ইতিহাসের সেরা পেস বোলিং ইউনিট এখন আমাদের: রুবেল
জেমস অ্যান্ডারসন আর স্টুয়ার্ট ব্রডকে করা তার সেই দুটি ইয়র্কার এখনও চোখে ভাসে ক্রিকেটপ্রেমীদের। ২০১৫ বিশ্বকাপে অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে সেই দুটি এক্সপ্রেস ডেলিভারির পর একহাত উঁচিয়ে রুবেল হোসেনের উর্ধ্বশ্বাসে দেয়া সেই দৌড় কখনো ভোলার মত নয়। তার সেই দুটি ডেলিভারিই বাংলাদেশকে পৌঁছে দিয়েছিলো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে। যা এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবচেয়ে সেরা সাফল্য।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করা রুবেল হোসেন এখন আর জাতীয় দলে নেই। আনুষ্ঠানিক অবসর হয়তো নেননি। তবে, জাতীয় দলে যে ফিরতে পারবেন সে সম্ভাবনাও নেই। বাংলাদেশ দলে এখন পেস বোলিং ইউনিটে যারা রয়েছেন, তাদের সবাই রুবেলের উত্তরসূরি। ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে তাদের সঙ্গে।
নিজের সময়ের সঙ্গে বর্তমান সময়ের পেস বোলিং ইউনিটের তুলনা করতে গিয়ে অকপটে রুবেল স্বীকার করেছেন, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বকালের সেরা পেস বোলিং ইউনিট এখন বাংলাদেশের। যাদের প্রায় সবাই ১৪০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে বল করতে পারেন।
শুধু পেস বোলিংই নয়, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল কেমন হলো, ভারতের মাটিতে কেমন করতে পারে সাকিবের দল, কোন কোন জায়গায় ঘাটতি এবং দুর্বলতা রয়েছে, কোন কোন জায়গাতেই বাংলাদেশ শক্তিশালী- সব বিশ্লেষণই উঠে এসেছে রুবেল হোসেনের সাক্ষাৎকারে।
জাগোনিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো রুবেল হোসেনের সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ।
জাগো নিউজ: কেমন হলো টাইগারদের বিশ্বকাপ স্কোয়াড?
রুবেল হোসেন: আমার কাছে মনে হয় ভাল দলই গেছে বিশ্বকাপ খেলতে। এই টিমটা অনেক দিন খেলতেছে একসঙ্গে। রিয়াদ ভাই মাঝখানে কয়েক মাস খেলেননি। এটা তার নিজের দিক থেকে একটা ঘাটতি বা প্রস্তুতির স্বল্পতা। এছাড়া তানজিদ তামিমও নতুন। সবে দলে এসেছে। আর সবাই অনেক দিন, তথা অন্তত এক দুই বছর ধরে খেলছে। তারা দলের সাথে সেট হয়ে গেছে। আমার মনে হয়, এ দল ভাল হয়েছে। ভারসাম্যপূর্ণ দল। কম্বিনেশনটাও ভাল। ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং- তিন বিভাগই ঠিক আছে।
জাগো নিউজ: তামিম ইকবাল কি দলে থাকতে পারতেন না? তিনি তো দেশসেরা ওপেনার, তিনি দলে থাকলে কি ভাল হতো না?
রুবেল: আসলে আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না। কারণ, এটা টিম ম্যানেজমেন্টের ব্যাপার। তারা কি ভেবে তামিম ভাইকে বাইরে রেখেছেন বিশ্বকাপ দলে রাখেননি তা তারাই ভাল বলতে পারবেন।
জাগো নিউজ: তরুণ তানজিদ তামিমকে আপনি কিভাবে দেখেন? তার সম্পর্কে কিছু বলবেন?
