বাংলাদেশের স্বপ্নসারথি
বিতর্ক এড়িয়ে চার বছর আগের স্মৃতি ফেরাতে পারবেন সাকিব?
বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিব আর হাসান অবিচ্ছেদ্য এক অংশ। ক্যারিয়ারের প্রায় শেষ প্রান্তে এসে উপস্থিত হলেও দলে তার সরব উপস্থিতি। অলরাউন্ড পারফরম্যান্স তাকে দেশের তো বটেই, বিশ্ব ক্রিকেটে সেরা স্থানে ঠাঁই করে দিয়েছে। দক্ষতা দিয়ে অল রাউন্ডার র্যাংকিংয়ের শীর্ষস্থানটা যেন নিজের করে নিয়েছেন। বছরের পর বছর তিনি ধরে রেখেছেন এই স্থানটা।
সাকিব ছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট অসম্পূর্ণ এক অধ্যায়। বাংলাদেশের ক্রিকেটে কোথায় নেই সাকিব আল হাসান? টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি সব সংস্করণের ওপরের দিকে অবস্থান সাকিবের। সে ব্যাটিংয়ে হোক আর বোলিংয়ে!
বর্তমানে টেস্ট ব্যাটিংয়ে সাকিবের অবস্থান তিনে, একদিনের ক্রিকেটেও একই অবস্থা। তার আগে আছে তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবাইকে ছাড়িয়ে সবার ওপরে সাকিব আল হাসান।
আর বোলিংয়ে সাকিবের রয়েছে একচ্ছত্র আধিপত্য। টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি- যে ফরম্যাটই হোক না কেন সব ঘরানাতেই উইকেট শিকারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাকিব আল হাসান।
সাকিব ব্যাট হাতে উইকেটে দাঁড়ানো মানেই একটা সম্ভাবনা তৈরি হওয়া। সাফল্যের জন্য বাংলাদেশ তার ব্যাটের দিকেই সিংহভাগ সময় তাকিয়ে থাকে। আর বল হাতে তার দৌড় মানেই ব্যাটারের হৃদপিন্ডের স্পন্দন বেড়ে যাওয়া। এ কাজটা তিনি ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই দক্ষতার সঙ্গে করে আসছেন।
মাগুরায় জম্ম নেওয়া সাকিব ছোটবেলায় থেকে ক্রিকেটকে সঙ্গী করেছেন। সে সময় তার কাজই ছিল পাড়ায় পাড়ায় ক্রিকেট খেলে বেড়ানো। বর্তমান ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের মতো ভাড়াটে খেলোয়াড় হয়ে খেলতেন। এসব ম্যাচে বর্তমান সময়ের মতো স্পিন বোলিং করতেন না বরং একদিকে ফাস্ট বোলিং করতেন অন্যদিকে ছিলেন হার্ড হিটার ব্যাটার।
একবার কৌতুহলবশত স্পিন বোলিং করলেন; কিন্তু তা তেমন আশাব্যঞ্জক ছিল না। তবে সে অবস্থা থেকে সরে আসেননি। বরং ধীরে ধীরে তিনি পেসার থেকে পরিণত হয়েছে স্পিনারে। এরপর স্পিন বোলিংয়ে দেশ সেরা হয়েছেন, বিশ্বের সেরাদের তালিকায়ও স্থান করে নিয়েছেন।
বিশ্বকাপও সাকিব আল হাসানকে উদার হস্তে দিয়েছে সবকিছু। ব্যাটিং হোক আর বোলিং- ঠিকই নিজে জায়গা করে নিয়েছেন বিশ্বসেরাদের কাতারে। ২০১৯ বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রান সংগ্রহকারীদের তালিকায় সাকিব আল হাসান ছিলেন তিন নম্বরে।
৮ ম্যাচে ৬০৬ রান করেছিলেন। সবার ওপরে ছিলেন রোহিত শর্মা। ৯ ম্যাচে তার রান ছিল ৬৪৮, আর দ্বিতীয় স্থানে থাকা ডেভিড ওয়ার্নার ১০ ম্যাচে করেছিলেন ৬৪৭ রান। সাকিব তাদের সমান ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলে হয়তো তাদের ছাপিয়ে যেতে পারতেন। বল হাতে নিয়েছেন ১১ উইকেট। এক বিশ্বকাপে ৫০০’র বেশি রান এবং ১০টির বেশি উইকেট, ক্রিকেট বিশ্বে আর কারও নেই। সাকিব এ জায়গায় একেবারেই অনন্য।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীদের তালিকায় সাকিব রয়েছেন ৯ নম্বরে। আর ৭৯ রান করতে পারলে চলে আসবেন সেরা পাঁচে। তবে একটি ক্ষেত্রে এবার সবার চেয়ে এগিয়ে তিনি। এবারের বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া ব্যাটারদের মধ্যে সাকিবেরই রান সবার চেয়ে বেশি।
বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত ২৯ ম্যাচ খেলে ১১৪৬ রান করেছেন তিনি। তার চেয়ে এগিয়ে থাকা আট ব্যাটারের সবাই অবসরে। তার পেছনে রয়েছেন বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, স্টিভেন স্মিথ, কেন উইলিয়ামসন এবং বাবর আজমরা।
তবে বিশ্বকাপ শুরুর আগে দল গঠন এবং সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালকে নিয়ে যে বিতর্ককে সঙ্গী করে ভারত গেলেন সাকিব, তা যেন আবার বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সে প্রভাব না ফেলে- সে প্রত্যাশা সবার। ভক্তদের চাওয়া, চার বছর আগে ইংল্যান্ডে যে পারফরম্যান্স দেখিয়েছিলেন তিনি, তার চেয়েও যেন আরও বেশি সাফল্য তিনি উপহার দিতে পারেন বাংলাদেশকে।
আইএইচএস/