স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়ে গর্বিত রকিবুল হাসান
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ৭১’র সেই উত্তাল দিনগুলোয় লাখো বাঙালি তখন দেশ মাতৃকার স্বাধীনতা সংগ্রামে রত, তার প্রথম ভাগে কমনওয়েলথ একাদশের বিপক্ষে তখনকার পাকিস্তান একাদশের হয়ে খেলতে নেমে ব্যাটে ‘জয় বাংলা’ স্টিকার লাগিয়ে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন রকিবুল হাসান।
দেশের ক্রিকেটের সবসময়ের অন্যতম স্টাইলিশ ও পরিপাটি ব্যাটিংশৈলির অধিকারী সেই ক্রিকেটার স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়কও মনোনীত হন। এবার তার সাফল্যের ডানায় যুক্ত হলো এক হীরকখচিত পালক। ক্রীড়াঙ্গনে অসামান্য অবদানের জন্য সাবেক এই ক্রিকেটারকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’-এ ভূষিত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এক সরকারি প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্মরণীয় ও কার্যকর অবদানের স্বীকৃতি হিসেবেই এ স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়ে থাকে। তবে দীর্ঘদিন ক্রীড়াঙ্গনের কেউ এ পদক পাননি। দেড়যুগ আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড স্বাধীনতা পদক লাভ করেছিল। প্রায় ২২-২৩ বছর পর এবার মুক্তিযোদ্ধা ক্রিকেটার রকিবুল হাসান পেলেন এমন স্বীকৃতি।
এর আগে ইংলিশ চ্যানেল বিজয়ী ব্রজেন দাস, দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার দাবারু নিয়াজ মোর্শেদ, দেশের ফুটবল ইতিহাসের সবসময়ের নন্দিত ও জনপ্রিয় ফুটবলার কাজী সালাউদ্দিন, সাতারু মোশাররফ হোসেন, দূরপাল্লার দৌড়বিদ হাবিলদার মোশতাক প্রমুখ এ স্বাধীনতা পদক লাভ করেছেন।
এবার ওই সম্মাননায় নিজের নাম যুক্ত হতে দেখে উচ্ছ্বসিত রকিবুল হাসান। জাগো নিউজের সাথে আলাপে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে জাতীয় দলের এ সাবেক অধিনায়ক বলেন, ‘জীবনের যে কোনো অর্জন, কৃতিত্ব বা সাফল্যের স্বীকৃতি পেলে খুশি হয় মন। স্বীকৃতি পেলে একটা অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে।দেহমনে জাগে পুলক। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর মনোনয়ন ও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের স্বীকৃতি, এ চেয়ে ভালোলাগার খুশির আনন্দের আর কী হতে পারে? স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়ে আমিও উদ্বেলিত, আনন্দিত, গর্বিত।’
‘আমার মনে হয় আমার এ স্বাধীনতা পদক লাভ দেশের ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের অর্জন। আমি এ অর্জনকে আমার সময়ের ও বর্তমান সময়ের ক্রিকেটারদের মাঝে ভাগাভাগি করতে চাই’-যোগ করেন রকিবুল হাসান।
তার জীবনের সবচেয়ে বড় অহংকার, তিনি মুক্তিযোদ্ধা। রকিবুল বলেন, ‘আমি অনেক সৌভাগ্যবান যে এমন এক দিনে এই স্বাধীনতা পদকের ঘোষণা আসলো যেদিন আমাদের ক্রিকেট সেনানীরা বিশ্বসেরা ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে প্রথম হারালো। এটা আমার অর্জন ও প্রাপ্তিতে এনে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। আমার ভালোলাগাটাও অনেক বেড়ে গেছে।’
দেশের ক্রিকেট নিয়ে অনেক স্বপ্ন তার। একদিন বাংলাদেশ ক্রিকেটে বিশ্বসেরা হবে, সে স্বপ্ন দেখেন রকিবুল। একজন ক্রিকেটার হিসেবে তার প্রত্যাশা, দেশের ক্রিকেটের পথ চলা হোক আরও সুন্দর হোক।
রকিবুল হাসান বলেন, ‘আমি চাই আমাদের ক্রিকেটাররা নির্ভীক যোদ্ধার মত মাঠে বুক চিতিয়ে লড়াই করে সাফল্য বয়ে আনবে। আর যারা সংগঠক আছেন তাদের কাছে আমার চাওয়া- আসুন ক্রিকেটের কল্যাণ, মঙ্গল ও উত্তরনে ব্রত হই। নিঃস্বার্থভাবে দেশের ক্রিকেটের উন্নতিতে কাজ করি।’
রকিবুলের আরও একটি আশা আছে, ‘আমি আমার দেশকে দুর্নীতিমুক্ত দেখতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনেক ধন্যবাদ। সারা বিশ্বে কোভিডের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আমরা সে তুলনায় অনেক ভালো আছি। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা, দক্ষ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমাদের উন্নয়ন কার্যক্রম সচল আছে।’
এআরবি/এমএমআর/জিকেএস