ব্যাখ্যা দিলেন কোচ সোহেল

কেন বাংলাদেশের স্পিনারদের বলে টার্ন কম?

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৮:৪৫ পিএম, ২৯ নভেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশের স্পিনাররা সবসময়ই ঘরের মাঠে বিষাক্ত সাপ। যেন কাল কেউটি। সেই মোহাম্মদ রফিক, এনামুল জুনিয়র দিয়ে শুরু। তারপর আব্দুর রাজ্জাক, সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ আর তাইজুল ইসলাম ও নাইম হাসানরা দেশের ধীরগতির আর স্পিন ফ্রেন্ডলি পিচে হয়ে থাকেন প্রতিপক্ষর ‘ত্রাস।’

সেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রামে প্রথম টেস্ট জয় থেকে শুরু করে গত ২৩ বছরে দেশের মাটিতে টেস্টে টাইগারদের সাফল্যের মূল রূপকারই স্পিনাররা। অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মত ‘বাঘা’ দলেরও বাংলাদেশের স্পিনারদের কাছেই হার মানার রেকর্ড আছে।

তবে অমন আকাশছোঁয়া আর অবিস্মরণীয় সাফল্যের পরও বাংলাদেশের স্পিনারদের দুটি বড় অপবাদ আছে। বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশের স্পিনারদের ভালো করতে উইকেটের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। উইকেটের সহায়তা না থাকলে তারা ভালো করতে পারেন না। তাদের সাফল্যে ছেদ পড়ে।

এর পাশাপাশি বাংলাদেশের স্পিনারদের আরও একটি বড় সীমাবদ্ধতার কথাও ক্রিকেট মহলে চর্চিত। তাবৎ নামী ক্রিকেট পন্ডিত, বোদ্ধা-বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষক সবার মত, বাংলাদেশের স্পিনারদের বল কম ঘোরে।

ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তানের স্পিনাররা যেখানে সেখানে বল ঘোরাতে উস্তাদ। এমনকি অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা আর ইংলিশ স্পিনারদের বলও টার্ন করে। সে তুলনায় বাংলাদেশের স্পিনারদের বল ঘোরে কম। তারা ন্যাচারাল টার্নার নন। এককথায় টাইগার স্পিনারদের বল অত স্পিন করে না।

আজ বুধবার সিলেট টেস্টে বাংলাদেশের স্পিনারদের বোলিং নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ওই দুই বিষয় নিয়ে অনেক খোলামেলা আলাপ করেছেন দেশের প্রতিষ্ঠিত স্পিন কোচ সোহেল ইসলাম।

সোহেলের দাবি, এখন আর বাংলাদেশের স্পিনারদের আগের মতো সাফল্য পেতে শুধু উইকেটের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না। দিনকে দিন সেটা কমেছে। তিনি বলেন, ‘এখন উইকেটের সহায়তা কম থাকলেও আমাদের স্পিনাররা ভালো বল করতে পারছে। উইকেট পাচ্ছে। এমনকি দেশের বাইরে বিদেশে গিয়েও সাফল্য পাচ্ছে ভালো বল করে।’

কীভাবে সাফল্যের দেখা মিলছে? কোচ সোহেল ইসলামের মত, ‘আগে উইকেট স্পিন ফ্রেন্ডলি না হলে আমাদের স্পিনারদের একটু সমস্যা হতো। এখন আমাদের স্পিনাররা উইকেটে হেল্প না থাকলেও সাফল্য পাচ্ছে। কী করে সফল হতে হয়, তা শিখেছে।’

কী সেই কৌশল? সোহেলের ব্যাখ্যা, ‘উইকেটের হেল্প কম থাকলে ধৈর্য ধরে মাথা খাটিয়ে ভালো জায়গায় বল করতে হয়। এজন্য নিজেকে মানসিকভাবে তৈরি করতে হয়। আসল কথা হচ্ছে আমাদের স্পিনারদের সেই মাইন্ডসেট বদলেছে। তারা এখন মনের দিক থেকে নিজেদের তৈরি করতে পারছেন। আগে উইকেটে বল একটু কম ঘুরলে আমাদের স্পিনাররা খানিকটা এলোমেলো হয়ে যেতো। কিন্তু এখন তারা মনের দিক থেকে আগের চেয়ে অনেক তৈরি। লম্বা সময় ধরে এখন ভালো জায়গায় বল করতে পারে।’

