বাংলাদেশ সফর নিয়ে ইংলিশ ক্রিকেটারদের ফের টালবাহানা
বাংলাদেশ সফর এলেই যেন নানা ধরনের অজুহাত পেয়ে বসে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের। অতীতে নিরাপত্তার অজুহাত তুলে বেশ কয়েকজন ইংলিশ ক্রিকেটার বাংলাদেশ সফর থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘটনা ঘটিয়েছেন।
এবার অবশ্য নিরাপত্তার কোনো অজুহাত নেই। তবে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ, ইনজুরি আর শিডিউল জটিলতার কারণে বেশ কয়েকজন ইংলিশ ক্রিকেটার বাংলাদেশ সফর থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন।
আগামী মার্চে বাংলাদেশের মাটিতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার কথা ইংল্যান্ডের। এই সিরিজটির শিডিউল ছিল ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে। সফরটি দেড় বছর পিছিয়ে যায় তখন।
তখন ডেইলি মেইল ও দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়রা যেন আইপিএলে খেলতে পারেন, সেই কারণেই স্থগিত করা হয়েছে বাংলাদেশ সফর। শুধু আইপিএলের জন্য জাতীয় দলের সফর স্থগিত?
হ্যাঁ, এমনটাই হয়েছিল। দেড় বছর পিছিয়ে আসার পরও শান্তি নেই, সেই সিরিজটিকে আবারও ধরেছে 'ফ্র্যাঞ্চাইজি-ভূত'। এবার ইংল্যান্ডের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) লোভনীয় প্রস্তাবের জন্য বাংলাদেশ সফরকে একপাশে ঠেলে দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম অ্যালেক্স হেলস।
হেলস তো এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি পিএসএলে খেলবেন। ক্রিকইনফোর প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, পিএসএলের জন্য বাংলাদেশ সফর থেকে সরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে স্যাম বিলিংস, লিয়াম ডসন এবং জেমস ভিন্সের মতো সাদা বলের ক্রিকেটে খেলা নিয়মিত তারকাদেরও।
পিএসএল শুরু হবে ১৩ ফেব্রুয়ারি, চলবে ১৯ মার্চ পর্যন্ত। বাংলাদেশের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের প্রথম ওয়ানডে ১ মার্চ। স্বাভাবিকভাবেই যারা পিএসএল খেলবেন, তারা বাংলাদেশে আসতে পারবেন না।
এদিকে নিউজিল্যান্ড সফরে টেস্ট খেলতে যাওয়া ইংলিশ ক্রিকেটাররাও বাংলাদেশ সফরে আসতে পারবেন না। শিডিউল অনুযায়ী, ওয়েলিংটনে দ্বিতীয় টেস্ট শেষ হওয়ার কথা ২৮ ফেব্রুয়ারি। সেখান থেকে বিমান ভ্রমণ করে অনুশীলন ছাড়াই বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে খেলতে নেমে যাওয়া সম্ভব নয়।
তাই টেস্ট দলের হ্যারি ব্রুক, বেন ডাকেট, ওলি স্টোন এবং জো রুট বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে থাকছেন না তা একপ্রকার নিশ্চিত। উইল জ্যাকসের এখনও ৫০ ওভারের ক্রিকেটে অভিষেক হয়নি, তার সুযোগ ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে ওপেন করার। কিন্তু টেস্ট দলে থাকায় জ্যাকসেরও বাংলাদেশে আসা হবে না। নিউজিল্যান্ড সফর শেষে তিনি পিএসএলে যাবেন।
এদিকে ইনজুরির কারণে বাংলাদেশে আসবেন না জনি বেয়ারস্টো আর লিয়াম লিভিংস্টোন। তবে পাকিস্তান সফরে টেস্ট সিরিজে বিশ্রামে থাকা পেসার মার্ক উড বাংলাদেশে খেলতে পারেন।
চলতি বছর ভারতের মাটিতে আছে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। বাংলাদেশের কন্ডিশন অনেকটা ভারতের মতোই। তাই এই সফরটাকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার কথা ছিল ইংলিশ ক্রিকেটারদের। কিন্তু তারা ছুটছেন টাকার পেছনে।
ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের জন্য এভাবে জাতীয় দলের কমিটমেন্ট ছেড়ে দেওয়া বড় এক দুশ্চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে বোর্ডগুলোর জন্য। তবে ক্রিকেটারদের জোর করে জাতীয় দলে খেলানোর চেষ্টা করেও তো আখেরে লাভ নেই। তাছাড়া হেলস, বিলিংস, ভিন্স এবং ডসনের মতো অনেক ক্রিকেটারের সঙ্গে বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তিও নেই। তাই তাদের জাতীয় দলে খেলতে বাধ্য করা প্রায় অসম্ভব।
সবমিলিয়ে বোর্ডগুলো এখন অনেকটাই কোণঠাসা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের কাছে। খেলোয়াড়রাও তাদের খেয়াল খুশিমত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, জাতীয় দলে কোন সিরিজ খেলবেন আর কোনটি খেলবেন না।
এমএমআর/জেআইএম