রুবেল: তানজিদ তামিমকে আমি খুব ভালই জানি। হি ইজ ডেফিনেটলি ভাল ক্রিকেটার। আন্ডার নাইনটিনে বেশ ভাল পারফর্ম করেছে। প্লাস ঘরোয়া লিগেও ভাল করেছে। ব্যাটে রান ছিল। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল খেলার কারণেই তানজিদ তামিমকে নেয়া হয়েছে। আসলে ঘরোয়া ক্রিকেটে এক ভাল পারফরমারের নাম তানজিদ তামিম।
সে কিন্তু খুব পজিটিভ মাইন্ডেড ক্রিকেটার। আমি তাকে বিভন্ন সময় বল করেছি। অলটাইম পজিটিভ থাকে। অনুকুল, প্রতিকুল সব সময় মেন্টালি পজিটিভ চিন্তা করে। কিছু ব্যাটার থাকে আড়ষ্ট, একটু ডিফেন্সিভ। আবার কিছু ক্রিকেটার থাকে অলটাইম পজিটিভ, খারাপ বলটাকে মারবে আর ভাল বলকে সমীহ দেখাবে। তানজিদ তামিম ঠিক ওই ক্যাটাগরির ব্যাটার। আমার মনে হয় সে সুযোগ পেলে ভবিষ্যতে ভাল করতে পারবে।
জাগো নিউজ: সিনিয়র তামিমতো (তামিম ইকবাল) আপনার দীর্ঘদিনের সঙ্গী। একসাথে অনেক দিন খেলেছেন। খুব ভাল চেনেন। জানেন। তার সম্পর্কে কি কিছুই বলবেন না?
রুবেল: বলবো, অবশ্যই বলবো। তামিম ভাইতো অনেক বড় ক্রিকেটার। লং টাইম জাতীয় দলকে সার্ভিস দিয়েছেন। তার ব্যক্তিগত অর্জন, কৃতিত্ব অনেক। দেশের জন্য অবদানও রেখেছেন প্রচুর। তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। তিনি আমাদের অনেক স্মরণীয় জয় উপহার দিয়েছেন। জাতি তার সে অবদানকে ভালবাসা ও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। করবেও। তা নিয়ে কোনোই সন্দেহ নেই। তাকে মিস করবে দেশ। দল।
তবে বাস্তবতা মানতে হবে। তবে আমার মনে হয় টিম ম্যানেজমেন্ট যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা নিশ্চয়ই অনেক ভেবে-চিন্তে এবং নানা হিসেব নিকেশ কষে। কাজেই আমার মনে হয় শেষ পর্যন্ত যে দলটা গেছে বিশ্বকাপ খেলতে, সেটা ঠিকই আছে। বর্তমান সময় ও প্রেক্ষাপটের আলোকে সেটাই বেস্ট পসেবল টিম।
জাগো নিউজ: বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেই দলটার সম্ভাবনা কেমন দেখছেন?
রুবেল: যেহেতু ভারতের কন্ডিশন প্রায় আমাদের মতোই। আমার খেলার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি- শ্রীলঙ্কা, ভারত এবং আমাদের কন্ডিশন অলমোস্ট সেইম। ইন্ডিয়ার উইকেট অবশ্যই ব্যাটিং সহায়ক থাকে। আমি খুবই আত্মবিশ্বাসী, আমাদের যে দলটি গেছে, তারা যদি সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে পারফর্ম করতে পারে, দায়িত্ব ও কর্তব্যটা ঠিকমত পালন করতে সক্ষম হয় তাহলে ভাল ফল করার সম্ভাবনা যথেষ্ঠ।
তবে শুরুটা ভাল করা খুব জরুরি। যারা ওপেন করবে সেই লিটন, তানজিদ তামিম আর মিরাজের (যদি ওপেন করে) ভাল খেলার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। সাথে শান্তর ব্যাটে লম্বা ইনিংসও খুব জরুরি। লক্ষ্য করে দেখবেন, আমাদের শুরু ভাল হলে শেষটাও ভাল হয়। তাই বিশ্বকাপেও যদি শুরু ভাল হয় আশা করি শেষটাও ভাল হবে।
শুরু খারাপ হলে আমাদের স্কোর বড় সড় হয় না। তাই শুরু খুব ইম্পরটেন্ট। তবে মিডল অর্ডারটা আছে বেশ সাজানো গোছানো। সাকিব ভাই , মুশফিই আর রিয়াদ ভাই আছেন মিডল অর্ডারে। সাথে তরুণ তাওহিদ হদয় আর মিরাজ। মিরাজ খুব ভাল ফর্মে আছে। সব মিলে বেশ কমপ্যাক্ট মিডল অর্ডার। মাঠে সামর্থ্যের প্রয়োগ ঘটাতে পারলে আমাদের মিডল অর্ডার অনেক দুর এগিয়ে দিতে পারে।
জাগো নিউজ: আর বোলিং নিয়ে কিছু বলুন, আপনি নিজে যেহেতু পেস বোলার, পেস বোলিং নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। বাংলাদেশের পেস অ্যাটাক নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?
