উসমান খাজাকে নিয়ে আইসিসির সিদ্ধান্তে বিস্মিত কামিন্সও

স্পোর্টস ডেস্ক
স্পোর্টস ডেস্ক স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:১২ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩

মানবতার পক্ষে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার উসমান খাজা। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি বর্বরতায় নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে হাজার হাজার শিশু। হাসপাতাল পর্যন্ত গুঁড়িয়ে দিচ্ছে বিমান হামলায়। খাবার নেই, পানি নেই, জীবন ধারনের জন্য ঔষধ পর্যন্ত নেই। এমন অন্যায়-অবিচার মানতে না পেরে, মানবতার বাণী লিখে মাঠে খেলতে নামতে চেয়েছিলেন উসমান খাজা।

কিন্তু এ বিষয়ে তার যে কোনো উদ্যোগকেই বাধাগ্রস্থ করতে সচেষ্ট হয়েছে আইসিসি। বার্তা লেখা জুতা পরতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো। পরে উসমান খাজা কালো আর্মব্যান্ড পরে মাঠে নেমেছিলেন। এখানেও আইসিসির বাধা। তারা খাজাকে অভিযুক্ত করেছে। জিজ্ঞাসাবাদও করেছে। খাজা জানিয়েছিলেন, এক নিকটাত্মীয় মারা যাওয়ায় কালো আর্মব্যান্ড পরেছিলেন।

তবুও আইসিসি বাধা দেয়ায় খাজা চেয়েছিলেন, শান্তির প্রতীক ‘ঘুঘু’র স্টিকার জুতায় লাগিয়ে মাঠে নামবেন। অনুশীলনে সেই ঘুঘুর ছবিও প্রদর্শন হয়েছে। পাশে লেখা ‘০১:ইউডিএইচআর।’ অর্থ্যাৎ, ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন অব হিউম্যান রাইটস- এর এক নম্বর ধারা। যেখানে বলা হয়েছে, প্রত্যেক মানুষই স্বাধীন এবং তার সমান সম্মান ও অধিকার রয়েছে।

এখানেও বাগড়া দিয়েছে আইসিসি। তারা আবারও বার্তা পাঠিয়ে দিয়েছে, ‘না, উসমান খাজা শান্তির প্রতীক ব্যবহার করেও খেলতে নামতে পারবে না।’

খাজার প্রতি আইসিসির এমন ব্যবহারে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে অনেকে। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররাও ক্ষিপ্ত। খোদ অধিনায়ক প্যাট কামিন্সও বিস্মিত হয়ে গেছেন, আইসিসির এমন ব্যবহারে।

usman khaja

অস্ট্রেলিয়া দলে আরও একজন ক্রিকেটার তার ব্যাটে ‘প্রতীক’ হিসেবে ঈগলের ছবি ব্যবহার করেন। তিনি মার্নাস লাবুশেন। নিজের ধর্মীয় বিশ্বাস থেকেই এই চিহ্ন ব্যবহার করে থাকেন লাবুশেন। অথচ, এই প্রতীক নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই কারো।

অধিনায়ক প্যাট কামিন্স মনে করেন, উসমান খাজার নিজের জুতা এবং ব্যাটে ‘কালো ঘুঘু’র ছবি ব্যবহার আর মার্নাস লাবুশেনের ব্যাটে ঈগলের ছবি ব্যবহারের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। অথচ, বক্সিং ডে টেস্টে খাজা নিজের ব্যাট এবং জুতায় কালো ঘুঘুর ছবি ব্যবহার করতে চাইলে সেখানে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আইসিসি। বিষয়টা সম্পূর্ণ দিমুখিতা।

অথচ, উসমান খাজাকে শান্তির এই প্রতীক ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলো ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) এবং অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন। কিন্তু আইসিসি বাধা দিয়ে বসে আছে।

আইসিসির এক মুখপাত্র জানিয়েছে, ‘খেলোয়াড়দের পোশাক এবং সরঞ্জামাদি সম্পর্কিত যে ক্লজ রয়েছে, সেখানে এ ধরনের ব্যক্তিগত বার্তা দেয়ার বিষয়েও নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়েছে। তবে, আইসিসি খেলোয়াড়দের এসব মানবতাবদী কর্মকান্ডে সমর্থক থাকবে, যেটা তাদেরকে করতে হবে খেলার বাইরে। খেলার এরিয়ার বাইরে তারা যদি মানবাধিকার, শান্তি এবং সমতার প্রচার, সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেয়, তাহলে আইসিসি সেখানে উৎসাহ প্রদান করবে। কিন্তু খেলাতে নয়।’

আইসিসি এখন এ কথা বলছে। অথচ, মার্নাস লাবুশেন দীর্ঘদিন থেকেই ব্যাটের পেছনে ঈগলের চিহ্ন ব্যবহার করে আসছে। যেটা বাইবেলের একটি বাক্যকে সমর্থন করছে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার প্রায় সব খেলোয়াড়ই, এমনকি উসমান খাজা পর্যন্ত নিজেদের ব্যাটে একাধিক বিজ্ঞাপনী স্টিকার ব্যবহার করছে। এসবই আবার আইসিসির নিয়মে অনুমোদিত। শুধু একটি শান্তির প্রতীক ঘুঘু’র ছবি ব্যবহার অনুমোদিত নয়।

বক্সিং ডে টেস্টে নিয়ে ক্রিসমাস ডে’র আগেরদিন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্যাট কামিন্স এ বিষয়ে দেখিয়ে দেন, মার্নাস লাবুশেন এবং উসমান খাজার সঙ্গে কেমন দ্বৈত আচরণ করা হচ্ছে। কামিন্স বলেন, ‘আমি সত্যিই জানি না, এর ভেতরে এবং বাইরে কী আছে। আমি শুধু জানি, এটা খুব সুন্দর একটি লতানো ঢালের ওপর একটি ঘুঘুর ছবি। আর কিছুই না।’

‘আমরা অবশ্যই উজিকে (উসমান খাজা) সমর্থন করি। আমি মনে করি, সে যা বিশ্বাস করে তার ওপর স্থির রয়েছে। এবং আমি এটাও জানি সে যা করছে, তা অবশ্যই সম্মান পাওয়ারযোগ্য।’

‘প্রত্যেক মানুষই স্বাধীন এবং সবারই সমান অধিকার রয়েছে- এই বার্তাকে তো আমি কোনোভাবেই আক্রমণাত্মক দেখি না। একই সঙ্গে ঘুঘুর ছবির বিষয়েই একই কথা বলবো। এটাই উজি (খাজা)। সে তার মাথা উঁচুতে রাখবেই। কিন্তু এখানে আইসিসি একটা নিয়মের কথা বলছে। আমার মনে হয়, আইসিসি সরাসরি বলতে পারছে না যে- তোমার (খাজার) জন্য এটা করা নিষেধ। তারা শুধু বলছে, আইন আছে এবং এটা মানতে হবে।’

আইসিসির এই নিয়ম-নীতি প্রদর্শন মানতে পারছেন না সাবেক ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক মাইকেল হোল্ডিংও। তিনি আইসিসির দ্বৈতনীতি কোনোভাবেই মানতে পারছেন না। তিনিও এর প্রতিবাদ করে বক্তব্য দিয়েছেন।

আইএইচএস/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।