব আলাদা।’
ফাহিমের মূল্যায়ন, ‘সে দিনের ম্যাচের সাথে আজকের শুরুর মিল ছিল না। এছাড়া প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ডও আজ ছিল ভিন্ন দল। ভিন্ন মেজাজে। ফাহিমের মত, নিউজিল্যান্ড আজকে অনেক বেশি সাজানো গোছানো ছিল। তৈরি হয়ে নেমেছিল। কাজেই শান্ত বাহিনীর জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ ছিল। কিউইরা মোর ডিটারমাইন্ড ছিল। সামগ্রিকভাবে টিম বাংলাদেশের জন্য আরও বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।’
এ বড় ও শক্ত চ্যালেঞ্জ অতিক্রমের রহস্য কী? কোচ ফাহিমের ব্যাখ্যা, পুরো দলের মানসিকতায় পরিবর্তন এসেছে। মানসিকতার উত্তরণ ঘটেছে। এছাড়া ক্রিকেটারদের চিন্তাভাবনা পাল্টেছে।
‘সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে, আমাদের মানসিকতার কিছুটা হলেও উত্তরণ ঘটেছে, তাতে সন্দেহ নেই। ক্রিকেটারদের কেউই এখন আর শুধু ভালো খেলার মধ্যেই আটকে নেই। সবার চিন্তাভাবনা, ইচ্ছে, আকাঙ্খা আরও বিস্তৃত হয়েছে। এখন সবাই জিততে চায়। জেতার তীব্র বাসনা তৈরি হয়েছে। ‘ডেসপারেট হাঙ্গারটা’ ভেতরে এসেছে। আর সেটাই সবার ভালো খেলা বের করে নিয়ে আসছে। তারই ফলশ্রুতিতে এ জয়, এ সাফল্য’-যোগ করেন ফাহিম।
এআরবি/এমএমআর/এমএস