জাদেজাকে চারে পাঠিয়েই পাকিস্তানের পরিকল্পনা ওলট-পালট করে দেয় ভারত
হার্দিক পান্ডিয়ার বীরোচিত কৃতিত্বে এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই চির প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে ভারত। দুবাইতে অনুষ্ঠিত ম্যাচটা ছিল মাঝারি স্কোরের। তাতেই তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতা হলো। ১৪৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে একেবারে শেষ ওভারে গিয়ে ম্যাচটির সমাপ্তি হলো।
তবে হার্দিক পান্ডিয়ার বীরোচিত কৃতিত্বছাড়াও এই ম্যাচে ভারতের জয়ে আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। এই দুটি বিষয় না ঘটলে হয়তো পাকিস্তানের ১৪৮ রানও পাড়ি দিতে সক্ষম হতো না ভারত।
এই দুটি বিষয়ের প্রথমটি হচ্ছে, ভুবনেশ্বর কুমারের ইকনোমিক্যাল বোলিং। প্রথম থেকেই তার নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে পাকিস্তান যেমন উইকেট হারিয়েছে, তেমনি রানের চাকাও তাদের অনেকটা থমকে গিয়েছিল। সে সঙ্গে শুরুতেই পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজমের উইকেট হারানো ভারতের জয়ের জন্য বড় একটি পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করেছে।
দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, রবিন্দ্র জাদেজাকে চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে পাঠানো। জাদেজা সাধারণত ব্যাট করেন ৬ কিংবা ৭ নম্বরে। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে তাকে ব্যাটিংয়ে নামানো হলো চার নম্বরে। এটা ছিল ভারতের বড় একটি বাজি। জাদেজার চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে আসার ফলে পাকিস্তানের পরিকল্পনা পুরোপুরি হোঁচট খায়। তাদেরকে বিকল্প পরিকল্পনা সাজাতে হয় এবং যে বিষয়টা তাদেরকেই শেষ পর্যন্ত ভূগিয়েছে।
ভুবনেশ্বর কুমারের বীরত্ব প্রথমেই ভারতকে এগিয়ে দিয়েছিল। এরপর এলো জাদেজার অংশ। ভারতীয় টপ অর্ডারে একমাত্র বাঁ-হাতি ব্যাটার ছিলেন রিশাভ পান্ত। কিন্তু ফিনিশার হিসেবে দিনেশ কার্তিককে জায়গা করে দিতে রিশাভ পান্তকে বাদ দিতে হয়। যার ফলে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের প্রথম ৫জন কিংবা প্রথম ৬জনেই হয়ে গেলেন ডান-হাতি। বাঁ-হাতি ব্যাটার নেই টপ অর্ডার এবং মিডল অর্ডারে।
ভারতের একাদশ দেখেই এক ধরনের পরিকল্পনা সাজিয়ে ফেলেছিল পাকিস্তান এবং সে অনুসারে শুরুও করেছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই চার নম্বরে রবিন্দ্র জাদেজাকে যখন ভারত ব্যাট করতে নামিয়ে দেয়, তখন ওলট-পালট হয়ে যায় পাকিস্তানের সব পরিকল্পনা।
অষ্টম ওভারের শেষ বলে রোহিত শর্মা আউট হতেই মাঠে নামেন জাদেজা। এরপর প্রায় শেষ ওভার পর্যন্ত তিনি ব্যাট করে যান। ২৯ বলে করেন ৩৫ রান। চতুর্থ উইকেটে সূর্যকুমার যাদবের সঙ্গে ৩৬ এবং পঞ্চম উইকেট জুটিতে হার্দিক পান্ডিয়ার সঙ্গে গড়েন ৫২ রানের জুটি।
