সত্যিই এটাই টাইগারদের সেরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ?
বলা হচ্ছে এটাই নাকি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সেরা বিশ্বকাপ। সবার আগে টেকনিক্যাল এডভাইজার শ্রীধরন শ্রীরাম দাবি করেন, এটাই বাংলাদেশের সেরা বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স। এরপর অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলছেন, ‘টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এটাই আমাদের সেরা পারফরমেন্স।’
এবারের অর্জন, প্রাপ্তিকে বড় করে দেখাতে গিয়ে টাইগার অধিনায়ক সাকিবের ব্যাখ্যা, ‘আমরা আগে কখনো একটির বেশি ম্যাচ জিতিনি। তাও সেটা ১৫ বছর আগে, ২০০৭ সালে। সেখানে এবার দুটি ম্যাচ জিতেছি। তাই জয়কে মানদন্ড ধরলে এটাই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আমাদের সেরা সাফল্য।’
যদিও ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের আলোকে পারফরম্যান্স খুব একটা আহামরি নয়। পুরো আসরে ৫ ম্যাচে টাইগার ব্যাটারদের ব্যাট থেকে পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস এসেছে মোটে তিনটি। যার দুটি করেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। অন্যটি করেছেন লিটন দাস। ৪ উইকেট পেয়েছেন একমাত্র তাসকিন। তবে দ্রুত গতির বোলার তাসকিন নেদারল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ সেরা পারফরমার।
দলগতভাবে সেই ২০০৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জোহানেসবার্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৬ উইকেটের অবিস্মরণীয় জয়। সেটাই প্রথম এবং শেষ। এরপর মূল পর্বে আর কোনো ম্যাচ জেতেনি বাংলাদেশ।
সেখানে এবার দু’দুটি জয়! যদিও সামগ্রিক বিচার-বিবেচনায় সত্যিই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টাইগারদের সেরা পারফরম্যান্স হলো এবার। সেখানে এবার মূল পর্বে জিম্বাবুয়ে (৩ রানে) আর নেদারল্যান্ডসের (৯ রানে) বিপক্ষে জিতেছে সাকিবের দল। সেটাই শেষ নয়। ভারত ও পাকিস্তানের মত সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষেও এবার প্রায় সমানতালে লড়ে জয়ের জোর সম্ভাবনা জাগিয়েছিল টাইগাররা।
২ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে এক কথায় জেতা ম্যাচ হেরেছে সাকিবের দল। রোহিত শর্মার দলের সাথে ৫ রানে আর বাবর আজমের পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫ উইকেটে হারলেও জয়ের যথেষ্ঠ সম্ভাবনা ছিল টাইগারদের।
তবে এমন নয় যে, আগে কখনো ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে ভাল খেলেনি বাংলাদেশ। খেলেছে। ইতিহাস সাক্ষী দিচ্ছে, এর আগেও সাবেক দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত ও পাকিস্তানের ভিত কাঁপিয়ে দেয়ার রেকর্ড ছিল বাংলাদেশের।
২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৬ উইকেটে জয়ের পর পাকিস্তানের সঙ্গেও প্রায় সমানতালে লড়াই করে ৪ উইকেটে হারে আশরাফুলের দল। জুনায়েদ সিদ্দিকীর ঝড়ো উইলোবাজিতে (৪৯ বলে ৭১) ১৪০ রানের মাঝারি পুঁজি পায় টাইগাররা। তাই নিয়ে প্রাণপন লড়াই করে ১৯ ওভার পর্যন্ত খেলা টেনে নিয়ে যায় বাংলাদেশ।
তবে একটি ম্যাচ না জিতলেও এরপর ২০১৬ বিশ্বকাপে ভারতের মাটিতে অন্তত দু’বার জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথমে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে। পরে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে। দুটি ম্যাচই হয়েছিল ব্যাঙ্গালুরুতে।
২০১৬ সালের ২১ মার্চ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে (২৯ বলে ৪৯ নটআউট) আর সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্স (২৫ বলে ৩৩ ও ৪ ওভারে ২৭ রানে ৩ উইকেট) এবং কাটার মাস্টার মোস্তাফিজের (৪ ওভারে ২/৩০) মাপা বোলিং ওসমান খাজা, শেন ওয়াটসন, স্টিভেন স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার, ম্যাক্সওয়েল, মিচেল মার্শ ও অ্যাডাম জাম্পাদের নিয়ে গড়া শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়াকে কঠিন চাপে ফেলে দিয়েছিল মাশরাফির বাংলাদেশ।
কিন্তু ১৫৬ রানের পুঁজি নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। অসিরা ৩ উইকেট হাতে রেখে ৯ বল আগে লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। ঠিক ২ দিন পরে ২৩ মার্চ ব্যাঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারতকে প্রায় হারিয়েই দিয়েছিল বাংলাদেশ।
ভারতকে ১৪৬ রানে আটকে রেখে জয়ের হাত মেলানো দুরত্বে পৌঁছে গিয়েও পারেনি টাইগাররা। ভারতীয পেসার হার্দিক পান্ডিয়ার করা ম্যাচের শেষ ওভারে জিততে দরকার ছিল ১১ রান। মুশফিক দুটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে হিসেব সহজ করেও শেষ রক্ষায় ব্যর্থ হন। চতুর্থ বলে মুশফিকুর রহিমের হাঁকানো বাউন্ডারিতে শেষ ৩ বলে ২ রান দরকার থাকা অবস্থায়ও জেতা সম্ভব হয়নি। পঞ্চম বলে মুশফিক, ষষ্ঠ বলে রিয়াদ আর শেষ বলে মোস্তাফিজ কোনো রান না করে আউট হলে বাংলাদেশ হেরে যায় মাত্র ১ রানে।
৬ বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মত ভারতকে বাগে পেয়েও হারানো যায়নি এবার। তারপর পাকিস্তানের সঙ্গেও ১২৭ রানের অতি সাধারণ পুঁজি নিয়ে জোর লড়াই করেছেন বোলাররা। এ সামান্য কটা রান করতেও নাভিশ্বাস উঠেছে পাকিস্তানিদের।
আর গোটা বিশেক রান করতে পারলে ৬ নভেম্বর পাকিস্তানকে হারানো যেত। আর তাতে করে প্রথমবার সেমিফাইনালও খেলাও হয়ে যেত। সে সুযোগ হেলায় হাতছাড়া হয়েছে। তারপরও ডাচ ও জিম্বাবুইয়ানদের বিপক্ষে জয় এবং ভারত ও পাকিস্তানের সাথে জেতার খুব কাছাকাছি চলে যাওয়া ভাল খেলার দলিল অবশ্যই। সে আলোকে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বিশ্বকাপে এটাই বাংলাদেশের সফলতম ও সেরা বিশ্বকাপ।
এআরবি/আইএইচএস/