কোয়ালিটি সব পেসারই আগুন ঝরাচ্ছেন, ব্যর্থ কেবল তাসকিন-মোস্তাফিজরা

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৬:৫২ পিএম, ০৩ নভেম্বর ২০২৩

ভারতের ব্যাটিং স্বর্গে প্রায় প্রতি ম্যাচেই রানবন্যায় ভাসছে মাঠ। বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বাধিক বাউন্ডারি, ছক্কা আর সেঞ্চুুরি হয়েছে এবার। দলগত স্কোরলাইনও আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

এই যখন অবস্থা, সেখানে পেসারদের আর কিইবা করার আছে? কেউ কেউ অমন কথা বলতে পারেন। তবে সেটা হবে খোড়া যুক্তি।

কারণ পরিসংখ্যান বলছে, ব্যাটাররা প্রায় খেলায় চার ও ছক্কার অনুপম প্রদর্শনীতে রানের নহর বইয়ে দিলেও বোলাররা শুধুই মার খাচ্ছেন, এমন নয়। বিশেষ করে প্রায় দলের পেসাররা বল হাতে ঠিক জ্বলে উঠেছেন।

লঙ্কান ফাস্টবোলার দিলশান মাদুশঙ্কা, পাকিস্তানের শাহিন শাহ আফ্রিদি, হারিস রউফ, দক্ষিণ আফ্রিকার মার্কো জানসেন, জেরাল্ড গোয়েটজি, কাগিসো রাবাদা, ভারতের জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ শামি, মোহাম্মদ সিরাজ, নিউজিল্যান্ডের ম্যাট হেনরি, ট্রেন্ট বোল্ট আর নেদারল্যান্ডসের তিন পেসার টিম ডি লিডি, পল ফন মিকেরেন ও লগান ফন বিকরা কিন্তু ঠিকই ভালো বল করছেন।

উইকেটের গতি, প্রকৃতি আর চরিত্র বুঝে জায়গামত বল ফেলার চেষ্টা করে সফল ওই সব পেসাররা। নতুন ও পুরোনো বলে যখন যে লাইন ও লেন্থে বল করা দরকার, তারা তা-ই করছেন। ভাইটাল ব্রেক থ্রু উপহার দিচ্ছেন নিয়মিত।

পেসাররা যে সমীহ জাগানো বোলিং করে সফল, তা এক ছোট্ট পরিসংখ্যানেই জানা যাবে। এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ৫ বার ইনিংস বা ম্যাচে ৫ উইকেট দখলের ঘটনা ঘটেছে। যার ৪ বার পেসাররাই ওই কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।

এর মধ্যে ভারতের পেসার মোহাম্মদ শামি একাই ২ বার, শ্রীলঙ্কার মাদুশঙ্কা আর পাকিস্তানের শাহিন আফ্রিদি একবার করে ৫ উইকেট পেয়েছেন। অপর ৫ উইকেট শিকারি বোলার নিউজিল্যান্ডের বাঁহাতি স্পিনার মিচেল স্যান্টনার।

সপ্তম রাউন্ড শেষে এ মুহূর্তে উইকেট শিকারে সবার ওপরে অবস্থান করছেন শ্রীলঙ্কার ফাস্টবোলার মাদুশঙ্কা। তার উইকেট সংখ্যা ১৮টি। এরপর তিনজন অস্ট্রেলিয়ার লেগস্পিনার অ্যাডাম জাম্পা, পাকিস্তানের পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি ও দক্ষিণ আফ্রিকার দ্রুতগতির বোলার মার্কো জানসেন। প্রত্যেকে ১৬ উইকেট করে পেয়ে যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে।

এরপর এককভাবে তৃতীয় স্থানে আছেন ভারতের পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ। তার ঝুলিতে জমা পড়েছে ৭ ম্যাচে ১৫ উইকেট। এরপর চতুর্থ স্থানটি তিন দেশের ৩ বোলার যৌথভাবে ভাগ করে নিয়েছেন। তারা হলেন ভারতীয় সুইং বোলার মোহাম্মদ শামি, দক্ষিণ আফ্রিকার জেরাল্ড কোয়েটজি আর কিউই স্পিনার মিচেল স্যান্টনার। তারা সবাই ১৪ উইকেট করে পেয়েছেন। তবে মোহাম্মদ শামি ১৪ ইকেট পেয়েছেন মাত্র ৩ ম্যাচে ।

এর পরে আছেন পাকিস্তানের আরেক ফাস্টবোলার হারিস রউফ (৭ ম্যাচে ১২ উইকেট)। তার ঠিক পিছনেই আছেন ৪ জন; প্রোটিয়া পেসার কাগিসো রাবাদা, স্পিনার কেশভ মহারাজ, কিউই পেসার ম্যাট হেনরি ও নেদারল্যান্ডসের টিম ডি লিডি। তাদের সবার উইকেট সংখ্যা ১১।

তাদের পেছনে ভারতের লেফটআর্ম চায়নাম্যান কুলদীপ যাদব, নিউজিল্যান্ডের পেসার ট্রেন্ট বোল্ট আর ডাচ পেসার পল ফন মিকেরেন। তারা তিনজনই ১০ উইকেট করে পেয়েছেন।

পেসারদের টপকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সর্বাধিক উইকেট শিকারি অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। বোলিং গড়ে মিরাজের স্থান ২০ নম্বরে হলেও ৭ ম্যাচে ৯ উইকেট পেয়ে ভারতের বাঁহাতি স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজা, নেদারল্যান্ডসের পেসার লগান ফন বিক ও ভারতের পেসার মোহাম্মদ সিরাজের সঙ্গে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে মিরাজ।

মিরাজের সেরা বোলিং ফিগার ৩/২৫। আর ওভার পিছু রান (৫.৪৬) দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে মিরাজ সবার ওপরে।

বোলিং গড়ে ৩০ নম্বরে নাম থাকলেও উইকেট শিকারে বাংলাদেশের বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম ৭ ম্যাচে ৮ উইকেট পেয়ে আছেন ৯ জনের সাথে যৌথভাবে ৯ নম্বরে।

ওপরের তথ্য-উপাত্ত আর পরিসংখ্যান জানিয়ে দিচ্ছে, প্রায় সব দলের পেসাররা নিজেদের মেলে ধরতে পারলেও বাংলাদেশের পেসাররা এখন পর্যন্ত অনেক পেছনে।

যে দলের ব্যাটারদের ব্যাটে রান নেই। শেষ মুহূর্তে দলে জায়গা পেয়ে আর ৬ থেকে ৮ নম্বরে নেমে ৫ বার ব্যাট করা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (একটি করে সেঞ্চুরি ও হাফসেঞ্চুরিসহ ২৭৪) দলের টপ স্কোরার। সেই দলের পেসারদের বলেও ধার নেই। আর তাই বাংলাদেশ তলানিতে ।

এআরবি/এমএমআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।