ইএসপিএন ক্রিকইনফোর টি-টোয়েন্টি টাইমআউট অনুষ্ঠানে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে কথা বলেন কোচ মিকি আর্থার। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে এই ম্যাচের সবচেয়ে টার্নিং পয়েন্টটা হচ্ছে, মিডল অর্ডারেই ভারত একজন বাঁ-হাতিকে ব্যাট করতে পাঠিয়ে দেয়। এর অর্থ হচ্ছে পাকিস্তান মোহাম্মদ নওয়াজকে এই সময় বোলিংয়েই আনতে পারেনি পাকিস্তান। ব্যাকএন্ডে মোহাম্মদ নওয়াজকে ধরে রাখতে হয় তাদের। এ বিষয়টাই সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ হয়েছে পাকিস্তানের জন্য।’
ম্যাচের পর বিসিসিআই টিভিতে কথোপকথনে অংশ নেন হার্দিক পান্ডিয়া এবং রবিন্দ্র জাদেজা। সেখানে পান্ডিয়াকে জাদেজা বলেন, ‘যখন আমি ব্যাটিংয়ে এগিয়ে আসলাম, তখন ভাবলাম- আমাকে যে করেই হোক স্পিনারদের কাছ থেকে রান বের করে নিতে হবে। এই সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে। প্রতিটি সুযোগেই তাদেরকে আক্রমণ করতে হবে। আমাদের জুটিটাও ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মিডল অর্ডারে নিজেদের মধ্যে কথা বলেছি এবং শট খেলার চেষ্টা করেছি। এটাই ছিল ম্যাচের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
নওয়াজ ফ্যাক্টরও ছিল গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পাকিস্তানের বোলিং কম্বিনেশন তৈরি করা হয়েছিল তিন ডানহাতি পেসার, একজন লেগ স্পিনার এবং একজন বাঁ-হাতি স্পিনারের সমন্বয়ে। বাঁ-হাতি স্পিনারই হলেন মোহাম্মদ নওয়াজ। তিনি বোলিংও করেছেন ভালো। ৩.৩ ওভার বল করে নিয়েছেন ৩ উইকেট।
দলের অষ্টম ওভারে নিজের প্রথম ওভার বল করতে আসেন নওয়াজ এবং এসেই রোহিতকে ফিরিয়ে দেন তিনি। দশম ওভারে বল করতে এসে তিনি তুলে নেন বিরাট কোহলিকে। এরপর ১২তম ওভারেও বল করেন নওয়াজ। কিন্তু বাঁ-হাতি জাদেজার উপস্থিতির কারণে এই ওভারে আর তেমন কিছু করতে পারেননি তিনি। এমনকি ডান হাতি-বাঁ হাতি কম্বিনেশনের কারণে একেবারে শেষ ওভারে বোলিংয়ে আনা হয় নওয়াজকে। এই ওভারেই তিনি তুলে নেন জাদেজার উইকেট।
মিকি আর্থার যে অনুষ্ঠানে কথা বলেছিলেন, সে অনুষ্ঠানে কথা বলেন রবিন উথাপ্পাও। তিনি বলেন, ‘কেউ বিষয়টা খেয়ালই করেনি যে, রবিন্দ্র জাদেজাকে চার নম্বরে নামানো হয়েছে। আমার মনে এটা খুব বড় একটি বিষয় ছিল। এটা এমন বিষয় ছিল, যেটা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। আমার মতে এটা ছিল গুড কল, গুড মোভ। আমি খুবই খুশি হয়েছি টিম ইন্ডিয়া ম্যানেজমেন্টের এই সিদ্ধান্তে।’
‘পাকিস্তানের দিক থেকে বলতে গেলে, আমার মনে হয় তাদেরকে আরও আগে বাঁ-হাতি স্পিনারকে দিয়ে বোলিং করাপো উচিৎ ছিল। প্রথম ৬ ওভারের মধ্যেই। কারণ, তখন ডানহাতি ব্যাটারই ছিল উইকেটে। ওটাই ছিল সঠিক সময়। বাবর আজমের জন্য সবচেয়ে রক্ষনশীল বিষয় ছিল, পাওয়ার প্লে’র পরপরেই স্পিনারদের আক্রমণে নিয়ে আসা; কিন্তু ভারতের পরিকল্পনা পরিবর্তন এবং জাদেজাকে চার নম্বরে নামিয়ে দেয়ার কারণে পাকিস্তানের পরিকল্পনা আর কাজ করেনি।’
আইএইচএস/