কিন্তু বাংলাদেশের স্পিনাররা তো তেমন বল ঘোরাতে পারেন না। তাদের বলে টার্ন কম। বেশিরভাগ স্পিনার বিগ টার্নার নন। আপনি কি তা মানেন? আর মানলে সেটা কেন?

এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে সাবেক স্পিনার ও কুশলী প্রশিক্ষক সোহেল ইসলাম অনেক কথার ভিড়ে একটি কথার ওপরই জোর দিয়েছেন। তার মূল কথা হলো, দেশের মাটিতে ধীরগতির আর স্পিনসহায়ক পিচে বেশি খেলার কারণেই বাংলাদেশের স্পিনারদের বলে টার্ন কম।

সেটা কেমন? সোহেলের যুক্তি, ‘আমরা দেশে বেশিরভাগ সময় যে উইকেটে খেলি, তা এমনিতেই স্পিনবান্ধব। বল ঘোরাতে বোলারের হাত আঙুল আর কব্জির কারুকাজ লাগে না। আপনাআপনি বল ঘোরে। তাই স্পিনারদের হাতের, কব্জির টানে বল ঘোরানোর তাগিদ কম। উইকেটের চরিত্র পাল্টে ফেললেই স্পিনাররা অনুভব করবেন, আমাদের নিজের কারিশমায় বল ঘোরাতে হবে। উইকেটের সহায়তায় আর আপনাআপনি বল ঘুরবে না। আমাদেরই ঘোরাতে হবে।’

সোহেল যোগ করেন, ‘যদি স্পিন সহায় পিচ রাখেন, তাহলে স্পিনারদের বাড়তি টার্ন করানোর প্রয়োজন হয় না। আপনি যদি বাউন্সি ও একটু দ্রুতগতির পিচ তৈরি করেন, সেই কন্ডিশনে বেশি খেললে স্পিনারদের টার্ন করানোর অভ্যাস তৈরি হয়।’

‘আমাদের দেশে যেসব উইকেটে খেলা হয়, তার বেশিরভাগই ভীষণ স্লো, লো বাউন্স ও স্কিডি। স্কিড করলে উইকেট বেশি পাওয়া যায়। এটা আমাদের বোলারদের মাথায় ঢুকে গেছে। তারা জেনে গেছেন, টার্ন করাতে গেলে সাফল্য মিলবে কম। তার বদলে স্কিড করাতে পারলে উইকেট মিলবে বেশি।’

বাড়তি টার্নের জন্য কিছু টেকনিক্যাল ব্যাখ্যাও দিয়েছেন কোচ সোহেল, ‘টার্ন করানোর জন্য বল ধরার মানে গ্রিপের কৌশলটাই ভিন্ন। বাড়তি টার্ন করাতে গেলে সিম পজিশন রাখতে হয় একরকম আর স্কিড করাতে গেলে সিম পজিশন হয় অন্যরকম। আমাদের উইকেট হয় স্কিডি। সেখানে স্পিনারদের কাছ থেকে বড় বড় টার্ন চাইবো, তাতো আর হয় না। এটা হওয়ার নয়।’

‘আমাদের উইকেটে বল পড়লে উইকেটই সাহায্য করে। যখন উইকেটের সাহায্য থাকবে না, পিচের গতি ও চরিত্র পাল্টে যাবে, তখন স্পিনাররা বল ঘোরাতে বাড়তি এফোর্ট দেবে। টার্ন বাড়বে’-পরিষ্কার ব্যাখ্যা এই স্পিন কোচের।

এআরবি/এমএমআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।