বাংলাদেশের স্বপ্নসারথি
সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হওয়ার সামর্থ্য আছে তাসকিনের
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে একটা সময় সবচেয়ে দ্রুতগতির বল করার রেকর্ডটা মাশরাফি বিন মর্তুজার দখলে ছিল। বর্তমানে এই কৃতিত্বের অধিকারী হচ্ছেন তাসকিন আহমেদ। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এক ম্যাচে ঘন্টায় ১৫০ কিলোমিটারের বেশি বেগে বল করেছিলেন তিনি। মাশরাফির দ্রুততম বলের গতি ছিল ঘন্টায় ১৪৮ কিলোমিটার। ২০০১ সালে হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ এই গতিতে বল করেছিলেন সাবেক এই পেসার।
তাসকিন আহমদে বলের দুরন্ত গতিটা পুরো ম্যাচে ভালোভাবে ধরে রাখার সামর্থ্য রাখেন। গড়ে ১৪০ কিলোমিটার বেগে বল করে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের দুঃশ্চিন্তা বাড়িয়ে দেন।
বলের গতিতে যে মাশরাফিকে হারিয়েছিলেন তাসকিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকে সেই মাশরাফির সঙ্গে একটা যোগসূত্র রয়েছে। ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে তাসকিনের খেলার কোনো সম্ভাবনা ছিল না। কিন্তু হঠাৎ মাশরাফির ইনজুরি তাসকিনের সামনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দরজা খুলে দেয়। অভিষেক ম্যাচেই গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
তাসকিনের ওয়ানডে অভিষেক ম্যাচ অবশ্য দারুণভাবে রঙিন। টি-টোয়েন্টিতে অভিষেকের কয়েকদিন পরই ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে খেলেন। অভিষেক ম্যাচেই ভারতকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন তিনি, নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। যা তাকে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায় স্থান করে দেয়। অভিষেকে ৫ উইকেট নেওয়া প্রথম বাংলাদেশি তিনি।
১৯৯৫ সালে ঢাকায় জম্ম নেওয়া তাসকিন আহমেদের ক্রিকেটের হাতেখড়ি ধানমন্ডির আবাহনী ক্রিকেট মাঠে। অনুর্ধ্ব-১৫ ও অনুর্ধ্ব-১৭ দলে নিজেকে প্রমাণ করে অনুর্ধ্ব-১৯ দলে সুযোগ পান। ২০১২ সালের অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। ১১ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হয়েছিলেন।
২০১৪ ঘরোয়া ক্রিকেটে নজরকাড়া পারফরম্যান্স করে ২০১৫ বিশ্বকাপ ক্রিকেট দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন। গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এক উইকেট নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হলেও স্কটল্যান্ডকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এ ম্যাচে তার শিকার সংখ্যা ছিল ৩, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই উইকেট পেয়েছিলেন। বাংলাদেশের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পথে তার এই পারফরম্যান্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিপক্ষেও তিন উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। এখানেও দলের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ছিলেন।
বিশ্বকাপে উইকেট শিকারের আনন্দ ভাগাভাগি করতে সতীর্থ মাশরাফির সঙ্গে চেস্ট-বাম্প করেন। যা ক্রিকেটকাউন্টি ডট কমে স্মরণীয় মুহুর্তের তালিকায় স্থান করে নেয়। মাশরাফি এবার দলে নেই, তবে আছেন মোস্তাফিজ, শরিফুলরা। উইকেট শিকারের আনন্দ তাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে প্রস্তুত তাসকিন, একই সঙ্গে প্রস্তুত তিনি সমর্থকদের আনন্দে ভাসাতে।
২০১৫ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করেছিলেন। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে দলে থাকতে পারেননি তিনি। এবার আছেন। বোলিং নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে এরই মধ্যে দলের অন্যতম স্ট্রাইক বোলারে পরিণত হয়েছেন। ভারত বিশ্বকাপে তাসকিনের সামর্থ্য আছে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হওয়ার। তা না পারলেও অন্তত বাংলাদেশের হয়ে সেরা উইকেট শিকারী হয়তো হতে পারবেন। তার গতিতে উড়ে যাবে প্রতিপক্ষ, এটাই দেখতে চায় সমর্থকরা।
আইএইচএস/