রুবেল: আমি আমাদের বোলিং, বিশেষ করে পেস বোলিং নিয়ে খুব পুলকিত, রোমাঞ্চিত। আশাবাদী। আমার মনে হয় বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা পেস বোলিং ইউনিট এখন আমাদের। এমন নয় আগে কখনও আমাদের কোয়ালিটি ফাস্ট বোলার ছিল না। ছিল।
তবে এখনকার মত ৫-৬ জনের একটা গ্রুপ ছিল না। এখন সবাই গড়পড়তা ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বল করতে পারে। দুরন্ত একঝাঁক তরুণে গড়া আমাদের ফাষ্টবোলিং ইউনিট। সবার কোয়ালিটি হাই। স্কিল আছে। গতি, বলে কারুকাজ ও বৈচিত্র আছে সবার। আমার খুব ভাল লাগে ওদের দেখে। আমি খুব গর্ববোধ করি। আমি আশা করি, বিশ্বাস রাখি তাদের সামর্থ্য আছে বড় মঞ্চে পারফর্ম করার। বিশ্বকাপে সফল হওয়ার।
জাগো নিউজ: মাশরাফি, আপনি নিজে, শাহাদাত রাজিব এবং মোস্তাফিজও তো ছিলেন। আপনারা কি পিছিয়ে ছিলেন?
রুবেল: নাহ, আমি কোন তুলনায় যেতে চাই না। আমরাও ভাল ছিলাম। মাশরাফি ভাইয়ের তো তুলনা মেলা ভার। তার জুড়ি নেই। তবুও, আমরা এখনকার মত গ্রুপ ছিলাম না। সবাই এত জোরে আর এমন ভাল বোলিং করতাম না।
জাগো: এই পেস বোলিং ইউনিট তৈরিতে ফাস্ট বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডের ভূমিকা কতটা?
রুবেল: ডোনাল্ডের ভূমিকা আছে। সে খুব আন্তরিক। তবে পেসাররাও খুব সিরিয়াস। মনোযোগী। আমার সাথে আমাদের ফাস্ট বোলিং গ্রুপের কয়েকজনের সাথে প্রায়ই কথা হয়। তারা আত্মপ্রত্যয়ী, বিশ্বকাপে দেশকে ভাল কিছু উপহার দিতে মরিয়া।
জাগো নিউজ: এই গ্রুপে আপনি কি এবাদতকে মিস করছেন?
রুবেল: হ্যাঁ, করছি। আমার মনে হয় এই কন্ডিশনে এবাদত মারাত্মক বোলার হতো। এবাদত অনেক ইম্প্রুভ বোলার। দারুন উন্নতি করেছে। অবিশ্বাস্য রকমের উন্নতি ঘটেছে তার বলে। এক জায়গায় অনবরত বল করতে পারে। লাইন লেন্থ খুব ভাল। ইয়র্কার ছোঁড়ায় এখন অনেক দক্ষ এবাদত। পেস ছিল বেশ। যে কোন সময় ব্রেক থ্রু এনে দিতে পারে। এখন যারা আছে তাসকিন, শরিফুল, হাসান মাহমুদ, মোস্তাফিজ এবং তানজিম হাসান সাকিব- কেউ এককভাবে না, সবাই ভালো।
জাগো নিউজ: আপনার দায়িত্বে থাকলে এই দল নিয়ে কতদুর যেতে পারতেন বলে বিশ্বাস?
রুবেল: আমিতো একদম শেষ পর্যন্ত যেতে চাই। আমিতো চাই আমর চ্যাম্পিয়ন হবো। তবে আমাদের লক্ষ্য থাকা উচিৎ সেমিফাইনাল। আমার আশা, আমার দেশ বাংলাদেশ বিশ্বকাপের প্রথম ৪ দলের মধ্যে থাকবে। আমার বিশ্বাস ও আস্থা, এ দলটির সামর্থ্য আছে। জায়গামত সে সামর্থ্যের প্রয়োগ ঘটালে আমরা অনেকদুর যেতে পারবো।
এআরবি/আইএইচএস