আবারও শ্বাসরুদ্ধকর জয়, ৭ বছর পর ভারতের বিপক্ষে সিরিজ বাংলাদেশের
ফিল্ডিং করার সময় আঙ্গুলে আঘাত পেয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন রোহিত শর্মা। ব্যান্ডেজ বেধে আবার মাঠে ফিরেও আসেন। হয়তো মাঠে নামার চিন্তাও ছিলো না। কিন্তু দলের যখন অবস্থা খারাপ, তখন ঝুঁকি নিয়ে মাঠে নামেন তিনি।
নেমেই ভারতের আশার পালে বাতাস দিতে শুরু করেন। এমনকি ৪৯তম ওভারে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ওভারে তিন বলের ব্যবধানে দু’বার জীবন পেয়ে যান তিনি। ভারতীয় অধিনায়কের ক্যাচ মিস করেন এবাদত হোসেন এবং এনামুল হক বিজয়। ওই এক ওভারেই ২০ রান নিয়ে নেন রোহিত।
জীবন পেয়েও শেষ পর্যন্ত দলকে জেতাতে পারলেন না। একেবারে তীরে এসে তরি ডুবেছে ভারতের। শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন দাঁড়ায় ২০ রান। ওভারের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বলে দুটি বাউন্ডারি মেরে বসেন রোহিত।
চতুর্থ বলটি ছিল ডট। পঞ্চম বলে আবারও ছক্কা মারেন রোহিত। জয় যেন তাদের হাতের নাগালে। শেষ বলে আর একটি ছক্কা মারলেই জয় ভারতের। কারণ, ১ বলে প্রয়োজন ৬ রানের। শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা; কিন্তু শেষ বলে মোস্তাফিজের বলে কোনো রানই নিতে পারেননি রোহিতরা। বাংলাদেশ জিতে গেলো ৫ রানে।
সে সঙ্গে ৭ বছর পর আবারও ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে ঘরের মাঠে প্রথম সিরিজ জিতেছিল টাইগাররা। এক ম্যাচ হাতে রেখেই এবার সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে লিটনের দল।
জয়ের জন্য ২৭২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে স্রেয়াশ আয়ারের ৮২ এবং অক্ষর প্যাটেলের ৫৬ রানের ওপর ভর করে ভারতীয়দের জয়ের লক্ষ্যে অনেকদূর এগিয়ে যায়। শেষ মুহূর্তে রোহিত শর্মা আশার বাতি জালালেও জয় সম্ভব হয়নি। বরং, ৫ রানে হেরে যেতে হয়েছে তাদের।
মেহেদী হাসান মিরাজের বীরত্বেই মূলত ভারতের বিপক্ষে এই সিরিজ জয়। প্রথম ম্যাচটিতে নিশ্চিত হেরে গিয়েছিলো বাংলাদেশ। এমন এক পরিস্থিতিতে ম্যাচ বের করে এনেছেন মিরাজ। শেষ উইকেটে ৫১ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে জয় এনে দেন তিনি।
আজ দ্বিতীয় ম্যাচে ৬৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল বাংলাদেশ। এ সময় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে গড়েন ১৪৮ রানের দুর্দান্ত এক জুটি। শুধু তাই নয়, নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটাও তুলে নেন মিরাজ। ২৭২ রানের লক্ষ্য পায় ভারত।
জবাব দিতে নেমে শুরু থেকেই ব্যাকফুটে ভারতীয়রা। বিরাট কোহলিকে বোল্ড করে দেন এবাদত হোসেন। ৬ বলে ৫ রান করেন তিনি। ১০ বলে ৮ রান করে আউট হয়ে যান শিখর ধাওয়ানও। মোস্তাফিজের বলে ধাওয়ানের ক্যাচ ধরেন মিরাজ। এরপর ৩৯ রানের মাথায় ওয়াশিংটন সুন্দর, ১৪ রানের মাথায় লোকেশ রাহুল আউট হয়ে যান। এর মধ্যে একটি উইকেট নেন মিরাজই।
৬৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে যখন ধুঁকছিল ভারতীয়রা, তখন হাল ধরেন স্রেয়াশ আয়ার এবং অক্ষর প্যাটেল। ১০৭ রানের অনবদ্য জুটি গড়ে তোলেন তারা। ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলেন ভারতের এই জুটি। ভাঙা প্রয়োজন। না হলে জয় তাদের হাতের মুঠোয় চলে যাবে।
এ সময় আবারও ত্রাতার ভূমিকায় মেহেদী হাসান মিরাজ। তার বলে ক্যাচ তুলে দিলেন স্রেয়াশ আয়ার। ডিপ মিডউইকেটে বাম পাশে কাত হয়ে অসাধারণ ক্যাচটি ধরেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। ১০২ বলে খেলা ৮২ রানের ইনিংসটি শেষ হেয় যায় ভারতের ১৭২ রানের মাথায়। এরপর অক্ষর প্যাটেলও আউট হন এবাদত হোসেনের বলে, সাকিব আল হাসানের হাতে ক্যাচ দিয়ে।
শার্দুল ঠাকুর ৭ রান করে এবং দিপক চাহার ১১ রান করে আউট হয়ে যান। এ সময় মাঠে নামেন রোহিত শর্মা। নেমেই ঝড় তোলেন। ২৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি তারই সাক্ষ্য দেয়। পুরো টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং করলেন। কিন্তু দলকে আর জেতাতে পারলেন না। মোহাম্মদ সিরাজ ১২ বল খেলে ২ রান করে আউট হয়ে যান।
এবাদত হোসেন ২টি, মেহেদী হাসান মিরাজ ২টি, সাকিব আল হাসান ২টি উইকেট নেন। ১টি করে উইকেট নেন মোস্তাফিজুর রহমান এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। এনামুল হক বিজয় (১১), লিটন দাস (৭), নাজমুল হোসেন শান্ত (২১), সাকিব আল হাসান (৮) এবং মুশফিকুর রহিম আউট হয়ে যান দ্রুত। ৬৯ রানে ৬ উইকেট পড়লে হাল ধরেন মিরাজ এবং মাহমুদউল্লাহ।
আইএইচএস/